ব্লগার হত্যায় কী বলছেন আলেমরা!

gitanjoli-copy

আমাদের সময়.কম:
রাজধানীতে একের পর এক খুন হচ্ছে মুক্তমনা ও নাস্তিক ব্লগার। এসব হত্যার পেছনে ধর্ম বিষয়ক লেখাই বড় কারণ বলে খতিয়ে দেখা গেছে। এই নিয়ে আলোচনা সমালোচনার পানি গড়িয়েছে বহুদূর? মুক্তমনারা বরাবরই দাবি করছেন লেখার সমালোচনা লেখাতেই দিবে হবে। খুন করে কলম থামিয়ে দেয়া ভদ্রোচিত জবাব হতে পারে না। কিন্তু নামধারী কিছু চরমপন্থী সংগঠন সেসবের তোয়াক্কা করছে না। একের পর এক খুন করে চলেছে ব্লগার ও মুক্তমনাদের। আর অব্যহতভাবে এসবের দায় চাপছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের ওপর।
২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজীব হায়দারকে হত্যার মাধ্যমে ব্লগাররা টার্গেটে পরিণত হয়। ওই সময় শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণের মঞ্চের সমাবেশ তুঙ্গে। এরপর চলতি বছর ২৬ ফেব্রুয়ারির বইমেলা থেকে ফিরে আসার সময় শাহবাগে খুন হয় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা লেখক অভিজিৎ রায়। সেই হত্যার কোনো ক্লু খুঁজে পাওয়ার আগেই রাজধানীর তেজগাঁওয়ে খুন হলো আরেক ব্লগার। ওয়াশিকুর বাবু নামের এই ব্লগার মূলত ফেসবুকে ইসলাম, নাস্তিকতা ও বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখি করতেন। ওয়াশিকুর হত্যার দুইজন আসামিকে তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা মাদরাসার ছাত্র বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে দাবি করলেও উল্লেখিত দুই মাদরাসা থেকে বিবৃতি দেয়া হয়েছে ওই নামের কোনো ছাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানে নেই।
ইসলাম বিদ্বেষী লেখা লেখলেই একজন মানুষকে নৃশংসভাবে খুন করা যায় কিনা এই নিয়ে গুঞ্জন উঠেছে। ইসলাম এ ধরনের নৃশংস হত্যা সমর্থন করে না। বিষয়টি নিয়ে গত ৩১ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহা পরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল একাত্তর টিভির টকশোতে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, সকল মানুষকেই সহনশীল হওয়া উচিত। মহানবী হযরত মোহাম্মদ সা. এর নামে খারাপ কিছু লেখা যেমন অপরাধ, ঠিক তেমনি সেই ব্যক্তিকে হত্যা করাও অপরাধের সামিল। যদি কোনো ব্যক্তি অপরাধ করে তবে তার জন্য আইন রয়েছে এবং আইনের আওতায় তার বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু ধর্ম কখনই কোনো মানুষকে হত্যার করার অধিকার দেয়নি।
ওয়াশিকুর হত্যায় মাদ্রাসা ও ইসলামকে অভিযুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। তবে কে বা কারা অপরাধ করেছে বর্তমানে দেশের ওলামা-একরাম, মসজিদ মাদ্রাসার নামে নানান দুর্নাম ছড়াচ্ছে, যা মোটেও ঠিক নয়। অপরাধী সবসময় অপরাধী এবং তার অপরাধের জন্য বিধান রয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ অপরাধ করে ধর্মের গায়ে দোষ চাপাচ্ছে। তাই যে ব্যক্তি অপরাধ করে শুধু তাকেই শাস্তি দেয়া উচিত। তার জন্য পুরো গোষ্ঠিকে দায়ী করা কখনই ঠিক হবে না।
ভিন্নমতাবলম্বীদের এমনভাবে হত্যা ইসলামে নেই বলে জানিয়েছেন হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষক ও হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। তিনি আমাদের সময়.কমকে টেলিফোনে বলেন, ইসলামের নাম দিয়ে এগুলো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা কখনোই এ ধরনের হত্যা সমর্থন করি না এবং আমাদের শিক্ষার্থী ও কর্মীরা এমন কাজে উৎসাহ পান না।
আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরো বলেন, ব্লগার ওয়াশিকুরের খুনি জিকরুল্লাহ জিকির হাটহাজারী মাদরাসা ছাত্র বলে প্রচার করা হয়েছিল। কিন্তু আমরা সবকিছু ঘেটে দেখেছি সে আমাদের মাদ্রাসার ছাত্র নয় এবং অতীতেও ছিল না। হাটহাজারী মাদ্রাসার পক্ষ থেকে আমরা এ হত্যার সঠিক তদন্ত দাবি করছি। হেফাজতে ইসলাম অভিজিৎ হত্যার বিচারও দাবি করেছিল।
রাজধানীর মালিবাগের জামিয়া শারইয়্যার মুফতি ইউসুফ সুলতান বলেন, ইসলাম উগ্র ধর্ম নয়। ইসলামে শেখানো হয় শান্তি ও সম্প্রীতি। কেউ যদি হত্যা করে ইসলামের নাম বলে তবে বুঝতে হবে তিনি লাইনচ্যুত। ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তিনি পাননি। তবে আমি আরেকটু বাড়িয়ে মুক্তমনা ব্লগারদের বলবো, মাদ্রাসার ছাত্ররা তো অশিক্ষিত গোয়ার তাই বলে আপনারা কেন এমন হবেন? নাস্তিকতা যদি সুন্দর বিষয় হয় সেটা সুন্দর করে তুলে ধরুন। আপনাদের ইভল্যুশন থিওরি মজবুত হলে মানুষ আপনাদের পেছনে এমনিতেই ছুটবে।
আলেমদের সঙ্গে কথা বললে তারা আরো জানান, বাংলাদেশে ধর্ম এবং নাস্তিক এই দুইয়ের মধ্যে যে সাংঘর্ষিক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে তা নির্মূল করা উচিত। সত্যিকারের ইসলাম ও নাস্তিকতা কোনোটাই উগ্র নয় বরং অনেক সহনশীল। কোনো হত্যার পেছনে একে সম্পৃক্ত করে কোনো গোষ্ঠী হয়তো ফায়দা তুলতে চাচ্ছে। যা প্রকৃত ইসলামপন্থীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা অনুচিত।


শেয়ার করুন