২০৫০ সালের মধ্যে বাস্তুভিটা হারা হবে দেশের ২ কোটি মানুষ

বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ

environment
জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার ক্ষতিকর প্রভাবে পৃথিবীর উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। উষ্ণতা বাড়ার কারণে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। আবহাওয়ার দুর্যোগ আরও ঘন ঘন আসবে এমন আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। গ্লোবাল কাইমেট রিস্ক ইনডেক্স অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এখানকার উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত (বাড়িঘর হারাবে) হবে ২০৫০ সালের মধ্যে। এমনই এক অবস্থার মধ্যে দিয়ে আজ পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস।

এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘কানেটিং পিপল টু নেচার। যার বঙ্গানুবাদ করা হয়েছে- প্রাণের স্পন্দনে, প্রকৃতির বন্ধনে।’ এবার পরিবেশ দিবসে স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার।’

বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই তিগ্রস্ত হবে এবং হচ্ছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক বেশি বাংলাদেশে। গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রতিনিয়ত বাড়ছে বাতাসের গতি। তীব্র জোয়ারের সময় বেড়ে যাচ্ছে জমির য়। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন অঞ্চল। এর ফলে হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়ছে। এমনটি চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে, আর উপকূলীয় এলাকায় এখন যে ৪৩ লাখ মানুষ সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার, এদের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটিতে।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গত এক দশকে প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবকাঠামো, জীবিকা এবং ফসলে যে তি হয়েছে, তা জাতীয় অর্থনীতিতে গড় তির পরিমাণ জিডিপির ০.৫ থেকে ১.০ শতাংশের সমান। প্রাণহানির সংখ্যাও অনেক। উন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণে এ ঝুঁকি আরও বাড়ছে। এ জন্য প্রতি অর্থবছরের মতো এবারো বাড়ানো হয়েছে জলবায়ু মোকাবিলা খাতে বরাদ্দ। তবে জলবায়ু খাতে মোট বাজেট বাড়লেও কমেছে পরিবেশ ও বন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জলবায়ু সুরা ও উন্নয়নের ল্েয পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ ছয়টি মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু সম্পৃক্ত মোট বরাদ্দ বেড়েছে। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেট এবার কমেছে ৭৩০ কোটি ২৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা।

বিগত অর্থবছরের তুলনায় ছয়টি মন্ত্রণালয়ের জলবায়ু সম্পৃক্ত খাতে এবার মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৬ হাজার টাকা। যা ছয়টি মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের ১৯ দশমিক ২০ শতাংশ এবং জিডিপির শূন্য দশমিক ৬৬ শতাংশ। বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৭৭৩ কোটি ৮৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এটি ছিল মোট বরাদ্দের ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সে হিসাবে নতুন অর্থবছরে জলবায়ু খাতে মোট বরাদ্দ বেড়েছে ৮৫৯ কোটি ৭২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা।

পরিবেশ ও মন্ত্রণালয় বাদে জলবায়ু সম্পৃক্ত অন্য ৫টি মন্ত্রণালয় হলো, কৃষি, পানিসম্পদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ, প্রাথমিক ও গণশিা এবং স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে এবার মোট বাজেট বরাদ্দ কমেছে। গতবার যেখানে বাজেটি ছিল ১৮৫০ কোটি টাকা। এবার তা হয়েছে ১১২০ কোটি টাকা। তবে এ মন্ত্রণালয়ে জলবায়ু সম্পৃক্ত মোট বরাদ্দ ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই ধারা অনুন্নয়ন বরাদ্দের ক্ষেত্রও বজায় থেকেছে।

নতুন অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেটে জলবায়ু সম্পৃক্ত বরাদ্দ ২১৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরে ছিল ১৫৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়লেও মোট বাজেটের শতকরা হিসাবে বরাদ্দ কমেছে। এবার যেখানে উন্নয়ন বাজেটে জলবায়ু সম্পৃক্ততার হার ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, গতবার তা ছিল ৪৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।

গবেষণা তথ্যানুযায়ী, ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মনুষ্যসৃষ্ট কর্মকা-ের কারণে ভূপৃষ্ঠে উপরিভাগে প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ হারে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে বাতাসে বার্ষিক কার্বন নির্গমনের পরিমাণ ছিল ৪৯ দশমিক ৫ গিগাটন, যা ২০১২ সালে ৫০ গিগাটনে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় ২০২০ সালে তা ৫৫ গিগাটন ছাড়িয়ে যাবে এবং শতাব্দীর শেষ নাগাদ ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা গড়ে ৩ দশমিক ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু বিষয়ক প্যারিস চুক্তি থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৮৮টি দেশের ঐকমত্যে প্যারিসে ওই জলবায়ু চুক্তি হয়েছিল। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি যাতে প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না হয় এবং তা ১.৫ ডিগ্রিতে রাখার প্রচেষ্টার কথাও বলা হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি থেকে সরে এলে এই শতক শেষে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ০.৩ সেলসিয়াস বাড়তে পারে।

প্যারিস চুক্তির বিরোধিতা করে ট্রাম্প বলেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য শাস্তিস্বরূপ। প্যারিস চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির ৩ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ৬৫ লাখ চাকরি হাতছাড়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। এসব কারণে অর্থনৈতিকভাবে দেশটির প্রতিন্দ্বদ্বী চীন ও ভারত লাভবান হচ্ছে বলেও মন্তব্য তার।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব থেকে সরে আসার পর চীন ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) প্যারিস জলবায়ু চুক্তি কার্যকরে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য একমত হয়েছে। এক যৌথ বিবৃতির খসড়ায় প্যারিস জলবায়ু চুক্তিকে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অপরিহার্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন