মিরপুরের ‘জঙ্গি আস্তানার’ ধ্বংসস্তূপে তল্লাশিতে র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিস

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন বুধবার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনটি ইউনিট নিয়ে আমরা কাজ শুরু করছি। কোথাও বিস্ফোরক জাতীয় আর কিছু আছে কিনা, কোথাও এখনও আগুন জ্বলছে কি না তা দেখে আমরা নির্বাপনের কাজ করব।”

ছয় তলা ওই ভবনে থাকা সন্দেহভাজন জঙ্গি আবদুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের কী ঘটেছে বুধবার সকাল পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। তবে তারা আত্মঘাতী হওয়ার জন্যই রাতে ওই বিস্ফোরণ ঘটায় বলে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ধারণা।

র‌্যাব সদস্যরা সকালে ওই ভবনে প্রবেশের আগে এ বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল ও ডগ স্কোয়াড ওই বাড়িতে প্রবেশ করেছে। বাহ্যিকভাবে দেখা যাচ্ছে বিস্ফোরণে ভবনের ওপরের অংশের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ভবনের বিভিন্ন তলা সুইপিং করে আমাদের বিশেষায়িত দল পাঁচতলার ওই বাসায় প্রবেশ করবে। ওই জঙ্গিদের অবস্থা বা আসল পরিস্থিতি তখনই বোঝা যাবে।”
টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় সোমবার একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ‘জেএমবির জঙ্গি’ দুই ভাইকে ড্রোন ও দেশীয় অস্ত্রসহ আটকের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেদিন মধ্যরাতে মিরপুরে এই অভিযান শুরু করে র‌্যাব।

মাজার রোডের পাশে বর্ধনবাড়ি ভাঙ্গা ওয়ালের গলির ২/৩-বি হোল্ডিংয়ে ছয় তলা ওই ভবনের ২৪টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৩টি থেকে ৬৫ জনকে সরিয়ে নেয় র‌্যাব। মঙ্গলবার ভোরেই ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

ভবনের পঞ্চম তলায় আবদুল্লাহ নামের এক ‘দুর্ধর্ষ জঙ্গি’, তার দুই স্ত্রী, দুই সন্তান ও দুই সহযোগীসহ মোট সাতজন অবস্থান করছিলেন বলে মঙ্গলবার দুপুরে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান।

র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, আবদুল্লাহ ২০০৫ সাল থেকে জঙ্গিবাদে জড়িত। মিরপুর মাজার রোডের দীর্ঘদিনের এই বাসিন্দা ইলেকট্রনিক সামগ্রী মেরামতের কাজ করতেন।

মঙ্গলবার সারাদিন র‌্যাবের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে আবদুল্লাহকে আত্মসমর্পণে রাজি করানোর চেষ্টা চলে। সন্ধ্যায় জানানো হয়, আবদুল্লাহ রাজি হয়েছেন এবং রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে আত্মসমর্পণ করবেন বলেছেন।
কিন্তু সন্দেহভাজন ওই জঙ্গি র‌্যাব সদস্যদের আরও আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষায় রাখেন এবং রাত পৌনে ১০টার দিকে ভবনটিতে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।

এতে ছয়তলা ভবনের পঞ্চম তলায় ‘জঙ্গিদের’ ফ্ল্যাটে আগুন ধরে যায়। আগুনের কুণ্ডলিতে আশপাশের এলাকা আলোকিত হয়ে ওঠে। এরপর সেখানে কয়েক দফা গুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

বিস্ফোরণের কিছু সময় পর মুফতি মাহমুদ খান সাংবাদিকদের বলেন, “ভিতরে যারা ছিল তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তিনটি বড় বড় বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আরও কিছু বিস্ফোরণ ঘটেছে। বিস্ফোরণে পাঁচতলায় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কেমিক্যাল ফায়ারের মতো হবে।”

বিস্ফোরণের ঘটনায় র‌্যাবের চারজন সদস্য স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন। তবে তাদের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে রাতেই জানান মুফতি মাহমুদ।

ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক দেবাশিষ বর্ধন সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, রাতে ওই বিস্ফোরণের পর আগুন নেভাতে তাদের আড়াই ঘণ্টা সময় লেগে যায়। ধরন দেখে তাদের মনে হয়েছে ওই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে রাসায়নিক ব্যবহার করে।

রাত সোয়া ২টার দিকে ওই ভবনে আবারও দুটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। পড়ে থাকা কোনো বিস্ফোরক উত্তাপে বিস্ফোরিত হওয়ায় ওই শব্দ হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা দেন দেবাশিষ বর্ধন।
সকালে তল্লাশি শুরুর পর পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক ঘটনাস্থলে এসে ‌উপস্থিত র‌্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ কমিশনার মাসুদ আহমেদ জানান, আবদুল্লাহ পুলিশের নির্ধারিত যে ভাড়াটিয়া ফরমটি পূরণ করেছিলেন, তারা সেটি পেয়েছেন। পরে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত জানাবেন।

র‌্যাব যাকে আব্দুল্লাহ বলছে তাকে স্থানীয়দের অনেকে টিটু নামে চেনেন। তারা বলছেন, ওই ভবনে খোকা নামে তার এক ছোট ভাইও থাকতেন।

এলাকাবাসী বলছে, আবদুল্লাহ আইপিএস ও ফ্রিজ মেরামতসহ বাসাবাড়িতে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ করতেন। পাশাপাশি ওই বাড়ির ছাদে কবুতর পালতেন। তবে তার গ্রামের বাড়ির খোঁজ দিতে পারেননি কেউ।


শেয়ার করুন