বৃষ্টিতে রোমাঞ্চকর টেস্টের অপমৃত্যু

chittagong1বাংলামেইল:

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যান খুব একটা সুখকর নয়। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে আগের ৮টি টেস্ট ম্যাচের ৬টিতে চারদিনে এবং অপর ২টি তৃতীয় দিনে হার মেনেছিল টাইগাররা। কিন্তু এবার তাদের বিপক্ষে শুধু লিডও নেয়নি, চট্টগ্রাম টেস্ট ম্যাচের প্রথম তিনটি দিন বলা চলে রাজত্ব করেছে মুশফিক বাহিনী।

এমনকি তৃতীয় দিন শেষ স্বাগতিকরা এগিয়েও ছিল ১৭ রানে। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালিপনার কাছে অসহায় টাইগাররা। আর সেখানে ক্রিকেটতো তুচ্ছ। শুক্রবার ভোর থেকে শ্রাবণের বারিধারায় ভাসিয়ে দিল ম্যাচের চতুর্থ দিনের খেলা। তাতে করে চট্টগ্রাম টেস্টের উত্তাপ কিছুটা হলেও কমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে টেস্ট ম্যাচের উত্তেজনাও প্রায় হারিয়ে যাবার পথে। তাতে করে স্বাগতিক শিবিরে জেগেছে হতাশা।

তবে চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে খেলা যে পর্যায়ে ছিল তাতে শেষটা হতে পারত রোমাঞ্চকর। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে সেই সম্ভাবনা অনেকটাই মিলিয়ে গেছে। কিন্তু  তারপরও প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো টেস্ট গড়াচ্ছে পঞ্চম দিনে। এতে বৃষ্টির ভূমিকা যতটা, তার  চেয়ে কম নয় স্বাগতিকদের পারফরম্যান্স। চতুর্থ দিন শেষে এখনও ১৭ রানে এগিয়ে রয়েছে স্বাগতিকরা। তবে বৃষ্টির কল্যাণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ গড়াতে যাচ্ছে পঞ্চম দিনে, হাতছানি দিচ্ছে প্রথমবারের মতো ড্রয়ের।

প্রোটিয়ারদের বিপক্ষে চলতি টেস্টসহ বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৯২টি টেস্ট খেলেছে। এর মধ্যে ১২টি টেস্ট ড্র হয়েছে। যার আবার ৬টিতেই প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে বৃষ্টিরও। ১২ ম্যাচের মধ্যে ৬টি ম্যাচ বৃষ্টির কারণে ড্র করেছে বাংলাদেশ। কমপক্ষে একদিন বৃষ্টি ছিল এমন ম্যাচগুলোই নির্বাচন করা হয়েছে এই পরিসংখ্যানে। বাকিগুলো নিজের যোগ্যতা বলেই ড্র করতে সমর্থ হয়েছে টাইগাররা।

তবে বৃষ্টির কল্যাণে ড্র এটা কোথাও কোনো ভাবে উল্লেখ নেই। তবুও ম্যাচের যেমন গতি প্রকৃতি ছিল, সেক্ষেত্রে বৃষ্টি না হলে ওই ম্যাচগুলোতে হার দেখতে হতো বাংলাদেশকে। এই ১২ ম্যাচের মধ্যে ৬টি ম্যাচেই আবার আগে ফিল্ডিং করে ড্র করেছে বাংলাদেশ। এসব বিবেচনায় তাহলেও কি চলতি টেস্ট ম্যাচটিও ড্রয়ের পথেই রয়েছে! তবে এই প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আগামীকাল শনিবার।

বৃষ্টির প্রভাবে বাংলাদেশের ড্র করা ৬টি টেস্ট :

