বঙ্গবন্ধুর স্বীকৃতি পেলেও জটিল রাজনীতির সমীকরণের ফাঁদে এখনো শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পায়নি

যতীন্দ্র মোহন দে

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ

কালাম  আজাদ : 
বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের সংগ্রাম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ যতীন্দ্র মোহন দে। চকরিয়া উপজেলার দিগরপানখালী এলাকার ধৈয্য মহাজন দে এবং মৃত মঞ্জুরী রাণী দে এর সন্তান তিনি। নিম্মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে বাবার ব্যবসায় সহযোগিতা করেছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ৩৭ বছর বয়সী একজন যুবক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান বাহিনীর সদস্যরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। চালায় নগ্ন হামলা। এ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ডাকে শুরু হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। স্বাধীনতার ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। দেশকে মুক্ত করার অভিপ্রায় নিয়ে ১০০ জনের অধিক সঙ্গী নিয়ে অংশ নেন কালুরঘাট যুদ্ধে। কালুরঘাটস্থ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র দখল নেয়ার কালুরঘাটের দিকে আসতে থাকে পাক হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার ৫দিন পর অর্থাৎ ৩০ মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট যুদ্ধে পাক হানাদার গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন।যতীন্দ্র মোহন দে দেশের আত্মোসর্গ করায় ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান তার স্ত্রী আভারাণী দে এর কাছে একটি সম্মতি পত্র এবং দুই হাজার টাকার একটি চেক পাঠান। যার চেক নং-প্রনাক-৬/৪/৭২ সিভি ১৫৬ তারিখ: ১৪/০১/১৯৭৩ইং মূলে চেক  সিএ ০২৭৯৬৫।

যাতে লেখা ছিল: ‘ প্রিয় ভাই/ বোনআমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য স্বামী আত্মোসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দু:খের সাথে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি রইল আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নি:স্বার্থ মহান দেশপ্রেমিকের স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যিই আপনি ধন্য হয়েছেন।প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যাণ তহবিল থেকে আপনার তহবিল থেকে আপনার পরিবারের সাহাযার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের নিকট ২০০০/- টাকার  চেক প্রেরিত হল।আমার প্রাণভরা ভালাবাসা ও শুভেচ্ছা নিন।শেখ মুজিবএ ছাড়া শহীদ হওয়ার পর থেকে উপজেলা প্রশাসনের সামান্য সম্মান ছাড়া কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়নি বলে তার কন্যা বেবী প্রভা দে জানান। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় তার নাম অন্তভ’ক্তি করা হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধে  পর শহীদ যতীন্দ্র মোহন দে এর পরিবার প্রথমে গোলদিঘির পাড়ে ছিলেন এবং পরবর্তীতৈ তারা মায়ের বাড়ি উখিয়ার দারোগা বাজারস্থ নানার বাড়িতে থাকছেন।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বেবী প্রভা দে এর সাথে কথা হলে তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আমার বাবা শহীদ হলো আমরা কী পেলাম। আমার সন্তানরা কী করবে। একাত্তরে আমাদের বাড়ি পুড়িয়ে দিলো অথচ আমরা কিছু পায়নি বঙ্গবন্ধুর সেই চিঠিটা ছাড়া। আমার একমাত্র দাবি- ‘শহীদ স্বামীর স্কীকৃতি না পেয়ে আমার মা আভা রাণী দে হাসপাতালে মারা যান। আমার দেখে যেতে পারিনি বাবার স্মৃতি। আমার একমাত্র দাবি আমার বাবা যতীন্দ্র মোহন দে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা গেজেটে দেখে মরতে চাই। বয়স প্রায় শেষ। মনে হয় দেখে যেতে পারবো না?


শেয়ার করুন