মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে আটকের ৪ দিন পর স্বীকার ডিবির

103717_1নতুন বার্তা ডটকম:
বেপরোয়া হয়ে উঠছে গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)। আইন-আদালতের তোয়াক্কা করছে না তারা। যেকোনো সময় যে কাউকে তুলে নেয়ার পর অস্বীকার করা হচ্ছে। এবার এক মুক্তিযোদ্ধার ছেলেকে আত্মীয়ের বাসা থেকে নিয়ে যাওয়ার চারদিন পর স্বীকার করেছে ডিবি। ওই পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেছেন।

এমন সময় এ ঘটনা ঘটল, যখন নিখোঁজের তিন দিনেও বিএনপিনেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদের খোঁজ মিলছে না। তাকেও ডিবি পরিচয়ে আটক করা হলেছে বলে পরিবারের অভিযোগ। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। সেখানে তিনি বলেন, “গতকাল (বৃহস্পতিবার) কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা থেকে কেএম জিয়া উদ্দিন ফাহাদ (৩০) নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বাঁশেরকেল্লাসহ অর্ধশতাধিক ফেসবুক পেজের এডিটরিয়াল অ্যাডমিন।”

মনিরুলের দাবি, “ফাহাদ ছাত্রশিবিরের প্রচার বিভাগের প্রধান সমন্বয়ক। তিনি ফেসবুকে বিশিষ্ট ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করে আসছেন।”

ফাহাদের বাবা খোন্দকার মোহাম্মদ ছমিউদ্দীন চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। তিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর কমাণ্ডার ছিলেন। তার এক মেয়ে তিন ছেলের মধ্যে ফাহাদ সবার ছোট। তিনি চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অনার্সে পড়ছেন।

ছেলের খোঁজে গত বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে যান ছমিউদ্দীন। ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, ফাহাদের বড় বোনের বাসা কুমিল্লায়। ৭ মার্চ মা সাকিয়া আক্তারের সঙ্গে ওই বাসায় বেড়াতে যায় ফাহাদ। বাসার ভেতর থেকে ৯ মার্চ বিকেলে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ফাহাদকে ধরে নিয়ে যায়। সিলভার কালারের একটি মাইক্রোবাসে আসা ৫/৭ জন লোক অস্ত্র দেখিয়ে ফাহাদকে গাড়িতে তোলে। মাইক্রোবাসের একপাশে লেখা ছিল ‘ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিবি)’। নম্বর প্লেটে লেখা ছিল ‘ঢাকা মেট্টো-ছ-৫৩-৪২৬৬’।

খবর পেয়ে পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার মধ্যে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে যান ছমিউদ্দীন। উপকমিশনার মাসুদুর রহমানের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান। রাত ১০টা পর্যন্তও সেখান থেকে ছেলের বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি তিনি।

তিনি সেদিন কান্নায় ভেঙে পড়ে সাংবাদিকদের বলেন, “কুমিল্লার পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী বারবার আমাকে বলেছেন ডিএমপিতে যোগাযোগ করতে। আমার ছেলে সেখানে আছে। কিন্তু এরা কিছু বলতে পারছেন না। এখন আমি কি করবো, কার কাছে যাবো।”

আইন অনুযায়ী আটক ব্যক্তিকে আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া ওই ব্যক্তির আটকের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলো ডিবি কর্মকর্তা মনিরুল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “গতকালই আমরা ফাহাদকে আটক করেছি। এর আগে তিনি পলাতক ছিলেন। ফেসবুকের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্টতায় সনাক্ত করার পর আমরা তাকে খুঁজছিলাম।”

ছমিউদ্দীনের বড় মেয়ে ফাহমিদা আক্তার কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের লেকচারার। কলেজ শিক্ষকদের আবাসিক ভবনেই তার বাসা। ওই বাসা থেকে ফাহাদ আটক হন বলে জানান তার ভগ্নিপতি আনিসুর রহমান।

শুক্রবার বিকেলে আনিসুর রহমান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “৯ মার্চ বাসা থেকে ফাহাদকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় আমি ছিলাম। আটককারী ব্যক্তিরা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়েছেন।”

তিনি বলেন, “কোথাও ফাহাদের খোঁজ না পাওয়ায় গত বুধবার বিকেলে কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে খোঁজ নেয়া হয়েছে। তারা জানিয়েছেন ফাহাদ ডিবি পুলিশের কাছে আছে। কিন্তু ডিবিতে যোগাযোগ করার পরও কেউ স্বীকার করেনি।”

এদিকে আজ ১১. ৫০ মিনিটে বাঁশেরকেল্লা পেইজের এক পোস্টে বলা হয়, বিভিন্ন টেলিভিশনে ও অনলাইন নিউজে প্রচারিত বাঁশেরকেল্লার প্রধান এডমিন আটকের খবরটি সঠিক নয়। বাঁশেরকেল্লা’র প্রধান এডমিনসহ সকল এডমিন নিরাপদে আছেন।
এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি একই কায়দায় নিখোঁজ হন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রথমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটকের কথা অস্বীকার করে। নিখোঁজের ২১ ঘণ্টা পর আটকের কথা স্বীকার করে র‌্যাব তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে।

শেয়ার করুন