ভাবমূর্তি সংকটে বন্ধ আমিরাতের ভিসা

UAE-400x281সিটিএন ডেস্ক:
মারাত্মক ভাবমূর্তি সংকটে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাস করা বাংলাদেশিরা। আর এ কারণে ২০১২ সাল থেকে দেশটির ভিসা পাচ্ছে না এদেশের নাগরিকরা।
বর্তমানে আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা ৬ লাখ। নতুন করে ভিসা প্রদান বন্ধ করার আগে তারা আরব আমিরাতে গিয়েছিল। এদের বেশিরভাগই দুবাই ও আবুধাবিতে বাস করে।
দুবাইতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ শ্রমিকই অদক্ষ। কঠিন সংকট আর দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছে তারা।
এদের অনেকেই সেদেশে বাংলাদেশি চাকরিদাতাদের দ্বারা প্রতারিত। তাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুত বেতনের চেয়ে অনেক কম দেওয়া হয় তাদের। অনেকেই খাদ্য ও বাসস্থান সংকটের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরগুলোতে অমানবিক জীবন যাপন করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অনেক বাংলাদেশিকেই প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় দুঃসহ পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়।
আরব আমিরাতে কাজ করা বাংলাদেশের পাবনা জেলার আবদুস সোবহান এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি প্রতি মাসে প্রায় ৬০০ দিরহাম পাই যা বাংলাদেশি টাকার মাত্র ১২ হাজার ৬০০ টাকার সমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি দুবাইতে আসার জন্য বাংলাদেশি এজেন্টকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। আমাকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমাকে আমার মা বাবা জমি বিক্রি করে এখানে পাঠিয়েছে। তাই এখানে কাজ করা ছাড়া আমার আর কোনও উপায় নেই।’
অভিযোগ আছে, বাংলাদেশিদের একটি প্রভাবশালী অংশ শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে। কিন্তু আরব আমিরাতের চাকরি দাতারা কোনও অতিরিক্ত ফি ধার্য্য করেনি।
অপর এক বাংলাদেশি বলেন, ‘প্রতিদিন স্থানীয় রিক্রুটিং এজেন্সির সামনে প্রায় ২০০ বাংলাদেশি জড়ো হয় তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমিরাতের চাকরিদাতারা অতিরিক্ত কোনও টাকা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে এমন দুইজন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করেছে আমিরাতের দফতর।’
তিনি অভিযোগ করেন, এর পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে।
আরও এক বাংলাদেশি শ্রমিক বিল্লাল হোসেন অভিযোগ করেন, একই পরিমাণ শ্রম দিয়ে তিনি পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম টাকা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিমাসে পাই ১২০০ দিরহাম। অথচ ভারতীয় ও পাকিস্তানি শ্রমিকরা একই কাজ করে পায় ২ হাজার দিরহাম।’
তাছাড়া বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস থেকেও কোনও সহায়তা পাননা বলেও জানান তিনি। কনস্যুলেট অফিস থেকে যথাযথ সহায়তা না পাওয়ায় তিনি চাকরি পরিবর্তন করে অন্য কোথাও যেতে পারছেন না বলে তার অভিযোগ।
ভাবমূর্তি সংকটের কারণে অনেক দক্ষদেরকেও ভালো জীবন যাপনের জন্য সংগ্রাম করতে হয়। আশরাফুল হক নামের একজন জানান, ‘আমি একজন প্রকৌশলী এবং প্রতিমাসে প্রায় ৬০ হাজার দিরহাম বেতন পাই।’
দুবাইতে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘সমস্যার কারণ হচ্ছে অনেক বাংলাদেশই অশিক্ষিত। তারা আরব আমিরাতের নিয়ম কানুন জানেন না এবং তা মেনে চলেন না।’
তিনি আরও বলেন, অনেকেই দুবাইতে ইয়াবা ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ ও অবৈধ ব্যবসায়ের সাথে জড়িত।
ওই কর্মকর্তা জানান, বিদেশে পাঠানোর আগে সরকারের উচিৎ শ্রমিকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতারণার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আরবিতে লেখার থাকার কারণে অনেকেই বোঝেন না কাগজপত্রে কী লেখা আছে। বাংলাদেশি রিক্রুটাররাও তাদেরকে কোনও সহায়তা করেন না।
দ্য ফিনানসিয়াল এক্সপ্রেস থেকে।


শেয়ার করুন