মুসলিম বোনদের প্রতি খোলা চিঠি!

jawtoook-400x265পৃথিবীর সকল ধর্মের নারীদের প্রতি পর্দা বিষয়ে খোলা মনে চিন্তা ও সুবিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে এই চিঠিতে। তাই এই চিঠিটি সকল বোনদের জন্য দেওয়া হলো-
প্রিয় বোন, বিশ্বাস কর তোমার সমালোচনা করা আমার অভিপ্রায় নয়। তোমাকে মন্দ ঠাওরানোতেও কোনো লাভ নেই আমার। ধর্ম চর্চা কর বা না কর, পর্দা মেনে চল বা না চল এমনকি আমাকে ভালো জ্ঞান কর বা মন্দ- তুমিও আমার বোন। গোড়ায় আমাদের বাবা-মা অভিন্ন। যে দেশ বা যে ধর্মেরই হও না কেন আদি পিতার এ সম্পর্ক নস্যাৎ করে সাধ্য কার ? দয়া করে, আমার কথাগুলোর ওপর একবার চোখ বুলাও। একটুখানি ভেবে দেখ খোলা মনে।
তুমি ভাবছো, পৃথিবী আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সাফল্য ও সমৃদ্ধির শীর্ষ চূড়ায় উপনীত হয়েছে। ধুলির ধরা ছাড়িয়ে মানুষ এখন পৌঁছে গেছে নানা গ্রহে-উপগ্রহে। সারা বিশ্ব এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। সুতরাং, এখন পর্দা করা মানে মধ্যযুগে ফিরে যাওয়া। পর্দা করা মানে নিজেকে বঞ্চিত করা। আমাদের মুক্তি নারী স্বাধীনতায়। মুক্তি ইসলাম উপেক্ষায়।
ইতিহাস পড়ে দেখ, ইসলামই সর্বপ্রথম নারীকে মুক্তি দিয়েছে। নারীকে ভোগের পণ্য হতে দেয়নি শান্তির ধর্ম ইসলাম। একমাত্র ইসলামই কন্যা সন্তান প্রতিপালনের পুরস্কার ঘোষণা করেছে জান্নাত। ইসলামই পুরুষের চারিত্রিক শুচিতা যাচাইয়ে স্ত্রীর সাফাইয়ের কথা বলেছে। ইসলামে কোনো সুযোগ রাখা হয়নি মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে বউ নিয়ে সুখে থাকার অথবা জন্মের পর থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত কোনো পর্বে মাকে অবমূল্যায়ন করার। স্ত্রী, কন্যা ও মাতা-নারী জীবন তো এর বাইরে নয়। এ ক্ষেত্রের কোনোটিতেই ইসলামের চেয়ে বেশি দিতে পারেনি কোনো ধর্ম বা কোনো জাতি।
আমার ভার্সিটি পড়ুয়া বোন, তুমি পাশ্চাত্যের মেকি স্বাধীনতায় প্রবঞ্চিত হয়ো না। স্যাটেলাইট চ্যালেনগুলোর হৃদয়কাড়া চিত্র দেখে ধোঁকায় পড়ো না। নাটক-সিনেমা আর ইউরোপ-আমেরিকার সুখের ছবি দেখে নিজেকে হতভাগী ভেবো না। পশ্চিমা সমাজের একটু ভেতরের খবর নিলেই জানতে পারবে বাস্তব অবস্থা। যারা নিয়মিত খবরের কাগজ পড়েন তাদের জিজ্ঞেস করে দেখ- প্রায়ই পত্রিকায় সংবাদ আসছে পশ্চিমা তরুণীরা তথাকথিত স্বাধীনতার শেকলে হাঁফিয়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হার সবচেয়ে বেশি। একটি বইয়ে (কয়েক বছর আগে ঢাকা থেকে ‘অন্যপথের কন্যারা’ নামে বইটির অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে)। চল্লিশজন মার্কিন তরুণীর (কথিত নারী স্বাধীনতা পরিহার করে) পর্দার ধর্ম ইসলামে আগমনের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। তারা সবাই নারী স্বাধীনতার স্বরূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। এ স্বাধীনতাকে তারা কৃত্রিম ও প্রপঞ্চ এবং ইসলামের পর্দা বিধানকে মুক্তি ও সুরক্ষা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
বৃটেনের সান ডে এক্সপ্রেস পত্রিকার মহিলা সাংবাদিক রিডলি- যিনি আফগানিস্তানে তালেবানদের বোরখা নিয়ে বাড়াবাড়ির কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনিই কিন্তু পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলন করে ইসলামের পর্দার ছায়াকে শান্তির ঠিকানা বানিয়ে নেন। নারী স্বাধীনতার নামে যৌন স্বাধীনতার দাবিদার তসলিমা নাসরিন যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সে ভারতে তারই মত খোলামেলা লেখালেখির জন্য আলোচিত মালায়লম ও ইংরেজি ভাষার লেখিকা কমলা দাস এখন ইসলাম গ্রহণ করে পর্দা করছেন। এমন নজির একটি দু’টি নয় অনেক। এদের সবাই সুশিক্ষিতা। এরা কেউ আবেগের বশে বা চাপে পড়ে ইসলাম কবুল করেননি।
