ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে শঙ্কায় ভোটাররা

মাতারবাড়ী নির্বাচনী মাঠে চষে বেড়াচ্ছে ৩ চেয়ারম্যান প্রার্থী

cccccএ.এম হোবাইব সজীব

আর মাত্র ৯ দিন পর আগামী ২২ মার্চ মহেশখালীর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে মাতারবাড়ীতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাষ্টার মো: উল্লাহ। প্রধান দুই দলের ধানের শীষ ও নৌকার প্রতীক নিয়ে রয়েছেন দুই প্রার্থী যথাক্রমে বিএনপির বাবর চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের এনামুল হক রুহুল। প্রত্যেক প্রার্থী নিজেদের পছন্দ প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটযুদ্ধে নেমে শের্ষ মুর্হুতের নিঝুঁম প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার মাতারবাড়ীতে আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের নিকট প্রর্তীকের চেয়ে ব্যক্তির মূল্যয়ন পাচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ব্যানারে এ প্রথম অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউপি নির্বাচন। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রতাপের কারণে সঠিকভাবে সাধারণ ভোটাররা ভোটাধিকার কতটুকু প্রয়োগ করতে পারে তা নিয়ে মাঠে-ঘাটে চলছে কল্পনা-জল্পনা।
জানা গেছে, মহেশখালীর নির্বাচন চলতি মাসের ২২ মার্চ। আসন্ন এ নির্বাচনে মাতারবাড়ীতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিএনপির নেতা বাবর চৌধুরী (ধানের শীষ) ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হক রুহুল (নৌকা)। বিদ্রোহী প্রার্থী মাষ্টার মো: উল্লাহ (আনারস)। দেশের এ প্রধান দুই দলের দুই প্রার্থী হলেও ব্যবধান রয়েছে একটাই। সেটা হলো ক্ষমতাসীন দল আর ক্ষমতাবিহীন দল। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এনামুল হক রুহুল ক্ষমতাসীন দলের আর বাবর চৌধুরী ক্ষমতাবিহীন দলের। এবং মাষ্টার মো: উল্লাহ আ.লীগ নেতা হলেও নাগরিক কমিটির ব্যানারে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন অংশ নিয়ে তৃণমুলে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। ফলে গেলো কয়েক দফা উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যালট ছেড়াছেড়ি, কেন্দ্র দখল ও ব্যালট পেপার ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ থাকায় সন্দেহ ও আশঙ্কা ভর করছেন মাতারবাড়ীর সাধারণ ভোটারদের উপর, তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কতটুকু ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন গোলঁক ধাঁধায় পড়েছেন। তবে আসন্ন এ নির্বাচনে মহেশখালীর অন্যন্য ইউনিয়নে প্রর্তীক দেখে ভোট দিলে এখানে ভোটারদের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তি প্রধান্য পাচ্ছেন। প্রধান্য পাচ্ছে সৎ ভদ্র ন¤্র লোক। ভোটাররা ভোট দেবেন প্রার্থী দেখে, প্রর্তীক দেখে নই। উপজেলা যুবদলের সিনিয়র-সহসভাপতি ও মাতারবাড়ী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি হোছাইন মাসুম ও স্থানিয় প্রবাসী বিএনপির নেতা মো: উসমান বলেন, আওয়ামীলীগ গত সাত বছর ধরে ক্ষমতা থাকলেও কতিপয় নেতাকর্মীদের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ অনেকটা অতীষ্ঠ। ফলে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভে সাধারণ মানুষ ব্যালটের মাধ্যমে ধানের শীষ প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বর্হিপ্রকাশ ঘটাতে পারে। মাতারবাড়ী যুবলীগ নেতা শানিক জানান, আসন্ন এ নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে প্রার্থী হিসেবে ব্যক্তি প্রধান্য পাচ্ছেন। আমরা মার্কা বুঝিনা, যাকে সুখে দুঃখে কাছে পাবে তাকে ভোটটা দেব। মাষ্টার মো: উল্লাহ’কে বিপদের সময় কাছে পাব তাই তাকেই ভোটাটা দেব।
ভোটারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী যতই যোগ্য হিসাবে নিজেকে তুলে আনতে চেষ্টা করলেও সুষ্টু নির্বাচন হলে সৎ ও যোগ্যর মধ্যে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে যিনি প্রার্থী হচ্ছেন তিনি ও বিদ্রোহী প্রার্থী আনারস প্রর্তীকের প্রার্থীর মধ্যে যে কোন একজনের প্রার্থী বিজয় ঠেকানো যাবে না। অন্যদিকে এমনিতে মাতারবাড়ী আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত হলে ও বর্তমান নৌকা প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যানের দুর্নাম রয়েছে ভূরি ভূরি এ ইউনিয়নে। কয়েকজন ভোটার নাম প্রকাশ না করার সত্বে জানান, মাতারবাড়ী ইউপিতে আওয়ামী লীগের টিকেট নৌকা নিয়ে প্রার্থী এনামূল হক রুহুল ব্যক্তি হিসাবে এলাকায় ব্যাপক দুর্ণীতি স্বজনপ্রীতি, নারী কেলেংকারীর অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রথম দিনে নির্বাচনী আচারণবিধির ভঙ্গ করায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। লোভ লালসা কোন কিছু তিনি সামলাতে পারে নাই। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় তিনিসহ দলে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন সব বিতর্কই তার উপর বর্তাবে নির্বাচনে। অন্যদিকে বিএনপির টিকেট ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাবর চৌধুরী দলের ভেতরে বাইরে অনেকের মধ্যে প্রথমে মনমালিন না থাকলেও বর্তমানে দলীয় লোকজন এক হয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে সর্বাত্বক সহযোগিতা দিতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। কারণ নির্যাতনের শিকার নেতাকর্মীরা কখনো আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রাথীকে ভোট দেবে বলে জনশ্রুতি বলছেনা। বিএনপি বা ২০ দলপন্থী ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারলে বাবর চৌধুরী ন¤্র ভদ্র লোক হিসাবে এলাকায় পরিচিত থাকায় নৌকা প্রতীক দেখলেই বিস্মিত হয়ে ধানের শীষে ভোট দিতে বাধ্য হবেন। অনেক সাধারণ ভোটারের বক্তব্য, সর্বশেষ আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতীক বিষয় নন, প্রার্থী আসল ফ্যাক্টর। পাশাপাশি সুষ্টু নির্বাচন নিশ্চিতে শঙ্কায় ভোটাররা। তবে তৃণমূলে বিদ্রোহী প্রার্থী মাষ্টার মো: উল্লাহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের একটি অংশ ও সমর্থকেরা তার পক্ষে হয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করে প্রচানায় অংশ নেওয়ায় আনারস প্রর্তীকের প্রার্থী মাষ্টার মো: উল্লাহ জয়ের মালা পড়তে পারেন বলে মাতারবাড়ী বাসীর মধ্যে আওয়াজ উঠেছে। তবে দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া মাষ্টার মো: উল্লাহ’র জনশ্রুত দেখা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর ভরাডুবি হওয়ার সম্ভাবনায় আ.লীগের উপজেলা-জেলা পর্যায়ের শীর্ষ স্থানিয় নেতারা নানা রকম চাপ প্রয়োগ করছেন বলে সূত্র প্রকাশ।
জানতে চাইলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বাবর চৌধুরী বলেন, কোন ধরণের হস্তক্ষেপ ছাড়াই মাতারবাড়ীবাসী নিরাপদে ভোট দিতে পারবে। এই জন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। জনগন তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারলেই জনগনের বাবর চৌধুরী ইনশল্লাহ বিজয় অর্জন করতে পারবেন। আনারস প্রতীকের প্রার্থী মাষ্টার মো: উল্লাহ বলেন, আমি জনগণের কাছে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, তারা আমাকে নির্বাচিত করলে মাতারবাড়ীকে মেগা সিটিতে রূপ দেওয়ার শেষ চেষ্টা করব। আমার সর্বোচ্চ প্রদক্ষেপ থাকবে পক্ষ-বিপক্ষের কোন মানুষ যেন অধিকার ও ন্যায়বিচার বঞ্চিত না হয়। সেই সাথে শিক্ষা,সংস্কৃতি, ক্রীড়া ক্ষেত্রে অগ্রণী কাজ করবো।


শেয়ার করুন