মঙ্গলবার টেস্ট সিরিজে মাঠে নামছে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা

114572_1মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি।

২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ের ভিত্তিতে ৪টি সিরিজে মোট ৮টি টেস্ট খেলেছে। সবগুলো টেস্টেই বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে বাংলাদেশ।

তবে গত ৮ মাসে বাংলাদেশের ধারাবাহিক ভালো পারফরম্যান্সে আত্মবিশ্বাসী মুশফিকবাহিনী।

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ; সবগুলোতে প্রতিপক্ষ দলগুলোর বিপক্ষে আধিপত্য বিস্তার করেছে বাংলাদেশ।

বিশেষ করে সীমিত ওভারের ম্যাচগুলোতে নিজেদের ক্রিকেটীয় মেধার পরিচয় বেশ ভালভাবেই জানান দিয়েছে টাইগাররা।

চলতি সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২ ম্যাচের টোয়েন্টি২০ সিরিজ হারের পর সবচেয়ে সফল ফরম্যাটের ক্রিকেটেও শুরুতে হার দেখতে হয়েছে বাংলাদেশকে। এরপরের গল্প সবারই জানা। টানা ২ ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে এগুলোই আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে স্বাগতিকদের।

তবে বাংলাদেশের টেস্ট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম এটা মেনে নিলেও জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহ এমনটা স্বীকার করছেন না।

তিনি মনে করছেন, ‘এই ছন্দ সাময়িক আত্মবিশ্বাস যোগাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু ম্যাচ জেতাতে এর কোনো ভূমিকা নেই। আমাদের জিততে হলে ৫ দিন ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, দক্ষিণ আফ্রিকার পেসারদের বিপক্ষে আমাদের ব্যাটসম্যানরা কেমন খেলে তার উপরই নির্ভর করছে আমাদের ভাল রেজাল্ট।’

প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা বলেই বাংলাদেশের বেশি ভয়। অধিকাংশ টেস্টেই তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ ফলোঅন করেছে; হেরেছে ইনিংস ব্যবধানে। এমন পরিসংখ্যান বর্তমান দলের ক্রিকেটারদেরও জানা। তাই তো তারা সর্তক।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের আকাশে মেঘের ঘনঘটা। টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে আবহাওয়া রিপোর্টে। সেই অনুযায়ী হচ্ছে টিম কম্বিনেশন। কোচ ও অধিনায়ক সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছেন। উইকেটে হালকা ঘাস রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মুশফিক বলেছেন, ‘উইকেটে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে। সকালে উইকেট এবং আবহাওয়া বিবেচনা করেই মূল একাদশ গঠন করা হবে। দলের ১৪ জনই খেলার জন্য তৈরি আছে।’

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম বাংলাদেশের জন্য শুভ হলেও কেবল সীমিত ওভারের ম্যাচেই তার প্রমাণ দিয়েছে এই ভেন্যুটি। এখন পর্যন্ত টেস্টে সৌভাগ্যের ভেন্যুর প্রমাণ রাখতে পারেনি এই মাঠ। এখানে এর আগে ১৩টি টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার ৪টি ম্যাচে জয় বঞ্চিত হয়েছে প্রতিপক্ষরা। এই মাঠে গত বছর নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র জয়টি দেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তরা।

দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০৮ সালের মার্চে এই ভেন্যুতে একটি মাত্র টেস্ট খেলেছিল। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ইনিংস ও ২০৫ রানে হেরেছিল। এর ঠিক ৭ বছর পর আবারও এই ভেন্যুতে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল।

তবে সেবারের বাংলাদেশ আর এবারের বাংলাদেশের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। ওই দলের তামিম-সাকিব-মুশফিক ছাড়া আর কেউ নেই বর্তমান দলে। তারপরও আশাবাদী বাংলাদেশ; কারণ ওই একটাই; দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে ধারবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন টাইগার বাহিনীর কোচ ও টেস্ট অধিনায়ক।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকা আইসিসি টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নাম্বার দল।

বাংলাদেশ দল সরাসরি জয়ের কথা না বলে তাই হয়তোবা ভাল ক্রিকেট খেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।

মুশফিক মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার ২০ উইকেট তুলে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তার বোলারদের।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘২০ উইকেট নেওয়ার মতো বোলিং আক্রমণ আমাদের আছে। আমাদের সর্বাধিক উইকেটশিকারী সাকিব আছে; তাইজুল আছে। তাইজুল এসজি বলে খুবই ভাল বল করে। এ ছাড়া মুস্তাফিজ, রুবেল আছে। শহীদও খুব কার্যকর বোলার। আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এই বোলিং আক্রমণ নিয়ে আমি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী।’

দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসমানদের বিপক্ষে বাংলাদেশ বোলিং আক্রমণ সাজতে পারে ৪ জন নিয়মিত বোলারের সমন্বয়ে। সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এমনই সঙ্কেত দিয়েছেন মুশফিক। তবে সবকিছুই নির্ভর করবে সকালে পিচের চরিত্র বুঝার পর। সাকিবের সঙ্গে দুই পেসার রুবেল ও মুস্তাফিজের থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

এ ছাড়া তাইজুল কিংবা জুবায়েরের কোনো একজন থাকতে পারেন। সেই সঙ্গে নাসির ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের থাকাটা দলের বোলিং শক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মুস্তাফিজের মূল একাদশের থাকার প্রসঙ্গে মুশফিক বলেছেন, ‘এই ফরম্যাটে মুস্তাফিজের ভাল খেলার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। ও (মুস্তাফিজ) ঘরোয়া ক্রিকেটেও ভাল করেছে। বড় দৈর্ঘ্যর ম্যাচেও কিন্তু ভাল করেছে। ওদের ব্যাটিং লাইনআপের ৪-৫ জন মুস্তাফিজকে দেখেনি। তাদের বিপক্ষে ভাল অস্ত্র হতে পারে মুস্তাফিজ।’

বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা ৮টি টেস্টেই সব বিভাগে ভাল ক্রিকেট খেলে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ এই বাংলাদেশকেই বর্তমানে সমীহের চোখে দেখতে বাধ্য হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকানরা। এই বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অধিনায়ক হাশিম আমলা বলেছেন, ‘আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছি। তারা এখন আত্মবিশ্বাসী হয়েই মাঠে নামবে। তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখিয়েই টেস্টে আমরা মাঠের লড়াইয়ে নামব।’

২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট ৯১টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ২০০১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত লঙ্কানদের বিপক্ষে ১৬টি টেস্ট খেলেছে টাইগাররা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪টি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ১২টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, ১১টি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ১০টি পাকিস্তানের বিপক্ষে। এ ছাড়া ৮টি করে টেস্ট খেলেছে ইংল্যান্ড ও ভারতের বিপক্ষে।


শেয়ার করুন