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে : ২০০১ (ঢাকা, ৮ নভেম্বর)
২০০১ সালের ৮ জুলাই বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট খেলে বাংলাদেশ; তাদের প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টির কল্যাণে ড্র করে বাংলাদেশ। টানা বর্ষণে শেষ দুই দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। পরে ম্যাচ রেফারি ভানুমাত সিং ম্যাচটি খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ড্র দেখে। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচে হার দেখা থেকে বেচে গিয়েছিল বাংলাদেশ শুধুমাত্র বৃষ্টির কল্যাণে। জিম্বাবুয়ের বোলার ট্রেভিস ফ্রেন্ডস ও হেনরি ওলোঙ্গার বোলিং তোপে বাংলাদেশ ১০৭ রানেই অলআউট হয়ে যায় প্রথম ইনিংসে। মাশরাফির বোলিং তোপে জিম্বাবুয়ে তাদের প্রথম ইনিংসে করে ৪৩১ রান। ৩২৪ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ৩ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রান করে দিন শেষ করে বাংলাদেশ। টানা ৩ দিন ঠিকমত খেলা মাঠে গড়ালেও শেষ অব্দি বৃষ্টিরই জয় হয়।

বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে, ২০০৪, বুলাওয়ে (১-৪ নভেম্বর)
২০০৪ সালের ১-৪ নভেম্বর জিম্বাবুয়ের সঙ্গে দ্বিতীয় ড্র পেয়েছিল বাংলাদেশ ওই বৃষ্টির কল্যাণেই। ম্যাচের প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি বুলাওয়ে টেস্টের। বাংলাদেশ তৃতীয় দিনে ১৬৮ রান করতেই সবগুলো উইকেট হারিয়েছিল। এরপর চতুর্থ দিনেও বৃষ্টি চলার পর পঞ্চম দিনের খেলা আবার মাঠে গড়ায়। জবাবে খেলতে নেমে জিম্বাবুয়ে ২ উইকেটে ২১০ রান তুলতেই ফের বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছিল। আর খেলা হয়নি। ফলাফল আরেকটি ড্র পেয়েছিল বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-ভারত : ২০০৭ (চট্টগ্রাম, ১৮ মে)
বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মত সফরে এসেছিল ভারত। ওই সিরিজে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টটি ড্র হয়েছে। ওই ম্যাচের তৃতীয় দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ রান সংগ্রহ করে। জবাবে খেলতে নেমে বাংলাদেশ ২৩৮ রানেই অলআউট হয়ে যায়। ১৪৯ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ৬ উইকেট হারিয়ে ১০০ করলে পঞ্চম দিনের খেলা শেষ হয়। তাতেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম ড্র পায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড : ২০০৮ (মিরপুর, ২৫ অক্টোবর)
মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে টানা তিন দিন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল। এরপর চতুর্থ দিনে টসে জিতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। জবাবে বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করে তাদের প্রথম ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। ৯৩ রানে এগিয়ে থেকে নিউজিল্যান্ড ১ উইকেট হারিয়ে ৭৯ রান করে ড্র মেনে নিয়ে মাঠ ছাড়ে। দিনের ঘণ্টা খানেক আগেই তারা ড্র মেনে নেয়।

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ২০১১(চট্টগ্রাম, ২১ অক্টোবর)
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে প্রথম ড্রটি হয় বৃষ্টির সহায়তায়। ম্যাচের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। বাংলাদেশ প্রথম দিনে ২৫৫ রানে সংগ্রহ করে ৪ উইকেট হারিয়ে। এরপর টানা দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় চতুর্থ দিন ৯ উইকেটে ৩৫০ রান করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। জবাবে খেলতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১১৯ রান করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে। জবাবে ২২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান করলে পঞ্চম দিনের খেলা শেষ হয়। এই ম্যাচে ২ দিন বৃষ্টির প্রভাব থাকলেও বাংলাদেশ এক প্রকার ভাল ক্রিকেট খেলেই ড্র করে।

বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড : ২০১৩ (মিরপুর,২১ অক্টোবর)
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজটি বাংলাদেশ ড্র করে। প্রথম ম্যাচ অবশ্য চট্টগ্রামে নিজ দক্ষতায় জয় পেলেও দ্বিতীয় টেস্টে কিছুটা ভাগ্যের ছোঁয়া ছিল। ৫ দিনের মধ্যে শেষদিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের ২২ গজে। ওই টেস্টে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৪৩৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে। ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ শুরু করে। বাংলাদেশ ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৬৯ রান। ওই ম্যাচে মুমিনুল হক ১২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।


শেয়ার করুন