উচ্চাভিলাষী বোন আমার, ইসলামের সীমানায় থেকে তুমি সবই করতে পার। যদি পড়তে চাও তবে যত ইচ্ছে পড়তে পার। ব্যবসা, চাকরি কিংবা যা ইচ্ছে তাই করতে পার। শুধু পর্দা লঙ্ঘন করো না। শরিয়তের গ-ি অতিক্রম করো না। মনে রেখো, ইসলাম তোমার অগ্রযাত্রায় বাধা নয়। পর্দাও অন্তরায় নয় প্রগতির পথে। ইসলাম চায় তুমি যেখানেই থাক তোমার সতীত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব এবং সম্মান রক্ষা হোক। তোমার কোমলতা, সৌন্দর্য এবং ভদ্রতা বজায় থাকুক। ইসলাম তোমাকে বন্দি করতে ইচ্ছুক নয়। কোনো চরিত্রহীন যেন তোমাকে কলংকিত না করতে পারে, ছলে-বলে-কৌশলে তথা কোনোভাবেই তোমাকে অপমানিত না করতে পারে- এই ইসলামের অন্বেষা। আমার স্কুল-কলেজগামী বোন, বখাটেদের ইভটিজিং থেকে বাঁচতে চাও? এসো পর্দার আশ্রয়ে। অমানুষদের এসিড সন্ত্রাস থেকে বাঁচতে চাইলেও এসো পর্দার নিরাপত্তায়। যৌতুক তোমাকে দিতে হবে না বরং নগদ মোহরানা দিয়ে তোমাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হবে যদি তুমি হিজাবে সুশোভিত হও। এ আমার দাবি নয়; বাস্তবতা। পরিসংখ্যান দেখলেই জানতে পারবে পর্দানশীনদের অল্পজনই এসব অমানবিকতার স্বীকার হয়।
বোন, আধুনিকতার নামে তুমি নিজেকে অসম্মান ও অনিরাপদ করো না। হেদায়েতের আলো বঞ্চিতদের প্রচার-প্রপাগা-ায় বিভ্রান্ত হয়ো না। ওরা বুঝাতে চায়, সভ্যতা ও বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব উৎকর্ষের এই যুগে আবার ধর্ম কেনো? সভ্যতাগর্বী এসব মানুষের অপপ্রচারে তুমি প্রভাবিত হয়ো না। ওরা জানে না এর আগেও পৃথিবীতে তাদের মত সভ্যতাগর্বী জাতি ছিল। তারা আজ কোথায়? বল, সপ্তমাশ্চর্যের তাজমহল এবং পিরামিড যারা গড়েছে তাদের কেউ কি পৃথিবীতে বেঁচে আছে? দয়াময় আল্লাহ কত সুন্দর করে ইরশাদ করেছেন- ‘তারা কি পৃথিবী ভ্রমণ করেনি, তাহলে তারা দেখত, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল? তারা পৃথিবীতে ছিল তাদের চেয়ে সংখ্যায় অধিক। আর শক্তিতে ও কীর্তিতে তাদের চেয়ে অধিক প্রবল। অতপর তারা যা অর্জন করত তা তাদের কাজে আসেনি।’ (আল-মু’মিন : ৮২)
আমার প্রিয় বোন, রূপ বা তারুণ্যের জোয়ারে ভেসে যেও না। দেহের শক্তি ও সৌন্দর্যের কোনো স্থায়ীত্ব নেই। তিনি চাইলে যে কোনো সময় তা কেড়ে নিতে পারেন। দেখ কত সুন্দরী রোগ বা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিরবিদায় নেয়। কতজন না মরে পঙ্গুত্ব বা অন্ধত্বের অভিশাপ নিয়ে বেঁচে থাকে। তুমি যে এর অসহায় শিকারে পরিণত হবে না তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে? পৃথিবীতে কত সুন্দরীই তো ইতিহাস হয়ে আছে; কিন্তু তারা কি কেউ মৃত্যুর দংশন থেকে বাঁচতে পেরেছে? হৃদয়কাড়া চেহারা দেখিয়ে অহংকারের সঙ্গে পথ চলো না। জগত অধিপতির ভাষায়- ‘তোমরা ভূ-পৃষ্ঠে বড়াই করে চলো না; তুমি তো কখনো ভূমিতে ফাটল ধরাতে পারবে না এবং কখনো পাহাড় সমান উচ্চতায় পৌঁছতেও পারবে না। (বনি ইসরাইল : ৩৭)
প্রাণপ্রিয় বোন, তুমি কি জান বেপর্দার কুফল কি? পর্দার প্রতি যত অবহেলা করা হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা ততই বাড়ছে।
জাতি হিসেবে আজ আমরা আগের চেয়ে বেশি শিক্ষিত। কিন্তু বল, নারীদের প্রতি সামাজিক অনাচার বেড়েছে না কমেছে? নিত্য-নতুন পন্থায় নারীদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এই পর্দা লঙ্ঘনই কিন্তু অবৈধ যৌন সম্পর্কের প্রথম ধাপ আর নারী-পুরুষের অবৈধ মেলামেশাই যে নিশ্চিত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে এইডস্-এর মতো নানা রোগ ডেকে আনে, তা তো আজ অমুসলিমরাও স্বীকার করছে। অতএব এসো মুক্তির পতাকাতলে। নিরাপত্তার সুরক্ষিত গ-িতে। পর্দা শুধু তোমার ইহকালীন জীবনকে নিরাপদই করবে না, নিশ্চিত করবে তোমার সম্মান-সমৃদ্ধি। আখিরাতে নাজাত পাবে তুমি জাহান্নামের কল্পনাতীত শাস্তি থেকে। আর চিরশান্তির ঠিকানা জান্নাত হবে তোমার আবাস। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দিন। আমিন।


শেয়ার করুন