মার্কিনের স্ত্রী ও ৩ কন্যার কান্না থামছে না

Markin Familyনিজস্ব প্রতিবেদক, সিটিএন:
সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে স্বামীকে হত্যা করেছে। এরই মধ্যে ৪ মাস হতে চলেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই বাস্তবতার সাথে মুখোমুখী হতে হচ্ছে তাকে। স্বামী হারিয়ে এখন ‘অকূল সাগরে’ পড়ে গেছেন পারভিন আকতার (২৮)। বলা হচ্ছে চিহ্নিত সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ার ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজিজুল হক মার্কিনের স্ত্রী পারভিন আকতারের কথা। একদিকে স্বামী হারানোর শোকের কান্না অন্যদিকে জীবন সংগ্রাম দু’ই মিলিয়ে বিধবা পারভিন আকতার বতর্মানে চরম অসহায় অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। অন্যদিকে প্রিয় বাবার জন্য শোক মূহ্যমান মার্কিনের ৩ অবুঝ কন্যার কান্নাও থামছে না। তারা এখনো প্রতিদিন প্রিয় বাবাকে খুঁজে ফিরছে আর কান্নায় ভাসছে। এর উপর মার্কিনের মূল খুনী হামজালাল মামলার চার্জসীট থেকে বাদ যেতে তদবীর শুরু করেছে। এ নিয়েও চরম দুশ্চিন্তায় পারভিন। এতে স্বামী হত্যার বিচার নিয়ে আশাহীন হয়ে পড়ছেন তিনি। সব মিলে এক দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন পারভিন আকতারসহ মার্কিনের মা ও ভাইয়েরা।
পারভিন আকতার বলেন, ‘আমি নিজে শোকের সাগরে ভাসছি। তার সাথে তিন অবুঝ কন্যার কান্না- কোনটি সইব আমি। এর সাথে বেঁচে থাকার সংগ্রামও করতে হবে। আমি জানিনা কিভাবে এতটা জীবন পাড়ি দেবো।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই। খুনীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। তাহলে আমি কিছুটা শান্তি পাবো। কিন্তু মূল খুনীরা মামলা থেকে বাদ যেতে তদবীর শুরু করেছে। চার মাস হতে চললেও এখনো মামলার কোন কিনারা হয়নি। এতে আমাদের অসহায়ত্ব আরো বাড়ছে।’
গত ১৪ সেপ্টেম্বর দিন দুপুরে নাজির পাড়ার সন্ত্রাসী হামজালাল, তার বোনজামাই ছিদ্দিক, ছিদ্দিকের পুত্র ফরিদ আলমসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আজিজুল হক মার্কিনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। মার্কিনের আয়েশা আকতার (৮) জাইতুন নেছা (৬), নিহা মণি (১)সহ তিনটি কন্যা সন্তান রয়েছে। একই সাথে সন্ত্রাসীরা মার্কিনের ছোট ভাই নাজিরপাড়া জামে মসজিদের খতিব বিশিষ্ট ওয়ায়েজ ও নুরানী মাদরাসার পরিচালক হাফেজ মাওলানা নুরুল হককে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে তিন মাস চিকিৎসা শেষে এখন পঙ্গু জীবন কাটাচ্ছেন তিনি। তার ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে। এ ঘটনায় মার্কিনের ছোট ভাই উপজেলা যুবলীগের সদস্য শাহাব উদ্দীন শাবু বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে।
বাদি শাহাব উদ্দীন শাবু জানান, মার্কিনের মূল খুনী হামজালাল মামলার চার্জসীট থেকে বাদ যেতে প্রভাবশালী লোকজনকে ব্যবহার করে নানাভাবে তদবীর চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে হামজালালের বাবা খলিলুর রহমান মোটা অংকের টাকায় ৪জন মেম্বারকে দিয়ে সহকারী পুলিশ সুপারের কাছে মিথ্যা সাক্ষী দিয়েছেন। ওই মেম্বাররা সাক্ষী দিয়েছেন, মার্কিন হত্যার সময় হামজালাল পরিষদে চাল বিতরণ করছিলেন। কিন্তু পুলিশ অনুসন্ধান করে পেয়েছে, ওই দিন হামজালাল পরিষদেই যায়নি। তার প্রমাণ ওই দিন পরিষদের রেজ্যুলেশন খাতায় সব মেম্বারের স্বাক্ষর থাকলেও হামজালালের স্বাক্ষর নেই।
শাবু আরো জানান, এই মিথ্যা স্বাক্ষ্যসহ আরো কয়েকটি মিথ্যা তথ্য দিয়ে হামজালাল মামলার চার্জসীট থেকে বাদ যেতে নানাভাবে তদবীর শুরু করেছে। এই জন্য মোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছে।
শাবু বলেন, ‘হামজালালের মামলার চার্জসীট থেকে বাদ যাওয়ার চেষ্টা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। সে আগেও মোটা টাকার বিনিময়ে শুক্কুর হত্যা ও আবুল হোসেন হত্যা মামলার চার্জসীট থেকে বাদ গেছে। হামজালাল মামলা থেকে বাদ গেলে আমাদের বড় ধরণের ক্ষতি হবে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশসহ নানা জুলুম-নির্যাতন নেমে আসবে। এছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে পারে। তাই আমাদের পরিবারের অনুরোধ হামজালালকে মামলার চার্জসীট থেকে বাদ দেয়া যাবে না।’ হামজালালকে চার্জসীট থেকে বাদ না দিতে মার্কিনের পরিবার প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিপিসহ আরো অনেক দপ্তরে দরখাস্ত প্রেরণ করেছেন বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আসামী হয়ে পলাতক থাকলেও এখনো বহাল রয়েছে হামজালালের কালো ব্যবসার রাজত্ব। বর্তমানেও হামজালাল চট্টগ্রামে ও তাই ভাই ইউসুফ জালাল বাহাদুর সিলেটে বসে ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পিতা খলিলুর রহমান টেকনাফ বসে সাগর পথে ও সড়ক পথে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা চালান তাদের কাছে সরবরাহ করছে। একইভাবে মার্কিনের অন্য খুনি ছিদ্দিক ও তার পুত্র ফরিদ ঢাকায় বসে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আরো জানা গেছে, হামজালালের ইয়াবা ব্যবসা, মানবপাচার, ভূমিদস্যুতা, কালোবাজারি, চাঁদাবাজি করে চাঁদের গাড়ি চালক কোটিপতি বনে গেছে। সে জন্য তারা এখন আর কাউকে তোয়াক্কা করে না। কালো টাকা ব্যবহার করে শুক্কু ও আবুল আলম হত্যার মামলার মতো মার্কিনের মামলা থেকে বাদ যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।


শেয়ার করুন