মাঠে আ.লীগ অন্দরে বিএনপি

আমাদের সময়.কম ::
ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনি প্রচারণার প্রথমদিনই ক্ষমতাসীন দলের মেয়র প্রার্থীরা আদাজল খেয়ে মাঠে দৌড়ানো শুরু করেছেন। অপরদিকে বিএনপি এখনও প্যাভিলিয়নেই। মামলার প্যাঁচমুক্ত না হওয়ায় ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে (ডিএনসিসি) বিএনপি সমর্থিত প্রভাবশালী প্রার্থী মির্জা আব্বাস লোকচক্ষুর অন্তরালে। ঢাকা উত্তর সিটিতে (ডিএসসিসি) বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী, প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর কপালেও শনিরদশা। তার মনোনয়ন বৈধ করতে দলটি আইনি লড়াই অব্যাহত রাখলেও মামলার আসামি হিসেবে তিনিও পলাতক।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন। তাদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয় জনতার উপস্থিতি দেখা গেছে। বিএনপি সিটি নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রচারের দিনটিতে দলটির কার্যক্রম ছিল শূন্যের কোঠায়। শুধু মেয়র প্রার্থী নয়, দুই সিটির কোথাও বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরদেরও গণসংযোগে দেখা যায়নি।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ও নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী আসাদুজ্জামান রিপন জানিয়েছেন, দল থেকে সমর্থন পাওয়া মির্জা আব্বাস প্রকাশ্যে এলে ৯ এপ্রিলের পর মাঠে নামবেন তারা। আর নিজে নির্বাচনি প্রচারে না নামার কারণ হিসেবে মির্জা আব্বাসের দলীয় সমর্থন পাওয়াকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে, গতকাল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মির্জা আব্বাসের আইনজীবী জানিয়েছেন, জামিন না পাওয়ায় তিনি গণসংযোগে অংশ নিতে পারছেন না।
জানা যায়, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারার অভিযোগ রয়েছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল ২৪টি। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে ১৫টি দুর্নীতির মামলাও চলমান রয়েছে। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় বেশ কয়েকটি মামলারও আসামি তিনি।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এসব মামলায় গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকা আব্বাস উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনি প্রচারে নামার চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালত জামিন মঞ্জুর করলেই কেবল তাকে স্বশরীরে নির্বাচনের মাঠে দেখা যেতে পারে। অন্যথায় হয়তো অন্তরালে থেকেই নির্বাচন করতে হবে আব্বাসকে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান রিপন আরও বলেন, মির্জা আব্বাস আমার সিনিয়র ও স্থায়ী কমিটির সদস্য। শত নাগরিক কমিটির পক্ষে তাকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখানে দলের একটি অনুমোদন আছে বলে আমি মনে করি। যাই হোক মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন পার হয়নি। প্রত্যাহারের সময়সীমার মধ্যেই অনুমোদিত প্রার্থীর পক্ষে দলের সবাই পুরো শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমাদের এখানে যারা মনোনয়নপত্র নিয়েছেন, জমা দিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই দলের দায়িত্বশীল নেতা। সুতরাং দলের শৃঙ্খলা সবাই রক্ষা করবেন।
‘তাহলে প্রচারণায় না নেমে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা কোন কৌশলে এগোচ্ছে’Ñ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে কী কৌশল নেওয়া হয়েছে, সেটা এমাজউদ্দীন সাহেব বলতে পারবেন। কারণ প্রার্থী উনি ঘোষণা করেছেন।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত একক প্রার্থীর বিপরীতে বিএনপির চার নেতা ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে এখনও প্রার্থিতায় রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। পাশাপাশি বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সাবেক সদস্যসচিব আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপনও নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। কাজী আবুল বাশার নামে এক প্রার্থীও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে জানা গেছে। তারা কেউই গতকাল কিংবা এর আগে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেননি।
দক্ষিণের চেয়ে ঢাকা উত্তরে প্রার্থী নিয়ে আরও কূলহীন সাগরে ভাসছে বিএনপি। প্রচার ছাড়াই দক্ষিণে প্রার্থীর বিষয়ে ভোটারদের নিশ্চিত করতে পারলেও, উত্তরের ভোটাররা তাদের প্রার্থীর বিষয়ে অমাবশ্যার রাতে। আবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র চূড়ান্তভাবে বাতিল হওয়ার পর তার ছেলে তাবিথ আউয়ালের ক্ষেত্রেও ঋণখেলাপির অভিযোগ ওঠা এবং বিকল্পধারার প্রার্থী মাহী বি. চৌধুরীকে বিএনপির সমর্থন দেয়া নিয়ে গুঞ্জনে ঠাঁসাঠাঁসি উত্তরের নির্বাচনি হাওয়া। অবশ্য গতরাতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার তাবিথ আউয়ালের মনোনয়ন বৈধই রেখেছেন। মিন্টু ব্যর্থ হলে এই দুজনের মধ্যে একজন পাবেন উত্তরে বিএনপির সমর্থন। তারা দুজনও এখন পর্যন্ত গণসংযোগে পা মাড়াননি।
আন্ষ্ঠুানিক প্রচারণা শুরু হয়ে গেলেও নিজ দলের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এরকম নীরবতা আর অনিশ্চয়তায় হতাশ হয়ে পড়েছে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা। অবশ্য খালেদা জিয়া নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নামলে হতাশা কেটে যাবে বলে আশাবাদী নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী ছাড়াও অন্য ছোট দলের সমর্থনপুষ্ট সবাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নিজ নিজ প্রচার শুরু করেছে।


শেয়ার করুন