‘ভুল’ নিয়ে বিব্রত ও হতাশ বিএনপি

বিএনপিআবদুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিলের ঘটনায় হতাশ ও বিব্রত হয়েছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এটাকে নির্বাচনের আগেই দলের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে নানা কথা বলাবলি হচ্ছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বুধবার মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। তিনি জানান, মিন্টুর সমর্থক আবদুর রাজ্জাক উত্তর সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা না হওয়ায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন হচ্ছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হলে প্রার্থী নিজে এবং তাঁর প্রার্থিতার জন্য প্রস্তাবক ও সমর্থককে ওই এলাকার ভোটার হতে হবে।
এরপর গুঞ্জন ছড়ায় যে মিন্টু নিজের ছেলেকে প্রার্থী করার জন্য মনোনয়নপত্রে ‘ইচ্ছাকৃত ভুল’ করেছেন। কারণ, বাবার সঙ্গে একই এলাকায় লড়তে বড় ছেলে তাবিথ আউয়ালও মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছেলে তাবিথের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে বিবেচিত হয়েছে।
বিএনপির নেতাদের একটি অংশ বলছে, আসলে আবদুল আউয়াল মিন্টু নির্বাচন করতে আগ্রহী নন। তিনি দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে বিএনপির সঙ্গে আছেন। আবার সরকারের সঙ্গেও তাঁর যোগাযোগ আছে।
মিন্টুর মেজ ছেলে তাফসির আউয়ালের শ্বশুর হলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক-বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার ঘটনাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। আবার এমন কথাও আছে যে ছেলেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে নির্বাচনী মাঠে নামানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার ঘটনায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বিব্রত। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়তার কারণে তিনি ইচ্ছা করেই ভুলটি করেছেন কি না, দলের নেতাদের মধ্যে সে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ব্যক্তিগত জীবনে মিন্টু সাবধানী ও গোছানো মানুষ বলে পরিচিত।
অবশ্য দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য জমিরউদ্দিন সরকার বলেছেন, আবদুল আউয়াল মিন্টুর ক্ষেত্রে যে ভুল হয়েছে, তা খুব বড় ভুল নয়। তিনি আইন ভঙ্গ করেননি, তবে অনিয়ম করেছেন। এখন তাঁর নির্বাচনী এলাকার একজন ভোটারকে সমর্থক করে এটা সংশোধন করা যেতে পারে। তবে ছেলেকে নির্বাচনে রাখতে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করেছেন, এটা ঠিক না।
কারণ হিসেবে সাবেক এই স্পিকার বলেন, মিন্টু অনেক আগে থেকেই সিটি নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। দলও তাঁর বিষয়টি অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছে। ইচ্ছাকৃত ভুল হলে নিজের নাম বা নম্বর ভুল করা হতো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচন কমিশন মিন্টুকে ‘লঘু পাপে গুরু দ-’ দিয়েছে। তিনি একজন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির মানুষ। তাঁর এই ভুল উপেক্ষা করা যায়।
মিন্টুর পারিবারিক সূত্র জানায়, ছেলেরা বাবার মামলা ও আইনি বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র পূরণের বিষয়গুলো দেখেছেন। কিন্তু মনোনয়নপত্র পূরণের পরও এ ভুলটি কারও নজরে আসেনি। কীভাবে এই ভুলটি হলো, পরিবারের সদস্যরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ার খবরে মিন্টু নিজেও অপ্রস্তুত ও বিচলিত হয়ে পড়েন। যোগাযোগ করা হলে আত্মগোপন অবস্থানে তাঁর সংস্পর্শে থাকা ব্যক্তিগত কর্মচারীরা কান্নাকাটি করেন। এ ঘটনায় মিন্টু খুবই বিব্রত বলে জানা গেছে। তবে তাঁর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সিটি নির্বাচনে যাওয়ার মনস্থির করার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মিন্টুকে ঢাকা উত্তর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেন। সে অনুযায়ী তিনি একাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিএনপির চেয়ারপারসন তাঁকে বিকল্প একজন প্রার্থী খুঁজতে বলেন। মিন্টু দলের যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহর (বুলু) নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু চেয়ারপারসন তাতে সায় না দিলে ছেলের নাম বলেন। শেষে নিজের বিকল্প হিসেবে ছেলে তাবিথ আউয়াল মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু অনেক দিন থেকেই ঢাকার মেয়র হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। রাজধানী ঢাকা নিয়ে তাঁর নিজস্ব কিছু চিন্তা, গবেষণা ও লেখালেখিও আছে। কথিত আছে, মেয়র হতেই তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন।


শেয়ার করুন