মাহাথির ও শেখ হাসিনার পার্থক্য

2-pix1 প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার প্রধান তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাহাথির মোহাম্মদ। বাংলাদেশকে মালয়েশিয়ার মতো এগিয়ে নিতে শেখ হাসিনাকে আরো ৪ থেকে ৫ মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় থাকতে হবে। তার ভাষায় আরো ২০-২৫ বছর তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকলে দেশ মালয়েশিয়ার মতো হবে। জয় নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়াশোনা করা আধুনিক শিক্ষিত।
শেখ হাসিনা ও মাহাথিরের মধ্যে রাজনৈতিক বিস্তর ফারাক রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর শেখ হাসিনা ৮০’র দশকে আওয়ামী লীগের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বাবার রাজনৈতিক পরিচয়ে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ইতিহাস রচিত হয়েছে। আর মাহাথির নিজের যোগ্যতা আর আপন শক্তি দিয়ে রাজনীতির মাঠে দাপট দেখিয়েছেন।
মাহাথিরের বাবা ছিলেন সাধারণ একজন স্কুল শিক্ষক। রাজনীতি বা ক্ষমতার সঙ্গে মাহাথিরের বাবা জড়িত ছিলেন না। কিন্তু মাহাথির পড়াশোনা করেছেন দেশের বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠার সুলতান আব্দুল হামিদ কলেজে। এছাড়া তিনি সিঙ্গাপুরের মালায়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
১৯৬৪ সালে মাহাথির ইউএমএনও টিকেটে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ইউএমএনও মালয়েশিয়ার একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। তিনি ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মেধা ও যোগ্যতায় দেশটির মন্ত্রিপরিষদে নিজের স্থান করে নেন।
১৯৭৬ সালে মাহাথির মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দীর্ঘ ২২ বছর সফলতার সঙ্গে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন। তার অধীনে মালয়েশিয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের নেতৃত্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অর্থনীতির টাইগার খ্যাতি অর্জন করেছে মালয়েশিয়া।
মাহথিরের ইতিবাচক দিকের মধ্যে কিন্তু নেতিবাচক দিকও রয়েছে । ৮০’র দশকে গণতন্ত্রের চেয়ে স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবই বেশি লক্ষ্য করা যায় মাহাথিরের মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী মাহাথির ১৯৮৭ সালে মালয়েশিয়ার ৪ টি পত্রিকা বন্ধ করে দেন। এছাড়া দেশের জ্ঞানী গুণী ১০৬ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। এ তালিকায় উপ- প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, বিরোধী দলের নেতা-কর্মী ও দেশটির শীর্ষ ধর্মীয় নেতাও রয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা নিজের করে নেন মাহাথির। মাহাথিরের রাজনৈতিক ইতিহাস ব্যক্তিগত মেধা, বুদ্ধিমত্তা ও যোগ্যতার বংশানুক্রমিক নয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলে থাকার সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করলেও নির্বাচিত হয়ে তিনি এ পদ্ধতি বাতিল করেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এক দলীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।
এখানেই বাংলাদেশি মাহাথির ও মালয়েশিয়ার মাহাথিরের মধ্যে মিল পাওয়া যায়। তবে মালয়েশিয়ার মাহাথির এক দলীয় নির্বাচন বা নির্বাচনবিহীন ক্ষমতা ধরে রাখেনি। যা আমাদের বাংলাদেশের মাহাথিরের সরকার করছে।
স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরে এসে বাংলাদেশ নি¤œ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। যা মালয়েশিয়ার উন্নয়নের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের সরকার দুর্নীতিতে দ্রুতবর্ধনশীলতার খ্যাতি অর্জন করেছে। ১/১১ খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশে দুর্নীতির চিত্র কিছুটা কমেছিল। নিজের টাকা, বাড়ি ও বিলাসবহুল গাড়ি যেখানে সেখানে ফেলে রেখে পালানোর খবর পাওয়া গেছে। অনেক ধনী শিল্পপতি আত্মগোপন করেছিলেন।
মালয়েশিয়ার মাহাথির ক্ষমতা থেকে বহুদূরে থাকলেও মালয়েশিয়াতে তার জনপ্রিয়তার কমতি নেই। সুনাম ধীরে প্রসারিত হচ্ছে। তার কলঙ্কের জন্য তাকে অবহেলা করে না দেশটির নাগরিকরা।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে এ দেশের লাখো জনতা নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। জয়ের নানা বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন তার প্রকৃত ফল পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্র পাচ্ছে না। একই সঙ্গে তারা গণতান্ত্রিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশকে উন্নত করার জন্য আমরা গাদ্দাফি বা সাদ্দাম হোসেন চাই না। আমরা সেই ধরনের একজন নেতা চাই যিনি স্বৈরতান্ত্রিক অন্ধকার থেকে দেশকে গণতান্ত্রিক আলোকে নিয়ে যাবেন। দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করবেন।


শেয়ার করুন