মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মো. বোরহান উদ্দিন শাহেদ। উদীয়মান তরুণ উদ্যোক্তা। প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বর্তমানে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন। নিরলস শ্রম, ধৈর্য, সততা, স্বপ্ন আর কর্মকুশলতা দিয়ে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন কে কে অ্যাপারেল নামের একটি বায়িং হাউস। স্বপ্ন দেখেন সম্ভাবনাময় তরুণদের নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শিহাব উদ্দিন

ব্যবসায়ের শুরুটা কীভাবে?

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা ছিলেন চাকরিজীবী। চাকরিজীবীর ছেলে হিসেবে আমিও চাকরিজীবী হব, এটাই হওয়ার কথা ছিল আমার নিয়তি। সেই নিয়তিকে মেনে নিয়ে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করতে থাকি। একটা সময়ে অনুভব করলাম চট্টগ্রামের চেয়ে রাজধানী ঢাকাতেই চাকরির ভালো সুযোগ। সে ভাবনা থেকে চলে যাই ঢাকায়। ঢাকা গিয়েও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করি। সত্যি কথা বলতে কি তখন আমার মাথার মধ্যে একটি বিষয় কাজ করত, চাকরি তো অনেক রকম আছে, আমার এমন একটি চাকরি চাই যার মধ্যে ক্রিয়েটিভিটি আছে। যাতে চাকরি করে অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেই কোনো একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি।

বাবা যেহেতু গার্মেন্ট সেক্টরে জব করত তাই গার্মেন্টের মার্চেন্ডাইজিংয়ের প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল। সে আগ্রহ থেকেই ঢাকার একটি গার্মেন্টে মার্চেন্ডাইজার হিসেবে যোগ দেই। কাজ করতে করতে এ পেশার প্রতি বিশেষ ভালো লাগা শুরু হয়। মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করতে থাকি। বেশিরভাগ সময় অফিস টাইম শেষ হওয়ার পরও অফিসে বসে বাড়তি কাজ করতাম। কাজের প্রতি আমার আন্তরিকতা দেখে মালিক পক্ষ অফিসিয়ালি আমার কয়েক ধাপ প্রমোশনও দেয়। কয়েক বছর কাজ করার পর এ সেক্টরে বেশ অভিজ্ঞতাও অর্জন করে ফেলি। একটা সময় আবিষ্কার করলাম বাংলাদেশের পোশাক শিল্প পুরোপুরি নির্ভরশীল বায়িং হাউসের ওপর। সচরাচর গার্মেন্ট মালিকরা পণ্যের মার্কেটিং করেন না।

মার্কেটিংয়ের জন্য বায়িং হাউসের ওপর নির্ভর করতে হয়। চিন্তা করলাম মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা দিয়েই তো আমি পারি একটি বায়িং হাউস গড়ে তুলতে। এর পর লেগে গেলাম আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায়। ইন্টারনেটে শুরু করলাম মার্কেটিং। অনেক রাত না ঘুমিয়ে মার্কেটিং করতে হয়েছে আমাকে। দিন-রাত ইন্টারনেটে মার্কেটিং করতাম আর স্বপ্ন দেখতাম কোনো একদিন বড় বায়িং হাউসের মালিক হয়ে যাব। বেশ কিছুদিন এভাবে মার্কেটিং করার পর প্রথম একজন বায়ারের সাড়া পাই। বায়ারটি ছিল সুইডেনের। যিনি ছিলেন আমার বায়িং হাউসের প্রথম ক্রেতা। আমার ব্যবসায়ের সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন করে তিনি বাংলাদেশে আসেন এবং আমাকে বেশ কিছু পণ্যের অর্ডার দিয়ে যান। আমি যথাসময়ে শিপমেন্ট সম্পন্ন করি। এর পর জার্মানি ও ডেনমার্কের আরো বেশকিছু বায়ারের সাড়া পাই। এর পর থেকে আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই থেকে অদ্যাবধি আমি নিষ্ঠার সঙ্গে বায়িং হাউস পরিচালনা করছি।

আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত বলুন।

২০১১ সালে চট্টগ্রামে যাত্রা শুরু করে আমার স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান কে কে অ্যাপারেল। যার নামকরণ করা হয়েছে আমার শ্রদ্ধেয় বাবা-মায়ের (কামাল উদ্দিন ও কামরুন নাহার) নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে। আমার সাফল্যের পেছনে তিনজন মানুষের নিরন্তর অনুপ্রেরণা ছিল। তারা হলেন আমার গর্বিত বাবা-মা ও আমার সহধর্মিণী। আমার প্রতিষ্ঠান সুনাম ও নিষ্ঠার সঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানি করে আসছে। আমার প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতা, সততা বিদেশি ক্রেতাদের নজর কাড়ছে। বিশ্ববাজারে আমাদের পণ্য বেশ সমাদৃত।

আপনার ব্যবসায়ের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কি?

দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের একক প্রধান খাত হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প। এ শিল্পে এককভাবে নিয়োজিত আছে বৃহত্তম শ্রমশক্তি। দেশের বেকার মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আরো ব্যাপক ভূমিকা রাখার আকাক্সক্ষায় স্বপ্ন দেখছি চট্টগ্রামে একটি পোশাক শিল্প গড়ে তোলার। আশা করি, সবার সহযোগিতা ও দোয়া থাকলে আমার উদ্যোগ সফল হবে।

আপনার দৃষ্টিতে চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা কি?

দেশের অর্থনীতির মূল নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। বর্তমানে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাস সংকট। চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ও বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে। চাহিদার অর্ধেক গ্যাসে জোড়াতালি দিয়ে চলতে হচ্ছে চট্টগ্রামের শিল্প-কারখানাগুলো। চট্টগ্রামের গ্যাসের সংকট সমাধানে সরকারের দ্রুত বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

ভবিষ্যৎ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন।

আমাদের দেশের তরুণরা অনেক সম্ভাবনাময়ী। তারা অল্প সময়ে নিজেকে সুউচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে হলে প্রয়োজন সঠিক পরিচর্যা, কঠোর পরিশ্রম, ত্যাগ ও ধৈর্য। জীবনে হতাশ হলে চলবে না। আত্মবিশ্বাস আর স্বপ্ন নিয়ে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। কারণ মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। –সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।


শেয়ার করুন