ব্র্যান্ডের দোকান বনাম হকারের দোকান!

imagesমুহাম্মদ হোসাইন :

দীর্ঘ রমজানের সিয়াম সাধনার পর মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রত্যশার একটি নতুন দিন হচ্ছে ঈদুল ফিতর।
এই ঈদকে ঘিরে সর্বত্রে সাজসাজ নতুন বর্তিকা। ঈদ মানে আনন্দ, উচ্ছ্বাস, সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া।
আর সকল মতপার্থক্য ভূলে গিয়ে ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করে পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি দেখানো।
ঈদে বিশেষত মুসলিম পরিবারের সদস্যরা সব স্তরে নতুন করে সাজানোর চেষ্ঠা করেন। নিজেদের পরিদেয় বস্ত্রসহ,পরিবারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে শফিং-মল, মিনি বাজার, হকার মার্কেট, মোবাইল মার্কেট গুলোতে ভীড় করেন। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা ব্যতিক্রম আয়োজন করে ক্রেতাদের নজর কাড়ানোর চেষ্ঠায় থাকেন।
তবে চাহিদার দরুণ ক্রেতারা চলে যায় পছন্দের শফিং মলে। কেউ চাই ব্র্যান্ডের কাপড় ছাড়া কোন রকম কেনা কাটা করবেনা, আবার নি¤œ শ্রেণীর ক্রেতারা হকার মার্কেটে ভীড় জমায়। স্বভাবতই কোন ক্রেতা বাজারে আসলে প্রথমত চিন্তা করে ”হকারে যাবো ”? না ব্র্যান্ডের দোকানে যাবো? এভাবে শুরু হয় শ্রেণী বৈষম্যের স্বপ্নের ঈদবাজার!
যদিও ঈদ সকলের বৈষম্যকে ধূলিতে মিশিয়ে এক কাতারে দাঁড়াতে শেখায় কিন্তু বর্তমান পুঁজিবাদী সমাজে বৈষম্যহীনতার পরিবেশের পবিত্র রমজান মাসেও ভোগান্তির শিকার করে ব্য্রান্ডী মালের দিকে মানুষকে বাধ্য হয়ে অনুগত্য পরায়ন করে বৈষম্যময় করে রীতিমত গড়ে তুলছেন।
বিশিষ্টজনেরা বলছেন, দুইটি কারণে এই বৈষম্য দিনদিন তীব্রতায় রুপ নিচ্ছে।

