মেসেজটি পড়ুন

Mahfoozulমাহ্ফুজুল হক :

একজন বাবা। সন্তানের পরম গুরুজন, ভরসার কেন্দ্র, নিরাপদ আশ্রয়স্থল। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কর্মব্যাপদেশে দূর দেশে অবস্থান করছেন। সেখানে থেকেও সন্তান-সন্ততি তথা পরিবারের ভরণ- পোষণ করছেন। লেখাপড়া, চিকিৎসা, বিয়ে-শাদি ইত্যাদি যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করছেন। তিনি প্রায় সময় তাদের খোঁজ-খবর রাখেন। প্রয়োজনীয় পরামর্শ, উপদেশ দেন। আর সাধারনতঃ তিনি তা দেন মেসেজ আকারে মেইল করে এবং সংশ্লিষ্ট ডিভাইসে তা সংরক্ষিত থাকে। তাঁর এখন বয়স হয়েছে। সন্তানাদিও মোটামুটি কর্মক্ষম হয়েছে, বুঝ-জ্ঞান সম্পন্ন হয়েছে। জীবনের পরিণত বয়সে তিনি অনুভব করলেন তাঁর সন্তানাদি এখন স্বাধীনভাবে পথ চলার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে। তাদের চলার পথের পাথেয় হিসেবে, অনাগত দিনের পথ চলার প্রতিটি চড়াই উৎরাই সফলভাবে উত্তরণে তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নছিহত, উপদেশ, পরামর্শ দেয়ার সময় এসেছে। তিনি লিখলেন এক দীর্ঘ চিঠি এবং তা পাঠালেন মেসেজ আকারে ই-মেইল মারফত।
মেসেজে কী বার্তা আছে তা জানার আগে সন্তানদের উদ্দেশ্যে এজাতীয় নছিহতপূর্ণ সুপ্রসিদ্ধ চিঠি বা মেসেজ দিয়ে বা লিখে যাঁরা ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন তাঁদের কয়েকজনের দু’চারটি মেসেজ এর দিকে নজর বুলানো যাক। তন্মধ্যে সুপ্রসিদ্ধ একজন হলেন মহাত্ন লোকমান (হাকিম)। তিনি ছিলেন এক কৃষ্ণকায় আবিসিনীয় ক্রীতদাস। তাঁর বিষয়ে একটি কথা সুপ্রসিদ্ধ। একদিন মহাত্ন লোকমান এক বিরাট সমাবেশে উপস্থিত জনমন্ডলীকে বহু জ্ঞানগর্ভ কথা শোনাচ্ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কি সেই ব্যক্তি যে আমার সাথে অমুক বনে ছাগল চরাতো ? লোকমান বলেন, হ্যাঁ-আমিই সে লোক। অতঃপর লোকটি বললো, তবে আপনি এ মর্যাদা কীভাবে লাভ করলেন যে, খোদার গোটা সৃষ্টিকূল আপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এবং আপনার বাণী শোনার জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে এসে জমায়েত হয় ? উত্তরে লোকমান বললেন, এর কারণ আমার দু’টি কাজ-(এক) সদা সত্য কথা বলা, (দুই) অপ্রয়োজনীয় কথা-বার্তা পরিহার করা। স্মর্তব্য, মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁকে নবুওয়াত ও হেকমাত (প্রজ্ঞা)-দু’য়ের মধ্যে যেকোন একটি গ্রহনের সুযোগ দেন। তিনি হেকমাতই গ্রহন করেন। কারন জিজ্ঞেস করা হলে জবাবে তিনি বলেন, নবুওয়াত বিশেষ দায়িত্বপূর্ণ পদ। যদি তা আমার ইচ্ছা ব্যতীত প্রদান করা হতো, তবে স্বয়ং মহান আল্লাহ্ তার দায়িত্ব গ্রহন করতেন ; যাতে আমি সেই কর্তব্যসমূহ পালন করতে সক্ষম হই। কিন্তু যদি আমি তা স্বেচ্ছায় চেয়ে নিতাম, তবে সে দায়িত্ব আমার উপর বর্তাতো।
