ভারতে কন্যাশিশু হত্যা বাড়ছেই

image3-400x277সিটিএন ডেস্ক:
ভ্রুণ হত্যা নিষিদ্ধ এবং মানবাধিকার পরিপন্থী কাজ হলেও ভারতে নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর এ কারণে ভারতে মেয়ের সংখ্যা আশংকাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন । সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে গত ৩০ বছরে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মেয়ে ভ্রুণ হত্যা করা হয়েছে। ধনী ও শিক্ষিত বাবা মায়ের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়।
ভ্রুণ হত্যার আধুনিক প্রযুক্তি সুলভ হওয়ায় এটি একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । প্রথম সন্তান মেয়ে হলে দ্বিতীয় সন্তান মেয়ে হওয়ার ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনা বেশি ঘটছে । দেশটিতে মেয়ের বিয়েতে বিপুল পরিমাণে যৌতুক দিতে হয় এবং মেয়ে সন্তান লালন-পালন করতে গিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আর এসব কারণেই ভারতে বাবা-মায়েদের কাছে মেয়ে সন্তানের তুলনায় ছেলে সন্তান বেশি কাক্সিক্ষত ।

ভারতে মেয়ে শিশুর অবস্থান কতটা সংকটে তার একটা আন্দাজ দেয় জনগণনা। ২০১১ সালের আদম শুমারিতে দেখা যাচ্ছে, প্রতি এক হাজার শিশুপুত্রের পাশাপাশি রয়েছে ৯১৮টি শিশুকন্যা। গত কয়েক দশক ধরে এই অনুপাত ক্রমশ কমেই যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৪০ সালে দেখা যাবে, ভারতে কর্মক্ষম পুরুষদের চাইতে (২০-৪৯ বছর) মেয়ের সংখ্যা থাকবে ২ কোটি কম।

সংকটের জটিলতা এখানেই যে, শিক্ষিত, সম্পন্ন, শহুরে মানুষরাই শিশুকন্যাদের গর্ভেই হত্যা করছে বেশি। গ্রামের মানুষ, দলিত বা জনজাতির মানুষদের মধ্যে এই হার অনেক কম। যে পাঁচটি রাজ্যে শিশুকন্যার অনুপাত সব চাইতে কম, তার মধ্যে তিনটি রাজ্যে (হরিয়ানা, পাঞ্জাব, দিল্লি) মাথাপিছু আয় জাতীয় গড়ের চাইতে বেশি। অর্থাৎ কন্যাপালনের আর্থিক বোঝা টানতে না পেরে বাধ্য হয়ে বাবা-মা হত্যা করছেন মেয়েকে, এমনটা আদৌ নয়।

রসধমব (১)কন্যাভ্রূণ হত্যা বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও যারা কাজটা অকাতরে করে চলেছেন, তাঁরা ডাক্তার। উচ্চমানের প্রযুক্তির ব্যবহারে ঝকঝকে তকতকে প্রতিষ্ঠানগুলিতে প্রায় নিঃশব্দে কাজ সেরে চলেছেন তাঁরা। কয়েক কোটি কন্যা ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগেই ‘নেই’ হয়ে গেল, একজন ডাক্তারও দোষী সাব্যস্ত হননি।
এক সময় জনসংখ্যা বাড়ছে, এই আতঙ্ক তৈরি করা হত প্রতি জনসংখ্যা দিবসে। দুর্ভিক্ষ থেকে যুদ্ধ, সব সংকটকে চাপানো হত মেয়েদের সন্তানের জন্ম দেওয়ার প্রবণতার উপর।

বিশেষত গরিব মেয়েদের বন্ধ্যাকরণ প্রায় জাতীয় মিশনের চেহারা নিয়েছিল। এখন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ‘জনবিস্ফোরণ’-এর তত্ত্বে অনেক গলদ রয়েছে। জনসংখ্যাবিদ বা ডেমোগ্রাফারদের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ জনসংখ্যায় ভারসাম্য বজায় রাখা। মেয়েদের সংখ্যা ক্রমাগত কমতে থাকলে যা বজায় রাখা অসম্ভব।

রাষ্ট্র মেয়েদের জন্য উচ্চশিক্ষা বা রোজগারের যত সুযোগ তৈরি করছে, সমাজ ততই মেয়েদের জন্মানোর পথই বন্ধ করে দিচ্ছে। এ যেন আগা কেটে গোড়ায় জল দেওয়া।

মেয়েদের সংখ্যা কম হলে তার কী কী ভয়াবহ পরিণাম হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা করেন অনেকে। জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়, বিবাহযোগ্য মেয়েদের সংখ্যা কমলে নারীপাচার বাড়বে, যৌন নির্যাতন বাড়বে। কিন্তু এই সব সম্ভাব্য ঝুঁকির চাইতেও বড় আশঙ্কা রয়েছে। তা হল গণতন্ত্র নিয়ে। গণতন্ত্রের মূল কথা, সবার জন্য সমান সুযোগ। মেয়েদের যদি জন্মানোর সুযোগই না দিতে পারে একটা রাষ্ট্র, তবে তার মৌলিক পরিচয় নিয়েই প্রশ্ন ওঠে।


শেয়ার করুন