Eid_Eas

তার মধ্যে পুঁজিবাদী মার্কিটিং সিস্টেমে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী নিজেদের মান বজায় রাখার স্বার্থে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ব্র্যান্ডের মালামালের খাতায় নাম লিখাচ্ছে।
এতে বিশেষ করে গরীর লোকজনের ঈদ বাজেটে খরা তৈরী হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানির টেক্সটাইল ফ্যাশনে নিত্য নতুন কাপড়ের সয়লাবে আগেকার হকারী ক্রেতারাও পছন্দময় কাপড় সংগ্রহে ঘুরে ফিরে ব্র্যান্ডী পণ্যের দোকানীতে বেশি ঝুঁকে পড়ছেন।
কক্সবাজার শহরের পানবাজারের হকার দোকানী আসলাম বলেন, আমরা ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী মালামল কালেকশন করেছি। ইদানিং কিছু ক্রেতারা কাপড় পছন্দের সময় ব্র্যান্ডের কিনা প্রশ্ন করে। তবে আমরা ব্র্যান্ডের মালামালের চেয়ে ভাল মানের কাপড় পরিবেশন করছি।
ফজল মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আল-মাহমুদ বলেন, আসলে এখন যে হারে ব্র্যান্ডের দোকান বলে দেখানো হচ্ছে- এ সব মালামাল চীন,ভারত, পাকিস্তান থেকে আমদানীকৃত। নিজেরা ম্যানুফ্যাকসার করে এই রকম কয়টা ব্র্যান্ড আছে?
প্রায় দোকান চীন দেশ থেকে মালামাল সংগ্রহ করে নিজেদের তৈরী করা নামে ব্র্যান্ড বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি কক্সবাজারে অন্যবারের তুলনায় বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রামের সুনামধন্য বেশ কয়েকটা কাপড়ের ব্র্যান্ড এসেছে। এটা মূলত টাকার চেয়ে মানুষের রুচিশীলতা ও কাপড়ের কারুকার্যের প্রতি ঝোঁকটা বাড়ায়। এই জন্য ক্রেতারা সে দিকে চলে যাচ্ছেন।
এ ছাড়াও ব্র্যান্ডের মালামালের প্রতি সম্পদশালী ছেলে সন্তানদের চাহিদার শ্রুতির বাঁশিতে নি¤œ-মধ্যম শ্রেণীর লোকজনও ঝুঁকে পড়ছেন নতুন করে। যদিও পরিবারের চাহিদার বাইরে এসব ছেলে মেয়েদের কেনা-কাটা। তবে সমাজিক ¯্রােতে তাল মিলানো কন্ঠে ছেলে সন্তানদের দাবী আদায় বাধ্য হয়ে বসে আসতে বাধ্য অভিভাবকরা।
অন্যথায় পরিবারে ঈদ আনন্দ হয়ে উঠছে বিপরীত । কক্সবাজার শহরের ব্যবসায়ী মুহাম্মদ শহীদ উল্লাহ ২২ জুন বুধবার তার স্ত্রীকে নিয়ে কেনা-কাটা করতে আসেন লালদিঘীস্থ ”রিচ ম্যান” শফিং মলে। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনতো সকল মার্কেটের দোকান ব্র্যান্ডে পরিণত হয়ে গেছে। যেখানে যাই সেখানে বলে আমাদেরটা ব্র্যান্ডের দোকান। যা দেখবেন একদাম!
এই আক্ষেপ নিয়ে তিনি মন্তব্য করে বলেন, আমরা যারা নি¤œ-মধ্যম শ্রেণীর লোকজন,
তারা নিরুপায় হয়ে ব্র্যান্ডী মালামালের প্রতি ঝুঁকছি।
পানবাজার সড়কের মোস্তাক আহম্মদ আজাদ নামের মেডিসিন ব্যবসায়ী বলেন, আগেকার ঈদবাজার সল্প টাকায় সম্পন্ন হয়ে যেতো। জুতার দোকানী, কাপড়ের দোকানী, সবটায় এখন একেক নামের দামী-দামী ব্র্যান্ড হয়ে বসেছে। সাধারণ লোকজনের নাগালের বাইরে হলেও বাধ্য হয়ে পবিত্র রমজানের যে ঈদুল ফিতর, তা তো উপভোগ করতে হবে। সেহেতু দাম বেশি হওয়ার পরও ক্রয় ক্ষতমায় নিয়ে এনে ঈদ বাজার করার চেষ্ঠা করছি।
ইতোপূর্বেও পরিবারের সকল সদস্য মিলে হাজার দুয়েক টাকা দিয়ে ঈদের সব কেনা কাটা করা সম্ভব ছিল। তবে আজ বাংলাদেশ নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় ছোট-বড় সকল শফিং মল ব্র্যান্ডের শ্লোগানে পরিণত হয়েছে।
এ দিকে কক্সবাজার শহরের প্রায় ঈদ বাাজরে ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্রেতারা ব্র্যন্ডের মালামালের নাম শুনে ভীত হয়ে উঠে অন্য দোকানে পছন্দের জিনিস খোঁজার চেষ্ঠা করছেন। তারা বলছেন, এসব ব্র্যান্ডী মালামাল হকার থেকে কিনলে দাম অর্ধেক দিয়ে পাাওয়া যায়। তাদের অভিযোগ, দোকানিরা যেন ব্র্যান্ডের মালামাল বলে আখ্যা না দেয়। কাপড়তো কাপড়!
নতুন করে বৈষম্যময় মার্কেট তৈরী করা কি দরকার। এটা এক চরম শ্রেণী বৈষম্যের পথকে বাতলে দিচ্ছে।
যা একটি সমাজে স্থায়ী বিভাজন তৈরীতে অনবদ্যভাবে কাজ করছে। যে মাসে সম্প্রীতির পরিবেশ তৈরী হওয়ার কথা সেখানে এই ইস্যুটি নতুন করে সবাইকে ভাবনায় ফেলে দিচ্ছে।


শেয়ার করুন