তিনি তাঁর পুত্রকে উপদেশ দিলেন, হে বৎস, আল্লাহ্’র সাথে শরীক করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্’র সাথে শরীক করা মহা অন্যায় (জুল্মুন আজীম)। পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর। তবে এক্ষেত্রেও তাঁরা যদি আল্লাহ্’র সাথে শরীক করতে পীড়াপীড়ি করেন তাহলে তাঁদের কথা মানবে না এবং দুনিয়াতে তাঁদের সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান করবে। তিনি আরো বলেন, হে বৎস, কোন বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় আর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে কিংবা আকাশে অথবা ভূ-গর্ভে, আল্লাহ্ তাও উপস্থিত করবেন ; নিশ্চয় আল্লাহ্ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন। হে বৎস, নামায কায়েম কর, সৎ কাজে আদেশ দাও, অসৎ কাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর। নিশ্চয় এটা সাহসিকতার কাজ। অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। আর চলার ক্ষেত্রে মধ্যপন্থা অবলম্বন কর এবং কন্ঠস্বর নীচু কর। নিঃসন্দেহে গাধার আওয়াজই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট।
এক সুপ্রসিদ্ধ জ্ঞানবান ব্যক্তি তাঁর চাইতেও জ্ঞানী জনৈক ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়ে তাঁর নিকট থাকা বিশেষ জ্ঞান হাসিল করার আর্জি জানালেন। জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। তিনি আরো বললেন, আমাকে আল্লাহ্ তায়ালা এমন এক জ্ঞান দান করেছেন, যা আপনার কাছে নেই ; পক্ষান্তরে আপনাকে এমন জ্ঞান দিয়েছেন, যা আমি জানি না। আগন্তুক বললেন : ইনশাআল্লাহ্, আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন। জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন : যদি আমার সাথে থাকতেই চান, তবে কোন বিষয়ে আমাকে প্রশ্ন করবেন না, যে পর্যন্ত না আমি নিজে তার স্বরূপ বলে দেই। অতঃপর উভয়ে সমুদ্রের পাড় ধরে পথ চলতে শুরু করলেন। ঘটনাক্রমে একটি নৌকা এসে গেলে তাঁরা নৌকায় আরোহনের ব্যাপারে কথাবার্তা বললেন। মাঝিরা জ্ঞানী লোকটিকে চেনেন এবং বিনা পয়সায় তাঁদের নৌকায় তুলে নিলেন। নৌকায় চড়েই জ্ঞানীজন কুড়ালের সাহায্যে নৌকার একটি তক্তা তুলে ফেললেন। এতে আগন্তুক স্থির থাকতে পারলেন না। বললেন, তারা বিনা পারিশ্রমিকে আমাদের নৌকায় তুলে নিয়েছে। আপনি কি এরই প্রতিদানে তাদের নৌকা ভেঙ্গে দিলেন যাতে সবাই ডুবে যায় ? আপনি অতি মন্দ একটি কাজ করলেন। বিজ্ঞজন বললেন : আমি পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। আগন্তুক ওজর পেশ করে বললেন : আমি আমার ওয়াদার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। আমার প্রতি রুষ্ট হবেন না। অতঃপর তাঁরা নৌকা থেকে নেমে সমুদ্রের কূল ধরে চলতে লাগলেন। বিজ্ঞজন দেখলেন, এক বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলা করছে। তিনি স্বহস্তে বালকটির মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন। বালকটি মরে গেল। আগন্তুক বললেন, আপনি একটি নিষ্পাপ প্রাণকে বিনা অপরাধে হত্যা করেছেন। এ তো বিরাট গুণাহের কাজ করলেন। জ্ঞানীজন বললেন, আমি তো পূর্বেই বলেছিলাম, আপনি আমার সাথে ধৈর্য ধারণ করতে পারবেন না। আগন্তুক দেখলেন, এ ব্যাপারটি পূর্বাপেক্ষা গুরুতর। তাই বললেন, এরপর যদি কোন প্রশ্ন করি, তবে আপনি আমাকে পৃথক করে দেবেন। তাঁরা