মহেশখালীতে অস্ত্রের মহড়া: রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা

picer-1-(2)এ.এম হোবাইব সজীব:
অনেকের পরনে হাফ প্যান্ট আবার অনেকের পরনে পুল প্যান্ট, কেউ গেঞ্জি গায়ে, কারো পরনে শার্ট, আবার অনেকের পরনে পুলিশ,বিজিবির মতো পোশাক। সবার মাথায় টুপি। এ রকম পোশাক-আষাক পরে প্রায় দুই শতাধিক বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী সবার হাতে, কাঁধে লম্বা, ছোট থ্রি-কোয়ার্টার বন্দুক। এখানে একে-৪৭ থেকে শুরু করে অবৈধ ভারী অস্ত্র নিয়ে প্রকাশ্যে মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক কেরুনতলীর দক্ষিনঞ্চলে চিংড়ি ঘের এলাকা ও গ্রামের অলি-গলি হয়ে প্রধান সড়কের অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে সম্প্রতি হেতালিয়া ঘোনা স্ইুস গেইট এলাকায় বন্দুক যুদ্ধেও ঘটনার ইন্ধান দাতা ভয়ঙ্কর ফৌরদোসও আকতার হামিদ বাহিনীর দুধর্ষ সন্ত্রাসীরা। এ দুই বাহিনীর নিয়মিত আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে এসে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়ার কারণে এলাকার নারী-পুরুষেরা রয়েছে চরম আতংকে। বলতে গেলে হোয়ানকের দক্ষিঞ্চলের গ্রামের ১০/১৫ হাজার মানুষ দুই বাহিনীর হাতে জিম্মি। সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে শত শত অস্ত্র নিয়ে মাসের পর মাস বিশাল অস্ত্রের মহড়া দিলেও এদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশের প্রতি বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।
স্থানীয়দের মতে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এদের ধরবে না। তাদের মতে, র‌্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় এখানে অভিযান চালালে বিপুল সংখ্যক ভারী অস্ত্র উদ্ধারসহ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা যাবে। তাই তারা এ বাহিনীর বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জরুরী হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলীর বিস্তীর্ণ জনপদের লোকজন উক্ত দু” বাহিনীর প্রতাপে এখানে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দিন কাটাচ্ছে। দু” বাহিনীর আক্রমণ পাল্টা- আক্রমনের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। দু”বাহিনীর লোকজনকে বলতে শোনা গেছে এই লড়াই তাদের বাচাঁ মরার লড়াই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। তাই যে কোন মূল্যের বিনিময়ে হোয়ানক বিস্তির্ণ জনপদ তাদের সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে দু” বাহিনীর সন্ত্রাসীরা জানবাজি রেখে লড়ছে। জানা গেছে, বর্তমানে এ ভয়ঙ্কর আকতার হামিদ ও ফৌরদোস বাহিনীর সাথে যোগ দিয়েছে মহেশখালী বিভিন্ন ইউনিয়নে হত্যাকান্ডে কিলার বাহিনী। এতে রয়েছে কালামারছড়া ওসমান চেয়ারম্যান হত্যা, গফুর হত্যা ও মুজিব উল্লাহ বাদল হত্যাকারী, মোজাম্মেল হত্যাকারী, হোয়ানক কেরুণতলী এলাকার বকশু মেম্বার ও তার ছেলে জয়নাল হত্যকারীর সন্ত্রাসী বাহিনী। এছাড়াও রয়েছে নোনাছড়ি- ধলঘাট ও শাপলাপুর ইউনিয়নে দাগী সন্ত্রাসীরা। এ সংঘবদ্ধ বাহিনী হোয়ানকের কেরুনতলী বহুল আলোচিত হেতালিয়া ঘোনায় শুরু করেছে ফের হত্যাযজ্ঞ সন্ত্রাসী তান্ডব।
এভাবে সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতায় হোয়ানকের কেরুন তলী দীর্ঘ দিনের বিরোধপূর্ণ চিংড়ী প্রকল্পের দখল নিয়ে দু’গ্রুপের বন্দুক যুদ্ধে মোজাম্মেল হক কালাইয়া নামে একজন নিহত হয়। তিনি উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব নোনাছড়ি গ্রামের চাঁদ মিয়া মাঝির ছেলে। ৩১ আগষ্ট সোমবার সকাল সাড়ে ৬টায় উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলী সংলগ্ন বহুল আলোচিত হেতালিয়া ঘোনা এবং সুইস গেইট এলাকায় এঘটনা ঘটে। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফের আবারো যেকোন সময় সংঘর্ষে আরো প্রাণহানীর আশংকা করছে স্থানীয়রা।
