ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বাংলার মাটিতে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না’

13697145_694094120741804_4147700901367704242_nএম.এ আজিজ রাসেল : বাংলার মাটিতে জঙ্গি সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১৩ জুলাই) বিকেলে গণভবন থেকে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে সন্ত্রাস, নাশকতা ও জঙ্গিবাদবিরোধী ভিডিও কনফারেন্সে তিনি এ কথা বলেন।
গুলশান ও শোলাকিয়ার ঘটনা দেশের জন্য লজ্জাজনক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,  ধর্মীয় নেতা, শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক সবাইকে জঙ্গি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জঙ্গি হামলা করে বাঙালি জাতিকে বিশ্বের সামনে হেয় করছে, ইসলামকে হেয় করছে। পবিত্র ধর্ম ইসলামকে হেয় করবে তা বরদাশত করবো না। তিনি বলেন, নিরীহ মানুষ হত্যা করা মহাপাপ। যারা এটা করছে জনগণের ঘৃণা ছাড়া আর কিছু পাবে না। আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের স্থান হতে দেবে না। অভিভাবক ও শিক্ষকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হামলায় জড়িতরা নামীদামি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজের ছাত্র। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাদের কোনো চাহিদা অপূরণীয় নেই। তারপরও কেন জঘন্য পথে পা বাড়াল? সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সবাইকে আরো সচেতন ও সর্তক হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব কর্মকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারগুলোর সম্পৃক্ততার তথ্য রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৫ সালের শুরুতে টানা তিন মাস বিএনপি জামায়াত যেভাবে সারা দেশে অগ্নিসংযোগ, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জগণ্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে এখনও তারা থেমে নেই। তারাই জঙ্গীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছে। যুদ্ধাপরাধীদের পরিবার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এমনও তথ্য আছে, যেসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে তাদের পরিবার থেমে নেই। তারাও নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
‘তাদের অনেকে দেশে-বিদেশে থাকে, তাদের সম্পদের অভাব নেই। তারা যেমন অপপ্রচার চালাচ্ছে, তেমনি জঙ্গি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী। দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন রিপোর্টে আমরা এসব খবর পাচ্ছি, নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা। বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের ওপরও হামলা হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে নিজ নিজ এলাকায় আরো সচেতন ও সজাগ থাকতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য আদান প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে উৎসবে সবাই আনন্দ ভাগাভাগি করে। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। বাংলাদেশের এটাই সৌন্দর্য্য সকলে যার যার ধর্ম পালন করে। এই চমৎকার পরিবেশ যেন কখনোই নষ্ট হতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, ইসলাম ধর্মকে হেয় করার কোন কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘নিরীহ মানুষকে হত্যা করা পাপ। এ ধরনের কাজ যারা করে তারা জনগণের ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই পাবে না। জান্নাতে তাদের ঠাঁই হবে না। দোজখের আগুনে তারা জ্বলবে।’ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। তাছাড়া এ ধরনের আক্রমন জগণ্য অপরাধ, ঘৃণ্য অপরাধ। অত্যন্ত দূঃখের বিষয়, আমরা এটাও দেখি পবিত্র মদিনা শরীফে মসজিদে নববীতে বোমা হামলা করা হচ্ছে। আমরা জানি না এরা কি ধরনের মুসলমান। ইসলামের কথা বলে, ইসলামের নাম করে তারা এসব করছে। ইসলাম শান্তির ধর্ম। তারা সেই ধর্মকে অবমাননা করছে, বিশ্বের কাছে হেয় করছে। এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড যারা চালায় তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হতে পারে না, মত দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশে সব সময় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। শান্তি শৃঙ্খলার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে যখন আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে, তখন জঙ্গিবাদের মাধ্যমে তাকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
জঙ্গি তৎপরতায় জড়িতদের বেশিরভাগ বাংলাদেশের নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল কলেজের ছাত্র এবং উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। ইংরেজি মাধ্যমে তাদের পড়াশোনা। জীবনের সব ধরনের আকাঙ্ক্ষাই তাদের পূর্ণ হয়ে থাকে। এরপরও কেন তারা জঙ্গিবাদের মতো জঘন্য কাজে নিজেদের জড়াচ্ছে, এ নিয়ে প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে একটি শান্তিপূর্ণ, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ। জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, দেশ দিয়ে গেছেন, আত্মপরিচয়ের সুযোগ দিয়ে গেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর দিয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে ব্যাপকভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। বাংলাদেশে এখন বিদেশি বিনিয়োগ আসছে। সবাই বিস্মিত, অল্প সময়ে বাংলাদেশ কিভাবে এতোখানি উন্নতি করেছে। যখন বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এমনই উজ্জ্বল, যখন আমরা আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছি, ঠিক ওই সময়ে এসব ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে নষ্ট, উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত ও দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়ার একটা চেষ্টা চলছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়িয়ে, মানুষের জীবনে শান্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে সন্তানদের দেখভালে অভিভাবকসহ সবাইকে আরও যতœবান হতে হবে বলে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজারের সাম্প্রতিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় গৃহিত পদক্ষেপের উপর ব্রিফিং প্রদান করেন জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি এ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের যুগ্ন সম্পাদক রেজাউল করিমসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিবৃন্দ।


শেয়ার করুন