আবার পথ চলতে লাগলেন। এক গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁরা গ্রামবাসীদের কাছে খাবার চাইলেন। ওরা সোজা অস্বীকার করে দিল। বিজ্ঞজন ওই গ্রামে পতনোন্মুখ একটি দেয়াল দেখে নিজ হাতে সেটি মেরামত করে দিলেন। আগন্তুক বিস্মিত হয়ে বললেন, যারা আমাদের খাবার দিতে অস্বীকার করলো আপনি তাদের এত বড় কাজ করে দিলেন ? ইচ্ছে করলে এর পারিশ্রমিক তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতেন। বিজ্ঞজন বললেন : এখন শর্ত পূর্ণ হয়ে গেছে। এটাই আমার ও আপনার মধ্যে বিচ্ছেদের সময়। এরপর বিজ্ঞজন বললেন : নৌকাটি যে দরিদ্রের ছিল, তারা ছিল দশ ভাই। তন্মধ্যে পাঁচজন ছিল বিকলাঙ্গ। অবশিষ্ট পাঁচ ভাই মেহনত-মজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করত। নদীতে নৌকা চালিয়ে ভাড়া উপার্জন করাই ছিল তাদের মজুরি। নৌকাটি যেদিকে যাচ্ছিল, সেখানে এক জালেম বাদশাহ্ এই পথে চলাচলকারী সব নৌকা ছিনিয়ে নিত। বিজ্ঞজন এই কারণে নৌকার একটি তক্তা উপড়ে দেন, যাতে জালেম বাদশাহর লোকেরা ভাঙ্গা দেখে নৌকা ছেড়ে দেয় এবং দরিদ্ররা বিপদের হাত থেকে বেঁচে যায়। আর খুন হওয়া বালকটির প্রকৃতিতে কুফর ও পিতা-মাতার অবাধ্যতা নিহিত ছিল। তার পিতা-মাতা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ লোক। বিজ্ঞজন বলেন : আমার আশংকা ছিল যে, ছেলেটি বড় হয়ে পিতা-মাতাকে বিব্রত করবে এবং কষ্ট দেবে। সে কুফরে লিপ্ত হয়ে পিতা-মাতার জন্যে ফেতনা হয়ে দাঁড়াবে এবং তার ভালবাসায় পিতা-মাতার ঈমানও বিপন্ন হয়ে পড়বে। এজন্যে আমি ইচ্ছা করলাম যে, আল্লাহ্ তায়ালা এই সৎকর্মপরায়ণ পিতা-মাতাকে এ ছেলের পরিবর্তে তার চাইতে উত্তম সন্তান দান করুক, যার কাজ-কর্ম ও চরিত্র হবে পবিত্র এবং সে পিতা-মাতার হকও পূর্ণ করবে। (এখানে উল্লেখ্য, নিহত ছেলের পিতা-মাতাকে আল্লাহ্ তায়ালা তার পরিবর্তে একটি কন্যা সন্তান দান করেন, পরবর্তীকালে যার গর্ভে দু’জন নবী জন্মগ্রহন করেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তাঁর গর্ভ থেকে জন্মগ্রহনকারী নবীর মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা এক বিরাট উম্মতকে হেদায়াত দান করেন।) প্রাচীরের ব্যাপার- সেটি ছিল নগরের দু’জন পিতৃহীন বালকের। এর নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন এবং তাদের পিতা ছিলেন সৎকর্মপরায়ণ। দয়াময় পালনকর্তা দয়াপরবশতঃ ইচ্ছা করলেন যে, তারা যৌবনে পদার্পণ করুক এবং নিজেদের গুপ্তধন উদ্ধার করুক। (এখানে স্মর্তব্য, সেটি একটি স্বর্ণের ফলক আকারে ছিল। তাতে নিম্নাক্ত উপদেশ বাক্যসমূহ মেসেজ আকারে লিখিত ছিল : (১) বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। (২) সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে তকদীরে বিশ্বাস করে অথচ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। (৩) সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে আল্লাহ্ তায়ালাকে রিযিকদাতারূপে বিশ্বাস করে, এরপর প্রয়োজনাতিরিক্ত পরিশ্রম ও অনর্থক চেষ্টায় আত্ননিয়োগ করে। (৪) সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে মৃত্যুতে বিশ্বাস রাখে, অথচ আনন্দিত ও প্রফুল্ল থাকে। (৫) সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে পরকালের হিসাব-নিকাশে বিশ্বাস রাখে, অথচ সৎকাজে গাফেল হয়। (৬) সে ব্যক্তির ব্যাপারটি আশ্চর্যজনক, যে দুনিয়ার নিত্য-নৈমিত্তিক পরিবর্তন জেনেও নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকে। (৭) লা-ইলাহা ইল্লল্লাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ্।) জ্ঞানবান বলেন, আমি নিজ মতে এটা করিনি। আপনি যে বিষয়ে ধৈর্যধারণ করতে অক্ষম হয়েছিলেন, এই হল তার স্বরূপ, ব্যাখ্যা। এই জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন হযরত খিজির (আঃ) এবং আগন্তুক জ্ঞানবান ছিলেন হযরত মুসা (আঃ)।
যাঁরা প্রকৃতই জ্ঞানী তাঁরা কখনো জ্ঞান নিয়ে বড়াই করেন না। তার প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত আমরা দেখি মনীষী সক্রেটিসের মাঝে। তিনি ছিলেন জ্ঞানীদের গুরু। তাঁর শিষ্য ছিলেন প্লেটো’র মতো মহাপুরুষ যাঁকে আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জনক বিবেচনা করা হয়। পশ্চিমা দুনিয়ার চিন্তার জগতে মহাজ্ঞানী সক্রেটিসের সবচেয়ে বড় অবদান হলো সক্রেটিস মেথড বা ইলেন্শাস (Elenchus) যা তিনি শুভ, সুবিচার ইত্যাদি নৈতিক বিষয়াবলী পর্যবেক্ষণে প্রয়োগ করতেন। এইসব বিষয়গুলো তাঁর সুযোগ্য শিষ্য প্লেটো তাঁর ‘সক্রেটিস ডায়ালগ্স’ “what I do not know I do not think I know”, often paraphrased as “I know that I know nothing. এই প্যারাডক্স। একটি সমস্যা সমাধান করতে তিনি সেটিকে সিরিজ প্রশ্নের আকারে ভেঙ্গে ফেলতেন। উপর্যুপরি ধারাবাহিক প্রশ্ন এবং সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তির জবাব এক পর্যায়ে ওই ব্যক্তিকে বিষয়ের মূলে নিয়ে যেতো। ফলে বিষয়টি তার কাছে জলবৎ তরলঃ হয়ে ধরা পড়তো। বর্তমান বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এই পদ্ধতির প্রয়োগ খুব বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাঁর মেসেজের মধ্যে অন্যতম ছিলো, অপরাধ কেউ কামনা করে না। কেহ ভুল করে না বা জেনে শুনে ভুল করে না। ধর্ম বা নৈতিকতাই জ্ঞান আর তা-ই সুখী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। (No one desires evil. No one errs or does wrong willingly or knowingly. Virtue—all virtue—is knowledge. Virtue is sufficient for happiness.)
আমি চারজন মনীষীর অত্যন্ত জ্ঞানগর্ভ বিশেষ কিছু বাণী এখানে তুলে ধরলাম। এরকম আরো বহু বহু বাণী, উপদেশ, আদেশ, নিষেধ রয়েছে আজকের আলোচিত মেসেজে। বয়োঃবৃদ্ধ বাবা জীবন সায়াহ্নে তার সন্তানদের যে সকল সুপরামর্শ মেসেজ আকারে লিখে পাঠিয়েছেন তা পাঠ করা ও তার মর্মার্থ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য সন্তানেরা নিঃসন্দেহে পাগলপারা হবে। যতক্ষণ না তা পড়তে ও বুঝতে পারে ততক্ষণ তারা এক দন্ড স্বস্তি পাবে না। নিজেরা যদি সে পাঠ উদ্ধারে সক্ষম না হয় তবে তারা যিনি বা যাঁরা জানেন তাদের স্মরণাপন্ন হবে। আর বুদ্ধিমান সন্তান সে-ই যে তার বাবার উপদেশ শুনে, বুঝে এবং মেনে চলে।
