স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি

মিয়ানমারের সরকার ইয়াবা কারবারিদের পৃষ্ঠপোষক

ডেস্ক নিউজঃ
মিয়ানমারের সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে অতীতের চাইতে বেশি ইয়াবা ঢুকছে বলে দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাদের মতে, দেশটির ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চি সরকারের তুলনায় বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে আড়াই গুণ বেশি ইয়াবা ঢুকছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত এই মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে আরও বলা হয়, ইয়াবা ঠেকাতে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার বারবার আলোচনা করলেও বাস্তবে দেখা গেছে, সেখানকার সামরিক সরকার ইয়াবা কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে যাচ্ছে। নাফ নদী ছাড়াও দুর্গম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে।

বৈঠক থেকে টিকটক অ্যাপটি বন্ধের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। তাদের মতে, টিকটক অ্যাপটি নেতিবাচকভাবেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড, গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।

এছাড়াও স্বামী-স্ত্রী সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকলে তাদের পাশাপাশি কর্মস্থলে পদায়নে বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতে সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তাদের মতে, এতে কর্মজীবী দম্পতির কাজে গতি আসে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, কমিটির আগের বৈঠকে ইয়াবা নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, মিয়ানমারের সামরিক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আগের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করলেও সেখানকার সামরিক সরকার বরং ইয়াবা কারবারিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। নাফ নদী ছাড়াও দুর্গম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে।

তিনি আরও বলেন, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ির অনেক দুর্গম পথ রয়েছে যেখানে সার্বক্ষণিক নজরদারি সম্ভব হয় না। সেখানকার একটি বিওপি থেকে অন্য বিওপিতে যেতে দুদিন সময় লেগে যায়। ইয়াবা কারবারিরা এই সুযোগটিও কাজে লাগাচ্ছে। মন্ত্রী জানান, ইয়াবা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে এজন্য সবরকম চেষ্টা অব্যাহত আছে। দুর্গম এলাকায় বিওপির সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে।

বৈঠকে কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের হাত ধরেই বাংলাদেশে ইয়াবার ব্যবহার শুরু হয়। এরপর সারা দেশে তা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেও মাদক বাণিজ্য এবং সেবন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আরও কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।

বৈঠক থেকে দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটক বন্ধের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। কার্যবিবরণীতে দেখা গেছে, টিকটক বন্ধের বিষয়ে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক জানান, বাংলাদেশের তরুণ সমাজের মধ্যে ব্যবহৃত ইন্টারনেটের ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় টিকটক অ্যাপের পেছনে। এ প্ল্যাটফরমটি ব্যবহার করে প্রতিহিংসামূলক, ভুল তথ্য ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করা হয়। এর ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ব্যবহার বেশি হচ্ছে। সব ধরনের তথ্য-উপাত্তসহ টিকটক অ্যাপ বন্ধে ইতোমধ্যে বিটিআরসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

বৈঠক থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে-এমন তৎপরতা বন্ধ করতে এবং গুজবের ওপর ভিত্তি করে যাতে সাম্প্রদায়িক সংঘাত-অগ্নিসংযোগ-লুটপাট-হানাহানিসহ কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছে সংসদীয় কমিটি।

বৈঠকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সার্বিক কার্যক্রম এবং দেশের সমসাময়িক পরিস্থিতির ওপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগ এবং অন্যান্য সংস্থার গৃহীত সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে সংসদ-সদস্য ভবনের পাশে গাড়ি চলাচলের সময় হর্ন না বাজানোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. হাবিবর রহমান, সামছুল আলম দুদু, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ও রুমানা আলী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন