মহেশখালীতে বর্গাচাষিরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়া বিক্ষোভ

3735da92-808b-4966-8827-c967faa41f63হারুনর রশিদ,মহেশখালী

মহেশখালীতে গ্যাস সঞ্চালন লাইন এ অধিগ্রহণকৃত জমির, চলতি মৌসুমে লবণ মাঠের বর্গাচাষিরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়া বিক্ষোভ করেছে। আর এই ভিক্ষুদ্ধ বর্গা লবণ চাষিদের আন-অফিসিয়ালী ক্ষতিপূরনে আশ^াস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাধারী প্রতিষ্টান।
মহেশখালীতে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন হচ্ছে গ্যাস সঞ্চালন লাইন। গ্যাসের জাতীয় চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত এসব গ্যাস নৌপথে পরিবহনের জন্য সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে জাতীয় গ্রিডে আমদানীকৃত গ্যাস সঞ্চালনের জন্য মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক, বড় মহেশখালী, কুতুবজোম ও কালারমারছড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি মৌজায় গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজ আরম্ভ করেছে। তবে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরন পায়নি জমির মালীকরা। এই নিয়ে জমির মূল মালীক ও বর্গাচাষীদের ক্ষোভের সঞ্চার বিরাজ করছে।
অপরদিকে গ্যাস সঞ্চালন লাইন মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক, বড় মহেশখালী, কুতুবজোম ও কালারমারছড়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে ছনুয়া বাঁশখালী হয়ে আনোয়ারা দিয়ে চট্রগ্রাম পর্যন্ত যাচ্ছে বলে সুত্রে জানা যায়। বর্তমানে অধিগ্রহনের আওতায়পড়া এলাকায়, গ্যাস সঞ্চালনের লাইন স্থাপনের জন্য কাজ শুরু করে বিভিন্ন স্থানে গর্ত করে কূপ খনন করা হচ্ছে। খননকৃত ওই কূপে বসানো হবে সূ-প্রশস্ত পাইপ।
গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বিপিসির অধীনস্থ সংস্থা জিটিসিএল ওই কাজ বাস্তবায়ন ও তদারকি করছে। ঐ প্রকল্পের জন্য প্রায় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও দেয়া হয়েছে। মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম আনোয়ারা পর্যন্ত প্রায় ৯৫ কি.মি গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপন হবে। প্রতিদিন ৫শ মিলিয়ন ঘনফুট তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ঐ লাইন দিয়ে সরবরাহ করা হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণের জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গ্যাস লাইনের কাজ শুরু হলেও ক্ষতিপূরনের টাকা মিলেনি জমির মূল মালীকদের কপালে–
উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ধলঘাট পাড়া থেকে গ্যাস লাইন স্থাপন কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে। স্থানীয় ভূমির মালিকরা জানান, তারা জমি অধিগ্রহণের নোটিশ পাওয়ার আগেই গ্যাস লাইন এর কাজে নিয়োজি ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান তাদের কাজ শুরু করেছে। ২০১২ সালে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করলেও তা জমির মালিকেরা জানেনা এবং এখনো পর্যন্ত ক্ষতি পূরণের টাকাও মালিকরা পায়নি। অপরদিকে বড় মহেশখালী, কুতুবজোম ও হোয়ানকের হাজার হাজার লবনচাষীর সাথে গ্যাস লাইন স্থাপন নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছে। তারা কোন ধরণের ক্ষতিপূরণ ছাড়া গ্যাস লাইন স্থাপন কাজ বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জমির মালিক ও লবন চাষীরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের বরাবরে লিখিত ভাবেও অবহিত করেছে জানা গেছে। চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারী কাজ বন্ধের দাবীতে এলাকার বহু লবন চাষী বিক্ষোভ করে এবং কালাইয়ের ঘোনা, নাইজ্যর ঘোনা, আইল্যার ঘোনা, ফকিরাগোধা ঘোনা, মাইল্যার ঘোনা, ফারিঘোনা, আতিক্যা খালী ঘোনা, টেইট্টা ঘোনা, নোয়াঘোনা ও বইদ্যার খাল ঘোনায় লবনচাষীরা চলমান কাজ বন্ধের জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিল ওই এলাকায়। এ সময় উত্তেজিত লবন চাষীদের বিক্ষোভ থামাতে গ্যাস লাইন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেন, চাষীদের ক্ষতি পুরণ না পাওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাকা হবে এবং উভয় পক্ষের আলোচনা সাপেক্ষে পূণরায় কাজ শুরু হবে বলে জানায় ওই সময়।