মহেশখালী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্য কোহেলিয়া নদীতে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

নদীই বাংলাদেশের প্রাণ । সে বৈশিষ্ট থেকে বাইরে ছিল না কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর কোহেলিয়া নদী । মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী-ধলঘাটা ইউনিয়নের মাঝখানে অবস্থিত কোহেলিয়া নদী । আদিকাল থেকে যুগ যুগ ধরে জোয়ার-ভাটায় আপন গতিতে ভরা যৌবনে প্রবাহিত হত কোহেলিয়া নদীর স্রোত । সাম্প্রতিক সময়ে মাতারবাড়ী নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের দুর্গন্ধ যুক্ত বৈর্জ্য ফেলা হচ্ছে কোহেলীয়া নদীতে । কোহেলিয়া নদী এখন মৃত প্রায় , শুধু কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ।

সময়ের পরিক্রমায় ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী পুরানো এই কোহেলিয়া নদী বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে । মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য মাতারবাড়ীর দক্ষিণে ১৪’শ ১৪ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে বর্তমানে সেখানে মাটি ভরাট করে প্রকল্পের অবকাঠামোগত কাজ চলছে দ্রুতগতিতে । প্রকল্পে যাবার রাস্তা নির্মাণের নামে নদীর একটি বিরাট অংশ ভরাট করে ফেলা হয়েছে । তার উপর সম্প্রতি চলমান প্রকল্পের বিভিন্ন দুষিত বর্জ্য ও পলি মাটি গুলো পাইপের মাধ্যমে সরাসরি কোহেলিয়া নদীতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে । এতে দিন দিন ভরাট হয়ে যাচ্ছে এ নদীটি । অন্যদিকে নদীর পানিও ঘোলাটে এবং দুষিত হচ্ছে ব্যাপক হারে । নদী ভরাটের কারনে নদীর উপর চলাচল কারী ইঞ্জিনচালিত লবণের বোট ও বিভিন্ন ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে । তাই বেকার হয়েছে এসব নৌ-যান এর মালিক সহ মাঝিমাল্লা ও শ্রমিকরা । অপর দিকে নদীর পানি দুষিত হওয়ায় সামুদ্রিক মাছ সহ মারা যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী । এতে বেকারত্ব জীবনযাপন করছে এ নদীর উপর নির্ভরশীল কয়েক হাজার জেলে । স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন , মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে এখনো দুষিত কয়লা ব্যবহার করা হচ্ছে না । কয়লা ব্যবহারের আগেই প্রকল্পের বৈর্জ্য গুলো যেভাবে দুষণ চড়াচ্ছে , প্রকল্পের কাজ শেষে কয়লা পুড়ানো হলে আশেপাশের নদী ও সমুদ্রের পানি দুষণে ভয়াবহ আকার ধারন করবে এমনটি মনে করেন তারা ।

প্রকাশ্যে নদী ভরাটের দৃশ্য দেখে তারা মর্মাহত হয়েছেন । তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা বলেছেন , মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের নাম দিয়ে কোহেলিয়া নদী ভরাট করে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে । সাথে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পলি মাটি ও দুর্গন্ধ যুক্ত বৈর্জ্য নদীর সাথে মিশে পানি ঘোলাটে বা দূষিত হচ্ছে । যার কারণে একদিকে যেমন নদী ভরাট হচ্ছে , অন্যদিকে দখলের কারনে ছোট হয়ে যাচ্ছে এ নদী । এবং কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বৈর্জ্য ফেলে নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে । এভাবে দুষণ ছড়াতে থাকলে মারাত্মকভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে বলেও জানান তারা । এমন কি এসব এলাকার মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দিতে পারে বলেও মন্তব্য করেন পরিবেশবাদিরা ।

পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে নদী দূষণ করে উন্নয়ন করা হচ্ছে না । তারা নদী ভারাট ও দূষণ যুক্ত বৈর্জ্যে নিক্ষেপ করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন । মাতারবাড়ীতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পলি মাটি নদীর পানির সাথে মিশে গিয়ে বর্তমানে নদীর পানি ঘোলাটে এবং দূষিত হওয়ায় নদীর দু’পাশে প্রায় অর্ধশত চিংড়ি প্রজেক্টে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে মাছের পোনা সহ নানা প্রজাতীর মাছ মারা যাচ্ছে । এ কারণে চিংড়ি প্রজেক্টের ইজারাদারদের প্রতি বর্ষা মৌসুমে শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় । তাই অনতিবিলম্বে কোহেলীয়া নদীর উপর দুষিত বৈর্জ্য ফেলা বন্ধ করা সহ অবৈধ দখলদারের হাত থেকে কোহেলীয়া নদী উদ্ধারের দাবী জানান মহেশখালীবাসি । এবিষয়ে জানতে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরে একাধিকবার ফোন করেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


শেয়ার করুন