সিআইপি আতিক এলসি কর্মীর

বেতনের টাকা না দেওয়ায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও

CIP Atik...আবদুল আলীম নোবেল:
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে এলসিএস নারী শ্রমিকের ৩৮ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ওই টাকার দাবীতে ৩ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করেছে ভুক্তভোগি শ্রমিকরা। পরে তারা ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ঠ সকলের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এসময় জেলা প্রশাসক বিষয়টি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আশ্বাস দেন।
স্মারকলিপি সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে এলজিইডির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত উখিয়া উপজেলার কোর্টবাজার-সোনাপাড়া-মনখালী সড়ক এবং টেকনাফের বাস স্টেশন-শামলাপুর সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য ৪ জন সুপার ভাইজার ও ৬১ জন এলসিএস নারী শ্রমিক নিয়োগ দেয়। মাসে প্রতিজন সুপারভাইজারের বেতন ৬ হাজার টাকা এবং প্রতিজন এলসিএস শ্রমিকদের বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। নিয়োগের পর থেকে একটানা ১৬ মাস চেইনেজ ৬৪ কিলোমিটার সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করে শ্রমিকরা। ওই ১৬ মাসের মধ্যে কয়েক দফায় সুপারভাইজার ও শ্রমিকদের প্রতিজনকে বেতন দেয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার টাকা করে। এরপর বেতনের আর কোন টাকা পরিশোধ করেনি উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্ধারিত বেতন অনুযায়ী সুপারভাইজার ও এলসিএস কর্মীদের বকেয়া রেখে দেয় আরো ৩৮ লাখ টাকা।
ওই পাওনা টাকার দাবীতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্তাধিকারী আতিকুল ইসলাম সিআইপির কাছে শ্রমিকরা বারবার ধর্না দিলে টাকা পরিশোধ না করে উল্টো নানা ধরণের তালবাহনা করে সে।

রক্ষণাবেক্ষণ কাজের সুপারভাইজার আব্দুল আমিন জানান, আতিক সিআইপির কাছে বেশ কয়েকবার শ্রমিকের পাওনা মজুরি চাইতে গিয়ে বর্থ্য হয়। অনেকবার সে শ্রমিকদের মেরে লাশ গুম করারও হুমকি দেয়। পরে বাধ্য হয়ে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করলে তিনি এলজিইডি কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলীকের যাচাই বাচাই পূর্বক দ্রুত শ্রমিকের মজুরি পরিশোধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই নির্দেশকে নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর আলম সিদ্দিকী তোয়াক্কা না করে শ্রমিকদের বেতনের বকেয়া টাকা পরিশোধের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
উল্টো তিনিও শ্রমিকদের সাথে কটাক্ষ ভাষায় কথা বলেন। তাই শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী,মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি। এরপরও যদি টাকা আদায় না হয় তাহলে সকল শ্রমিকরা কঠোর কর্মসূচী দেবে। সেই সাথে প্রতারক উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের মালিক আতিকুল ইসলাম সিআইপির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানায় সে।

এলসিএস কর্মী মিনারা আক্তার জানান, খেয়ে না খেয়ে দায়িত্বপালন করেছি। কোনদিন দায়িত্বে অবহেলা করেনি কেউ। কিন্তু ওই ঠিকাদারী কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে তামাশা শুরু করেছে। চুক্তি শেষ হলেও এখনো বকেয়া ৩৮ লাখ টাকা পরিশোধের কোন মানসিকতা দেখছিনা। এখন সব শ্রমিক চরম অসহায়ত্বের সাথে জীবন যাপন করছে। বকেয়া টাকা পাওয়ার আশায় ধার দেনা করে জীবন চালাচ্ছে সবাই। তাই এসব তামাশা বন্ধ করে দ্রুত তাদের বকেয়া পরিশোধের দাবী এই শ্রমিকের।

আর এক উপজাতী এলসিএস কর্মী মাবুচিং চাকমা জানান, এলসিএস শ্রমিকদের বেশিরভাগই স্বামী পরিতক্ত্য বা চরম দরিদ্র। আমরা সঠিকভাবে দায়িত্ব সম্পন্ন করলেও বেতন পরিশোধ করছেনা কর্তৃপক্ষ। পাওনা টাকার দাবীতে এপর্যন্ত অনেকবার ধার দেনা করে জেলা শহরে এসেছি। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে সরকারী সকল কর্তাব্যক্তিরা প্রতারক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের সাথে যোগসাজস করে আমাদের পাওনা আদায়ে অসযোগীতা করছে। তাই বাধ্য হয়ে শেষ ভরসা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীসহ উর্ধ্বতন মহলের কাছে আবেদন করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্তাধিকারী আতিকুল ইসলাম সিআইপি বলেন, অনিয়মের কারণে অনেক আগে এসব শ্রমিকদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এখন কেন তারা আন্দোলন করছে সে সম্পর্কে আমি জ্ঞাত নয়। তিনি ওই শ্রমিকদের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর মনজুর আলম সিদ্দিকীর মোবাইলে একাধিক ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় মতামত নেয়া সম্ভব হয়নি।


শেয়ার করুন