মঙ্গলজল ছিটিয়ে রাখাইনদের জলকেলি উৎসবসম্পন্ন

জসিম উদ্দিন সিদ্দিক:
কক্সবাজারে মঙ্গলজল ছিটিয়ে রাখাইনদের জলকেলি উৎসব সম্পন্ন হয়েছে। রাখাইন সম্প্রদায়ের ৩ দিনব্যাপী ‘জলকেলি’ উৎসব ১৭ এপ্রিল হতে ১৯ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত পালন করা হয়। রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মূপে একে অপরের প্রতি মঙ্গলজল ছিটিয়ে আনন্দ উল্লাস মেতে ওঠেন। রাখাইন অব্দ (মগী সন) ১৩৭৬কে বিদায় এবং নতুন অব্দ ১৩৭৭কে বরণ করে নিতেই রাখাইনেরা এ উৎসব পালন করে।
১৯ এপ্রিল বিকেলে শহরের টেকপাড়া রাখাইনপল্লীতে ঘুরে দেখা গেছে, মুপের ভেতরে প্লাস্টিকের ড্রামে পানি ভর্তি করে তরুণীরা দাঁড়িয়ে তরুণদের অপেক্ষা। ঢাকঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে তরুণেরা মুপে প্রবেশ করে তরুণীদের সামনে দাঁড়ায়। তরুণদের প্রত্যেকের হাতে পানিভর্তি বালতি আর একটি করে মগ। পরে পছন্দের পাত্রীকে বেছে নিয়ে তরুণেরা পানি ছিঁটাতে থাকেন। জবাবে তরুণীও ওই তরুণকে লক্ষ্য করে পানি ছুড়ে মারেন। এভাবে জোড়ায় জোড়ায় চলে পানি দিয়ে শরীর ভিজিয়ে দেয়ার ‘জলকেলি’ উৎসব। রাখাইন তরুণী ম্য মা চিং বলেন, ‘মঙ্গলজল ছিটিয়ে পছন্দের মানুষটির শরীর ভিজিয়ে দেয়ার মধ্যে আনন্দ অনেক। সারা বছর ধরে আমরা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকি।
অনেকে জলকেলিকে পাত্র নির্বাচনের উপলক্ষ মনে করলেও আসলে কিন্তু তা না। পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণ করে নিতেই এই উৎসব। শহর ছাড়াও মহেশখালী, খুরুশকুল, চৌফলদন্ডি, রামু, চকরিয়া, হারবাং, টেকনাফসহ বিভিন্ন এলাকার রাখাইনপল্লীতে জেলকেলি উৎসব পালন করে। এতে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহনে রাখাইন পল্লীর জলকেলী পরিণত হয় অসাম্প্রদায়ীক উৎসবে। কক্সবাজার রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলী উৎসবকে ঘিরে জেলার রাখাইন পল্লীগুলো উৎসবে মাতোয়ারার শেষ নেই। তাদের এই প্রাণের উৎসবে স্থানীয় লোকজন ও দেশী-বিদেশী পর্যটকের পদভারে মূখরিত হয়েছে রাখাইন পল্লী।
উৎসবমূখর আমেজে জলকেলী উপভোগ করে জেলাবাসী। বিদেশী পর্যটকেরা রাখাইনদের পানি নিক্ষেপ, নাচ ও গানের দৃশ্য দেখে বিমোহিত হয়েছে। কানাডিয়ান নারী পর্যটক হেলেন ড্যানি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “ নানা বিচিত্র রংয়ে রঙিন এই পৃথিবী। বাংলাদেশে প্রত্যেক্ষ করলাম বাঙালির প্রাণের মেলা বৈশাখী উৎসব। কক্সবাজারে এসে রাখাইনদের জলকেলী দেখে যেন নতুন আর এক বিশ্বকে দেখছি, আমি অভিভূত। সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় জেগে উঠুক অনাগত দিনগুলো। ঝরাকে কাটিয়ে নতুনত্বে জেগে উঠুক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।” গত বছরের মত এবার কোন আনুষ্টানিক আয়োজন ছিলনা। বর্ণাঢ্য আয়োজন ছাড়াই জমে উঠেছে ভিন্নমাত্রিক এই উৎসব। শহরের প্রায় ১৫টি স্টেজে শুরু হয় এই উৎসব।
রাখাইন তরুণী ম্যপ্রু জানান, চৈত্র সংক্রান্তিতে তারা সাংগ্রে পোয়ে উৎসবে মেতে উঠে। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে এই উৎসব পালন করে তারা। পুরানো বছরের দুঃখ গ্লানিকে দূর করে নবীনতার প্রত্যাশায় জেগে উঠার প্রত্যয় তার চোখে মূখে।কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি অধ্যক্ষ ক্য থিং অং জানান, চৈত্র সংক্রান্তি থেকে রাখাইনদের বর্ষবরণ সাংগ্রেপোয়ে বা জলকেলী উৎসব শুরু হয়। এই উৎসবের মাধ্যমে রাখাইনরা নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। এই উৎসব বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে শানিত করবে।


শেয়ার করুন