ভারত থেকেও আসছে রোহিঙ্গারা

ডেস্ক নিউজ
এবার ভারত থেকেও বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। গেলো একমাসে উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে ঠাঁই হয়েছে প্রায় ৫’শ রোহিঙ্গার। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, সেখানে পুলিশি নির্যাতন ও জেল-জুলুমের মুখে তারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তবে এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সরজমিনে কক্সবাজারের উখিয়াস্থ ট্রানজিট ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পের চারপাশে রয়েছে তারের বেড়া, সঙ্গে নিরাপত্তা কর্মীদের কঠোর নজরদারি। এই ক্যাম্পে স্থাপন করা তাঁবুতে আশ্রয় দেয়া হয় নতুন আসা রোহিঙ্গাদের।

চলতি মাসে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার কিংবা ভারত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রথমেই ঠাঁই হয় এই ক্যাম্পে। এরপর তাদের স্থানান্তর করা হয় অন্যত্রে। শনিবার রাতেও এই ট্রানজিট ক্যাম্পে এসেছে দুইটি পরিবারে ১৮ জন রোহিঙ্গা। যারা নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতের জম্মু কাশ্মীরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এবার জম্মু কাশ্মীর থেকে এসে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছেন বাংলাদেশে। তাদের দাবি, সেখানেও তারা নির্যাতনের শিকার।

জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী আয়েশা বলেন, ভারতে থাকতে না পেরে বাংলাদেশে চলে এসেছি। ৭ দিন হয়েছে ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করছি। ভারত থেকে দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি রাতের আঁধারে। তবে দালালরা সবকিছু ছিনিয়ে নিয়েছে।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন, আমার শ^শুর-শাশুড়িকে জেল খানায় বন্দি করেছে। তার মধ্যে জেলখানায় শাশুড়ি মারা গেছে দেড় বছর হচ্ছে। এমন করে প্রতিনিয়ত মানুষজন ধরে ধরে জেল খানায় বন্দি করছে। তাই বাধ্য হয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছি।

মোহাম্মদ আছাদ (২৫) নামের আরেক রোহিঙ্গা বলেন, জম্মু-কাশ্মীর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি ৫ দিন হবে। সে দেশের সরকার নির্যাতন করছে তাই এখানে চলে আসা। ট্রেনযোগে সীমান্তে এসে পরে রাতের আঁধারে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি।

ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থানরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ বলেন, গেল এক সপ্তাহে ট্রানজিট ক্যাম্পে আমার আশাপাশের তাবুতে প্রায় এক’শোর বেশি রোহিঙ্গা ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে চলে এসে এখানে অবস্থান করছে।

এদিকে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয় শিবিরে ১১ লাখেরও রোহিঙ্গার বসবাস। নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

কুতুপালংস্থ ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কারণে আমরা উখিয়া টেকনাফের মানুষ নানামুখী সংকটে। কিন্তু এর বাইরেও এখন প্রতিবেশি দেশ থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। এটা কোনভাবে মেনে নেয়া যায় না। তিনি দাবি করেন, এসব রোহিঙ্গা থেকে মুক্তি চাই। যতদ্রুত সম্ভব সরকার এবং আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা এখন বিকল্প আশ্রয়ের জন্য মরিয়া। বাংলাদেশে থাকা স্বজনরা ভালো আছে জেনেই তারা ছুটে আসছেন আশ্রয়ের আশায়।

উখিয়াস্থ ১৪ এপিবিএন এর অধিনায়ক মো. নাইমুল হক বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি ভারত থেকে বেশ কিছু পরিবার ক্যাম্পে চলে এসেছে। তার সংখ্যা ৪০ পরিবারের মতো হবে। ক্যাম্পে আসলে তাদেরকে হেফাজতে নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জদের মাধ্যমে ট্রানজিট ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আগত রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে মো. নাইমুল হক আরও বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গার আত্মীয়-স্বজন ভারতে রয়েছে। তারা দেখা করতে উখিয়ার ক্যাম্পে এসেছে। এছাড়াও অন্যান্য কিছু কারণও রয়েছে। সে কারণগুলোও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

প্রতিবেশি দেশ ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে গেল ৫ বছরে সীমান্তে দিয়ে অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে এসেছে প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গারা।


শেয়ার করুন