পবিত্র কোরআন একটি মেসেজ/বাণী/বার্তা/পয়গাম মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালার তরফ থেকে সমগ্র মানবজাতির প্রতি। তিনি স্রষ্টা, পালনকর্তা, খাবারসহ যাবতীয় সামগ্রীর যোগানদাতা। তিনি অত্যন্ত মেহেরবাণী করে চলার পথের পাথেয় স্বরূপ আমাদের জন্য এই মেসেজটি পাঠিয়েছেন। এক পূতঃ পবিত্র মেসেনঞ্জার/বাণীবাহক/পয়গাম্বর/রাসূল মুহাম্মদ (সঃ) সেটি এনে আমাদের পড়ে শুনিয়েছেন এবং নিজ জীবনে তা বাস্তবায়ন করেও দেখিয়েছেন। কোরআন নামটি মেসেজটিতে উল্লেখিত হয়েছে ৫৭ বার, ওই মেসেজে রয়েছে ১১৪টি অধ্যায়, ৬৩৪৬টি বাক্য, মেসেজ প্রেরকের (আল্লাহ্) পরিচিতিসূচক শব্দ রয়েছে ২৬৯৮টি, আবার তঁর কথা উল্লেখ আছে এরূপ বাক্যে শব্দ রয়েছে ১১৮১২৩টি, এর সর্ব প্রথম বাক্যটিতে রয়েছে ১৯টি বর্ণ, সর্বপ্রথম অবতীর্ণ কথাগুলোতে রয়েছে ১৯টি শব্দ এবং তাতে রয়েছে ৭৬টি হরফ, সর্বশেষ নাযিলকৃত সূরায় রয়েছে ১৯টি শব্দ এবং তার প্রথম বাক্যে রয়েছে ১৯টি বর্ণ। এইভাবে আরো বহু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা সম্ভব যে, আল কোরআনের বিষয়গুলো সর্বক্ষেত্রে ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। Nineteen is the common denominator throughout the Quran’s mathematical system. এটি মৌলিকত্বের একটি অপূর্ব নিদর্শন। ১৯ হচ্ছে একটি প্রাইম নাম্বার। এটির গঠন সংখ্যার প্রথম ও শেষ মৌলিক (১ ও ৯) ডিজিট দিয়ে। এই মৌলিকত্ব সব ভাষাতেই বিদ্যমান। পবিত্র কোরআনের অলৌকিকত্বের (মিরাকল) এটি একটি বড় নিদর্শন। এই বিষয়ে বহু বিস্তৃত গবেষণা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে সাগর সম্বন্ধে ৩২ বার এবং স্থলভাগ সম্বন্ধে উল্লেখ হয়েছে ১৩ বার। দুইটি মিলে ৪৫ বার অর্থাৎ ১০০%। তার মানে ৩২/৪৫*১০০=৭১.১১১% সাগর এবং ১৩/৪৫*১০০=২৮.৮৮৯% স্থলভাগ। সাগর ও স্থলভাগ মিলে একশত ভাগ। আধুনিক বিজ্ঞান সম্প্রতি প্রমাণ করেছে যে, পৃথিবীর ৭১.১১১ শতাংশ জল আর ২৮.৮৮৯ শতাংশ স্থল।
পবিত্র কোরআন একটি ঐশী গ্রন্থ, কোনভাবেই মানব রচিত নয়। এতে রয়েছে সত্য-মিথ্যার সরল বর্ণনা এবং স্পষ্ট করা হয়েছে শুভ ও অশুভের পার্থক্য। তাই তো এর আর এক নাম ফোরকান মানে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। সৃষ্টির সূচনা থেকে শুরু করে ভূ-মন্ডল, নভোমন্ডলের হেন বিষয় নেই, যার বর্ণনা এখানে করা হয়নি। এর রচয়িতার সৃষ্টি কুশলতা এমন, তাঁর মেসেজেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, যদি পৃথিবীর সকল গাছপালাকে কলম আর সাগর-মহাসাগরের পানিকে কালি বানিয়ে তাঁর অনিঃশেষ কথা/বাণী লেখার চেষ্টা করা হয় তাহলে কালি শেষ হয়ে যাবে কিন্তু লেখা শেষ হবে না।
একজন সন্তান যদি তার বাবার প্রেরিত মেসেজ পড়ার, জানার ও তার মর্মার্থ হৃদয়ঙ্গম করার জন্য পাগলপারা হয় তাহলে বাবা ও সন্তান উভয়ের স্রষ্টা, সমগ্র মানবকূল তথা সকল সৃিষ্টর পালনকর্তা কর্তৃক প্রেরিত মেসেজটি পড়া, জানা, বুঝা কি আমাদের কর্তব্য নয় ?
মাহ্ফুজুল হক
লেখক, গবেষক
[email protected]
সেল নাম্বার : ০১৮৬৯ ৮৬৬৯০০


শেয়ার করুন