এলাকাবাসী সুত্র জানায়, হোয়ানক ইউনিয়নের কেরুনতলী এলাকার ফেরদৌস এর সাথে তারই নিকট আতœীয় হোয়ানক ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত হাজী আব্দুল মাবুদের ছেলে আকতার হামিদ ও বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল করিমের কয়েকটি চিংড়ী প্রকল্পের দখল বেদখল নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ ও স্বশস্ত্র সংর্ঘষ চলে আসছিল। এবং এনাম চেয়ারম্যান নিবার্চিত হয়ে তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি কিছুটা হলে সন্ত্রীদের সাথে মেলা আগের তুলনায় কমিয়ে দিয়েছেন বলেও এমন কথার উদয় হচ্ছে। এনিয়ে বিগত কয়েক বছরের ওই ২ গ্রুপের ভাড়াটিুয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন এলাকার অর্ধ জনের অধিক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। চলতি মাসের ১ আগষ্ট উভয় পক্ষের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় ফেরদৌস পক্ষের সেলিম উল¬াহ নামের একজন নিহত হয়েছে বলে দাবী করলেও তার লাশ গুম হলে সম্প্রতি তার মৃত লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে ফেরদৌসের অভিযোগে দাবী করা হয়। এঘটনার পর থেকে উপকূলীয় এলাকার ২/৩টি চিংড়ী প্রকল্পসহ বিশাল এলাকার স্লুইচ গেইটের দখল নিতে দু’গ্রুপের মধ্যে মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকার একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপের ক্যাডারদের ভাটিয়া হিসেবে এনে প্রতিনিয়ত দফায় দফায় বন্দুক যুদ্ধ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটানো হচ্ছিল। সর্বশেষ গত ৩১ আগষ্ট সোমবার ভোর থেকে দু” গ্রুপের মাঝে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়। এক পর্যায়ে আকতার হামিদ গ্রুপের কালারমার ছড়া ইউনিয়নের নোনাছড়ি পূর্ব পাড়া গ্রামের আলোচিত পুলিশ ক্রসফায়ারে নিহত খলিল এর ছোট ভাই মোজাম্মেল হক প্রকাশ কালাইয়াকে পেটে ও পিঠে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি মারা যায় বলে মহেশখালী থানার ওসি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আওয়ামীলীগ নেতা জানান, আকতার হামিদও ফৌরদোস বাহিনী অস্ত্রের মহড়া দেখলে মনে হবে এরা কোন সরকারি বাহিনী। প্রশাসনের আশ্রয়- প্রশ্রয় ছাড়া কোনো সন্ত্রাসী বাহিনী সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারে না। হোয়ানকের এক জনপ্রতিনিধি সন্ত্রাসীদের ভয়ে নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, এ বাহিনী টাকা দিয়ে পুলিশ কিনে ফেলেছে। এত তান্ডব, ভাঙ্গচুর, লুটপাটের পর কেন প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এমন প্রশ্ন এলাকার সবার। তিনি আরো বলেন, এ বাহিনী এখন এলাকার ছোট ছোট ছেলেদের ও যুবকদের তাদের দলে যোগ দিয়ে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। এলাকার লোকমুখে সবার এখন একই কথা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশয়ে এ বাহিনী এলাকায় ব্যাক সন্ত্রাসসহ প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত বিশাল অস্ত্রের মহড়া দিয়ে যাচ্ছে। এরা ধরা-ছোঁয়ার বাহিরে থেকে গেছে। অথচ এ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী বাহিনীর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় রয়েছে ৮/৯ টির মতো হত্যা মামলা ২০/২৫টি মতো অস্ত্র চাঁদাবাজি ডাকাতি মামলা। এরপরেও তারা র‌্যাব-পুলিশের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এ ব্যাপারে মহেশখালী থানার অফিসার ইনর্চাজ সাইকূল আহমদ ভূঁইয়া জানান, পুলিশের চলতি অভিযান জোরদার থাকায় সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র থাকলেও ব্যবহারের সুযোগ নাই বলে জানিয়েছেন ।


শেয়ার করুন