ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলন: গোয়ায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ‌্য গোয়ায় পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রবিবার ভারতের স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১১টায় বিমানটি গোয়ায় ভারতীয় নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়।

এর আগে সকাল ৮ টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রওনা হন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস‌্য এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান।

ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট রাজ্য গোয়ায় দুই দিনের এই সম্মেলন হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রেয়ুট চ্যান-ও-চা, নেপালী প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী আলিনা সালদানহা, গোয়া সরকারের সচিব (কোপারেশন) পদ্মা জয়সবাল এবং মুম্বাইয়ে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনার সামিনা নাজ গোয়া নৌ বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৭ অক্টোবর দেশে ফিরবেন।

প্রতিবেশী রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়নের মধ্যে গোয়ায় শনিবার শুরু হয়েছে অষ্টম ব্রিকস সম্মেলন। ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের বাণিজ্যিক জোটের এ সম্মেলন চলবে আজ রবিবার পর্যন্ত।

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেছে ভারত। পাঁচ জাতির ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে পাকিস্তানকে আরো কোণঠাসা করতে চাইছে ভারত।

ভারতীয় সংবাদসংস্থা পিটিআই-এর এক প্রতিবেদনে এসব কথা উঠে আসে।

এবারের ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভারতের উপকূলীয় শহর গোয়ায়। এই অর্থনৈতিক জোটের এটি ৮ম সম্মেলন।

এতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল তেমের এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা অংশগ্রহণ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ব্রিকস জোটভুক্ত পাঁচ দেশে বাস করেন ৩৬০ কোটি মানুষ, যা পুরো বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার সমান। আর এই দেশগুলোর মোট জিডিপি প্রায় ১৬ লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, লক্ষ্য পূরণে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতা চাইবে ভারত।

এক ফেসবুক পোস্টে তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশাবাদী যে, এবারের ব্রিকস সম্মেলনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যকার সহযোগিতা বাড়বে। সেই সঙ্গে উন্নয়ন, শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সংস্কারের পারস্পরিক সাধারণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও অগ্রসর হওয়া যাবে।’

সম্মেলন চলাকালে মোদি রুশ ও চীনা প্রেসিডেন্টসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন বলে জানা গেছে।

এক সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ জানিয়েছেন, সম্প্রতি পাকিস্তানের সঙ্গে রুশ সামরিক বাহিনীর যৌথ মহড়ার বিষয়টি আলোচনা উত্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আফগানিস্তানের আশরাফ গণি, ভুটানের শেরিং তবগে, মালদ্বীপের আবদুল্লা ইয়ামিন, মিয়ানমারের অং সান সু চি, নেপালের পুষ্প কমল দাহাল, শ্রীলঙ্কার মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এবং থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন নেতা প্রায়ুথ চান-ওচা এবারের ব্রিকস-বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।

১৯৯৭ সালে গঠিত সাত জাতি বিমসটেক নিয়ে ভারতের বেশ উচ্চাশা ছিল। কেননা এই জোটে তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান নেই। কিন্তু মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও পরবর্তী সময়ে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জোটটি প্রত্যাশা অনুযায়ী অগ্রসর হতে পারেনি।

২০০৪ সালের জুনে বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ) রূপরেখা চুক্তিতে যোগ দেয় বাংলাদেশ। একই বছর সেপ্টেম্বরে ব্যাংককে এর আওতায় ট্রেড নেগোসিয়েশন কমিটির (টিএনসি) প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এখন পর্যন্ত কমিটি পণ্য বাণিজ্য নিয়ে সমঝোতা শেষ করতে পারেনি। পণ্যের পর টিএনসির সেবা ও বিনিয়োগ খাতে সমঝোতা শুরু করার কথা। গোয়ায় অনুষ্ঠেয় আউটরিচ সম্মেলনে এফটিএ নিয়ে বিমসটেক নেতাদের কাছ থেকে একটি নির্দেশনা আদায়ের চেষ্টা করবে ভারত।

বিসমটেক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পরিবহন ও যোগাযোগ, জ্বালানি, পর্যটন, প্রযুক্তি, মৎস্যসম্পদ এবং কৃষি খাতে সহযোগিতা নিয়ে কাজ করে। ঢাকায় এর সদর দপ্তর স্থাপন করা হয়েছে।


শেয়ার করুন