বৈদ্যুতিকযন্ত্র পরিবহনে বন্দর হচ্ছে মহেশখালীতে

ডেস্ক নিউজ :
মহেশখালীকে বিদ্যুতের ‘হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিদ্যুতের যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য একটি বন্দর স্থাপন করা হবে। কিন্তু অর্থায়নে জটিলতা তৈরী হওয়ায় প্রস্তাবিত বন্দরটি সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, মহেশখালীতে বন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে খননের মাধ্যমে বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ার জন্য চ্যানেলও তৈরি করা হবে। চ্যানেলসহ ছোট পরিসারে এ বন্দর স্থাপনে প্রয়োজন হবে ১২ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। কিন্তু মহেশখালীতে এ বন্দর স্থাপনে রাশিয়ার কাছে ঋণ চেয়েও পাচ্ছে না সরকার। এ অবস্থায় অর্থায়নের জটিলতায় পড়েছে প্রকল্পটি। এ প্রকল্পের মতোই বিদ্যুতের গুরুত্বপূর্ণ ১০ প্রকল্পের অর্থায়নের জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকার এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে আগ্রহী হলেও সঙ্কট দেখা দিয়েছে অর্থায়নে। এসব প্রকল্পের অর্থায়ন জটিলতা দূর করতে সম্প্রতি বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে সম্প্রতি একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় মশেখালীতে বিদ্যুৎ যন্ত্রপাতি পরিবহনে প্রস্তাবিত বন্দরটি নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যুতের হাব হিসেবে গড়ে তুলতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ৫ হাজার ৫৮০ একর জমিতে ৯টি ব্লকে মোট ১৩ হাজার ৪৬০ মেগাওয়াট কয়লা ও এলএনডিভিত্তিক (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আটটি ব্লকের প্রতিটিতে ১৩২০ মেগাওয়াট (২ গুণ ৬৬০) আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক এবং একটি ব্লকে তিন হাজার (৪ গুণ ৭৫০) মেগাওয়াট এলএনজিভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।এ বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা এবং কাতার বা অন্য কোনো দেশ থেকে এলএমজি আমদানি করা হবে।
এদিকে চীনের অর্থায়নে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের দুটি প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। শুরুতে নমনীয় ঋণের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত চীন বেশি সুদে ঋণ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে বেশি সুদে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় ২৮ প্রকল্প চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নের সমঝোতা (এমওইউ) চুক্তি হয়। অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে আলোচ্য দুই প্রকল্পেও সমঝোতা চুক্তির তালিকায় ছিল। প্রকল্পগুলো হল-পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেনদেনিং প্রজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি (১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলার) এবং এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেনদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট (ঋণের পরিমাণ ২০৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার) চায়না এক্সিম ব্যাংকের নমনীয় ঋণে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্ত মেনেই দু’পক্ষ সমঝোতা চুক্তিতে সই করে। কিন্তু সম্প্রতি চায়না এক্সিম ব্যাংক প্রকল্প দুটিতে অর্থায়নের নতুন শর্ত বেঁধে দিয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের শর্ত অনুযায়ী, ১৫ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ সরকার সরবরাহ করবে। মাত্র ১৫ শতাংশ নমনীয় ঋণ দেবে এক্সিম ব্যাংক। বাকি ৭০ শতাংশ ঋণ তিন শতাংশ সুদে নেওয়ার শর্ত দিয়েছে চীন। এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই তাদের শর্ত মেনে নিতে হচ্ছে।


শেয়ার করুন