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার মোঃ শাহজাহান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বর্তমানে ওই এলাকায় গ্যাসলাইনের শুরু হওয়া কাজ আপাত বন্ধ রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ না পাওয়া পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার দাবীতে চাষীরা তারা বিক্ষোভ সমাবেশ অব্যাহত রাখবে। ওই এলাকার একাধিক লবন চাষী অভিযোগ করেছেন, তারা জমির মালীকদের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে লবন উৎপাদন করছে এবং তারা প্রতি কানিতে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা মূলধন দিয়েছে। গ্যাস লাইন হচ্ছে লবন মাঠ চিড়ে গর্ত করে। এতে মাঠকে বিভক্ত করা হয়েছে। এতে কোন ধরণের লবন উৎপাদন সম্ভব নয়। এতে তাদের প্রায় হাজার হাজার একর লবন মাঠে লবন উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে। অপরদিকে কাজের জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে বাধ তৈরী করতে হবে। ফলে পানি চলাচলের মুখ বন্ধ হবে। এতে প্রায় কয়েক হাজার একর লবন মাঠে লবন উৎপাদন একেবারেই ব্যাহত হবে। চাষীরা দাবী করেছেন, লবন উৎপাদন মৌসুম বন্ধ হওয়া ছাড়া ঐ কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এই ব্যাপারে তারা জেলা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
হোয়ানক, বড় মহেশখালী, কুতুবজোম ও কালারমারছড়ার লোকজন জানিয়েছেন, তারা কোন ধরণের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে গ্যাস লাইনের কাজ শুরু করে দিয়েছে যেনতেন ভাবে। আমরা লবন চাষের পাশাপাশি বিপুল এলাকায় ধান, মাছ ও চিংড়ী আবাদ করছি এখানে। এই অবস্থায় কাজ শুরু হলে বেকার হয়ে পড়বে অসংখ্য দরিদ্র লবন চাষী। এদিকে গ্যাস লাইন সঞ্চালন নিয়ে মহেশখালীর জনগণ ফুঁসে উঠেছে। উপযুক্ত ক্ষতি পূরণ না পাওয়ায় তারা চরম ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত হয়েছে। এই নিয়ে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘাতের আশংকা করছে সচেতন মহল। জমি মালিকদের বক্তব্য, তারা গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনের বিপক্ষে নয় পক্ষে।
জেলা অধিগ্রহণ শাখা থেকে ১৯/০১/২০১৬খ্রি: তারিখে জমির ক্ষতিপূরনের জন্য ৭ধারা নোটিশ জারি করা হলেও ক্ষতি পূরনের টাকা জমির মালীকরা না পাওয়ায়, গ্যাস লাইন সঞ্চালণের চলমান কাজ নিয়ে বিরোধীতার মুখে পড়েছেন কাজ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে মহেশখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরনের জন্য ৭ধারা নোটিশ জারিকরা হয়ে এবং জমিরমূল মালীকরা ক্ষতিপূরনের টাকা পাবে। আর বর্গাচাষিদেরকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাধারী প্রতিষ্টান আন অফিসিয়ালী ভাবে ক্ষতিপুরন দেওয়ার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। স্থানীয় জন প্রতিনিধি,জমিরমালীক ও বর্গাচাষিদের নিয়ে আলোচনার ভিত্তিত্বে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান। ওই এলাকায় গ্যাস লাইন স্থাপনের কাজে যাতে জনগনের কোন ধরনের ক্ষতিনা হয় , সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং বিষয়টি উর্দ্ধত কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।


শেয়ার করুন