মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারে মেধাশূণ্য তরুণ

facbook-400x320সিটিএন ডেস্ক:
বর্তমান সময়ে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক মাধ্যম ফেসবুক। মাত্রাতিরিক্ত ফেসবুক ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপাড়ায় আগের মতো মনোনিবেশ করতে পারছে না। ফলে মেধাশূন্য হয়ে পড়েছে তারা। ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেসবুক চালু হয়।
উইকিপিডিয়া তথ্য মতে, বর্তমানে এই ওয়েবসাইটটি সারাবিশ্ব ব্যবহার করছেন ৩০০ মিলিয়ন কার্যকরী সদস্য। এক সমীক্ষায় জানা গেছে ২১৩টি ফেসবুক ব্যবহারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫৬। বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।
সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলো সৃষ্টি করেছে নতুন একধরনের সামাজিক বাস্তবতা। মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজন যেমন- সম্পর্ক, সাহিত্য-সংষ্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি প্রায় সব বিষয়েরই সমন্বয় ঘটছে ফেইসবুকে।
সামাজে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তুলে ধরছে ফেসবুক। এর প্রভাবে সহজে জানা যাচ্ছে সমাজের প্রকৃত চিত্র। গত রোববার দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন ও খুলনার শিশুশ্রমিক রাকিব হত্যামামলায় ৬ ঘাতকের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথমে এ দুটি ঘটনা ফেসবুকে প্রচার হওয়ার কারণেই ব্যাপক আলোচনায় আসে। যার কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ফাঁসি হলো।
ফেসবুক ব্যবহারের পক্ষে শত শত যুক্তি থাকলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার বা অপব্যবহার হচ্ছে দিনদিন। আমাদের দেশে সম্প্রতি ন্যাক্কারজনক যে ঘটনাটি ঘটেছে, তাহলো সংখ্যালঘু বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের পবিত্র উপাসনালয় ও তাদের ঘর বসতিতে আগুন লাগিয়ে দেয়া। মূল কারণ উদঘাটনে যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তাহলো, ঘটনাটি ঘটেছে ফেসবুকের অপকল্যাণে। কেউ একজন ঘৃণ্য উদ্দেশ্য চরিতার্থে ফেসবুকে উস্কানিমূলক অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ছবি পোস্ট করেছে, এবং সংঘবদ্ধচক্র সে মোতাবেক সাধারণ মানুষকে ফুসলিয়ে নাশকতা সৃষ্টি করেছে।
সামাজিক একটি নেটওয়ার্ককে ব্যবহার করা হচ্ছে নাশকতামূলক কর্মকান্ডে। আমেরিকায় বসে অপকর্ম করা নাফিস নামক ছেলেটির চেহারা দুনিয়ার মানুষের পরিচিত করিয়েছে ফেসবুক। শুধু নাশকতামূলক কর্মকা-ই নয়, ব্যক্তিবিশেষের চরিত্রনাশ, হত্যা হুমকি, পারিবারিক ভাঙ্গন, জালিয়াতি, কিডন্যাপ এর মত সামাজিক অপরাধ ঘটছে জনপ্রিয় এই সামাজিক নেটওয়ার্কিং এর দ্বারা।
মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপাড়ার আগের মতো মনোনিবেশ করতে পারছে না। পড়ার চেয়ে ফেসবুকে বেশি মনোনিবেশ হওয়ার ফলে স্কুল পরীক্ষা, ভর্তি পরীক্ষাসহ নানা পরীক্ষায় তারা খারাপ করছে।
অন্যের নাম, ছবি ব্যবহার করে ফেইক আইডি খুলে সমাজের হতাশাগ্রস্ত মানসিক রোগীরা আশ্রয় নিয়েছে ফেসবুক নামক সামাজিক এই ওয়েবসাইটে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার ৯ নভেম্বর ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পাস করেছেন ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। পরীক্ষায় ১ হাজার ৪৬৫টি আসনের বিপরীতে মোট ৯০ হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার পাশের হার ১৪.৬৮ শতাংশ। ‘গ’ ইউনিটের ১৭.৫৬ শতাংশ এবং ‘ক’ ইউনিটের ২০ দশমিক ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এই পাশের হার গত কয়েক বছরের তুলনায় কম।
ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ল্যারি ডি রোজেন আমেরিকাতে পরিচালিত এক জরিপে জানা যায়, যেসব টিনএজার ফেসবুক ব্যবহার করে, তারা আত্মপ্রেমিক বা আত্মবিলাসী হলেও যারা ফেসবুক ব্যবহার করেন না তাদের চেয়ে অনেক বেশি সহমর্মী।
এই সহমর্মিতা তারা বাস্তব জীবনেও প্রয়োগ করছে। আবার ইতিবাচকতার বিপরীত চিত্রও অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে। ২০০৯ সালে এক হাজার ৩০ জন মা-বাবার উপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, শিশু ও টিনএজারদের মধ্যে যারা গণমাধ্যমে (অনলাইন ও অফলাইন) বেশি সময় ব্যয় করে, তাদরে উদ্বেগ-দুশ্চিন্তা, পেটব্যাথা ও অসুস্থতার জন্য স্কুলে অনুপস্থিতির মাত্রা বেশি।
এই জরিপ কিন্তু এই ইঙ্গিত দেয় যে, শারীরিক ক্ষেত্রে টিনএজার ও তরুণ প্রজন্ম নিয়ে ঝুঁকিটা একটু বেশিই। কারণ এরকম আরও গবেষণায় টিনএজার ও তরুণদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, এদের মধ্যে যারা বেশি সময় ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের মধ্যে আত্মকেন্দ্রিকতা, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেশি।
কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কর্তৃপক্ষই ১৩ বছরের নিচের শিশুদের একাউন্ট খোলার অনুমতি প্রদান করে না। তাতে কি? অসত্য তথ্য দিয়ে তা অহরহ ব্যবহার হচ্ছে।
পরিসংখ্যান বলে, প্রায় ৭৫ লাখ শিশু-কিশোর বর্তমানে ফেইসবুকে ব্যবহার করছে। এদের মধ্যে ৫০ লাখ শিশুর বয়সই ১০ বছরের কম। আরও ভয়াবহ ব্যপার হলো, এসব শিশুর অভিভাবকরা জানেনই না তাদের শিশুসন্তান কীভাবে ফেসবুকে সময় অপচয় করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ প্রভৃতির হাত ধরে সেগুলো মুহুর্তেই পৌছে যাচ্ছে হাজারো মানুষের কাছে। এখানে নেই কোনো সেন্সরশিপ, নেই স্থান সংকুলানের বাড়তি ঝামেলা।
যেকোনো প্রযুক্তির ভাল-মন্দ আছে, থাকবে কিন্তু খারাপ পরিহার করে ভালো দিকটিকে গ্রহণ করাই কাম্য। সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার জন্য তৈরি যে মাধ্যমটি যেন গ্রাস না করে ধর্মান্ধ জঙ্গীবাদ, মতলববাজ অসুস্থ মানুষ। সামাজিক অস্থিরতা তৈরিতে না হয় অন্যতম হাতিয়ার।


শেয়ার করুন