মাতামুহুরী নদী পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

mataআহমদ গিয়াস :
মিয়ানমারের আরাকান পর্বতমালা বা ইউমা রেঞ্জ থেকে উৎপন্ন হয়ে বান্দরবান-কক্সবাজারের অসংখ্য ছোট বড় পাহাড় অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগর চ্যানেলের সাথে মিলিত হয়েছে কক্সবাজারের অন্যতম প্রধান নদী মাতামুহুরী। সু-উচ্চ দিগন্তজোড়া সবুজ পাহাড় ও উপত্যকা চিরে বয়ে চলা এ নদীর দীর্ঘ গতিপথের বাঁকে বাঁকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এখানকার নিসর্গ দেখে বিমুদ্ধ দেশি-বিদেশি পর্যটক। দার্জিলিং এর চেয়ে কম কিসে আমাদের মাতামুহুরী রেঞ্জ? এমনই মন্তব্য ওই অঞ্চল ঘুরে আসা প্রকৃতি প্রেমিকদের। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, নিরাপত্তার বিষয়ে নিশ্চিয়তাসহ এই অঞ্চলকে ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা চালু করা গেলে মাতামুহুরী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।
আরাকান পর্বতমালা থেকে নীচে নেমে আসা মাতামুহুরী নদী বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর দীর্ঘ ২৮৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেলের সাথে মিলিত হয়েছে কক্সবাজারের সবচেয়ে দীর্ঘ নদী মাতামুহুরী। আর নদীর সুদীর্ঘ পথের সু-উচ্চ পাহাড় ও উপত্যকার মাঝে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য লোকালয়; যেখানে পাহাড়ী ও বাঙালী জনগোষ্ঠীর আদি জীবনধারা বহমান। আর এসব বৈশিষ্টই কাছে টানছে পর্যটকদের। বর্তমানে এই অঞ্চলটি পাহাড়ী সড়ক অথবা নদীপথে একটি অপরটির সাথে সংযুক্ত থাকায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার দিন দিন উন্নতি ঘটায় এর পর্যটন সম্ভাবনা জোরদার হয়ে ওঠছে। প্রাথমিকভাবে সীমিত এলাকা নিয়ে এই অঞ্চলের পর্যটন সম্ভাবনার সূচনা করা যেতে পারে বলে মনে করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
মাতামুহুরী তীরের সন্তান, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা জামাল মনে করেন- প্রাথমিকভাবে মাতামুহুরী নদীর মানিকপুর থেকে লামা পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকাকে ঘিরে মাতামুহুরী ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের সূচনা হতে পারে।
তিনি বলেন- কক্সবাজারের মানিকপুর থেকে বান্দরবানের লামা পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর দু’তীরে রয়েছে সু-উচ্চ পাহাড়। পাহাড়ে রয়েছে নানা জাতের চিরহরিৎ বৃক্ষ। পাহাড়ের মাঝখানে এঁকেবেঁকে চলা এই নদীর দু’তীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার। পাহাড়ের ঢালে অথবা উপত্যকায় রয়েছে বাঙালী লোকালয় ছাড়াও মার্মা ও মুরং পল্লী। নৌ পথে এসব লোকালয় একটি অপরটির সাথে যুক্ত। রয়েছে নৌ-পথের পর্যাপ্ত পরিবহণ সুবিধাও। এই সুবিধার আরো একটু উন্নতি ঘটিয়ে প্রাথমিকভাবে সীমিত আকারে এখানে গড়ে ওঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র।
একই বক্তব্য সমর্থন করেন কক্সবাজারের বমু বিলছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ও লামা ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক তমিজউদ্দিন। তার মতে, এখানে নৌকা ভ্রমণ করতে খুবই ভাল লাগবে পর্যটকদের। তাই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে লামা শহরের উপকন্ঠে একটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রের সূচনা করতে যাচ্ছেন বলে জানান।
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ মোস্তফা জামাল ও লামা পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম জানান, মাতামুহুরী নদীকে ঘিরে জেলা পরিষদ ও পৌরসভার উদ্যোগে একটি প্রকল্প তারা হাতে নিচ্ছেন। তবে মাতামুহুরীর কিছু অংশ কক্সবাজার জেলাতে পড়ায় দুই জেলার মধ্যে সমন্বয় সাধন না করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন।
চকরিয়ার মাতামুহুরী তীরের সন্তান ও চারু শিল্পী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান- ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ভ্রমণপিপাসুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে গত কয়েক বছর আগে মাতামুহুরী নদী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের একটি সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে। সকলেই এর সম্ভাবনার কথা বলেছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন ( টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান বলেন- মাতামুহুরী নদী তীরের সু-উচ্চ পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে মনে করে হয় আমরা দার্জিলিং এর চেয়ে কম কিসে?
তিনি বলেন- লামা থেকে মানিকপুর পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীকে ঘিরে ইকো-ট্যুরিজম সুবিধা চালু করা গেলে মাতামুহুরী কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প এই অঞ্চলের পর্যটন শিল্পে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।
জানা যায়, গত কয়েক শত বছর ধরে মাতামুহুরী নদীর মানিকপুর থেকে লামা পর্যন্ত নৌ-সার্ভিস রয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে এই যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান। ভ্রমণ করতে হলে মানিকপুর থেকে উজানে লামা সার্ভিসের বোট ধরতে হয়। সময় লাগে এক থেকে দেড়ঘন্টা। আর ভাটায় ফিরতে সময় লাগে ঘন্টাখানেক। ভাড়া ৩০ টাকা।


শেয়ার করুন