জম্মু-কাশ্মিরে হিজবুল কমান্ডার খুন

ভাইয়ের ওপর সেনা নির্যাতনের বদলা নিতেই জঙ্গি হয়েছিলেন বুরহান

e70f278cd527b3e9f5293d5984afc578-5780794e26de8বিদেশ ডেস্ক:

দক্ষিণ কাশ্মীরের ত্রালের এক সম্পন্ন পরিবারের ছেলে ছিলেন ‘বন্দুকযদ্ধে’ নিহত হিজবুল কমান্ডার বুরহান মুজফফর ওয়ানি। বাবা স্কুলের প্রিন্সিপাল। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই হিজবুলে ভিড়ে যায় বুরহান। কাশ্মীরে শিক্ষিত স্থানীয় যুবকদের বন্দুক হাতে তুলে নেওয়ার যে প্রবণতা দেখা যায়, বুরহানকে তাদেরই প্রতিনিধি ধরা হয়। বলা হয়, বুরহানের প্রভাবেই কাশ্মীরে বিদেশিদের তুলনায় স্থানীয় ছেলেদের উপস্থিতি বেড়েছে।
কিন্তু কেন বুরহান সন্ত্রাসের পথ বেছে নিলেন। উত্তর খুঁজতে গিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক খবর থেকে জানা যায়, ২০১০ সালে সেনাবাহিনীর অন্যায্য নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তার ভাই। বদলা নিতেই মাত্র ১৫ বছর বয়সে সন্ত্রাসবাদী দলে নাম লেখায় বুরহান। ২০১০ সালের কোনও একটা দিনে বুরহানের বড় ভাই খালিদ মোটর সাইকেলে করে তার এক বন্ধু আর বুরহানকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে সেনাবাহিনী তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটকায়। এক পর্যায়ে তাদেরকে সিগারেট এনে দিতে বলে। সিগারেট এনে দেওয়ার পরও তারা খালিদকে বেদম পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা মুক্ত হয়ে বাড়ি আসে। বুরহান-খালিদের অধ্যক্ষ বাবা জানিয়েছেন, ওই সময় থেকেই প্রতিনিয়ত প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলত বোরহান। কেবল খালিদের বাবা নন, তার বন্ধু-স্বজনদেরও কাছে একই তথ্য পাওয়া যায়। প্রতিশোধের উদ্দেশ্যেই ২০১০ সালে ১৫ বছর বয়সেই জঙ্গিবাদে দীক্ষা নেন তিনি।
বুরহানের বাবা এই কথাগুলো জানিয়েছিলেন আদালতে। অভিযোগ রয়েছে ‘এনকাউন্টার’-এর কথা বলে খালিদকে ২০১৫ সালের এপ্রিলে আসলে হত্যাই করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে সেনাবাহিনীর দাবি ছিল, খালিদ নিজেও বুরহানের মতো সন্ত্রাসী। ভাইয়ের ওপর নির্যাতন, ৫ বছর পরে সেই ভাইকে হত্যা বুরহানকে আরও সহিংস করে তোলে। নিজে সরাসরি সন্ত্রাসে শামিল না হয়েও সে হয়ে ওঠে ‘সন্ত্রাসবাদের পোস্টার বয়’!
শেষ তাকে দেখা গিয়েছিল গত মাসে অনন্তনাগে তিন পুলিশকর্মীর নিহত হওয়ার পর সোস্যাল মিডিয়ায় সম্প্রচারিত ভিডিওতে। তাতে সে পুলিশের ওপর আরও হামলার হুমকি দেয়। ভারতে তার পরিচিতি কাশ্মির উপত্যকায় মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গিদের তালিকায় তার নাম ছিল।

বুরহানকে মরিয়া হয়ে খুঁজছিল পুলিশ। তার অবস্থান জানাতে পারলে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছিল। শনিবার গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া আগাম খবরের ভিত্তিতে তাকে খুঁজে বের করে নিরাপত্তাবাহিনী। সকালে বুমদুরা গ্রামে তাকে ঘিরে ফেলে পুলিশ ও সেনার যৌথ দল। সংঘর্ষে আরও ২ জঙ্গির সঙ্গে সে প্রাণ হারিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে বুরহান নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারানোর পর জম্মু-কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে সহিংসতার কারণে অমরনাথ যাত্রা স্থগিত করে দিয়েছে নিরাপত্তারক্ষীরা। একইসঙ্গে রাজ্যের বেশকিছু জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়ছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এছাড়াও অন্যান্য অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাসি চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।


শেয়ার করুন