চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে জেলা প্রশাসকসহ ১০ সরকারী কর্মকর্তাকে হাইকোর্টের নির্দেশ

বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসন প্রকল্প নির্মাণ বন্ধে হাইকোর্টের নির্দেশ

হাইকোর্টের নির্দেশ ctnনিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজারে পাহাড়ি জমিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সাথে কলাতলী এলাকায় ১৭০৩০ নং দাগের এবং এর আশপাশের পাহাড়ি জমিতে পাহাড় কাটা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবেনা, ওই এলাকা কেন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করা হবেনা এবং এ এলাকায় পাহাড়গুলো সংরক্ষণ করতে ব্যর্থতা মামলার বিবাদী সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্মকর্তাদের কেন দায়ী করা হবেনা তা আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে তিন সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১০ সরকারী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারক একেএম জহিরুল ইসলামের বেঞ্চ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে সুপ্রীম কোর্ট ও বেলার আইনজীবি মিনহাজুল হক চৌধুরী জানান, পাহাড়ি জমিতে বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজ আগামী দুই মাসের জন্য বন্ধ রাখতে বিবাদীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন গত ২৮ এপ্রিল একটি জাতীয় প্রতিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। তা সংযুক্ত করে আদালতে উপস্থাপনের পর আদালত রুল জারি করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৪ সালের ৫ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি দেয়া হয়। বিউবোর কক্সবাজার বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মু. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, শহরের কলাতলী এলাকার ঝিলংজা মৌজার ১৭০৩০ নং দাগের চার একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এতে উল্লেখ করা হয়, জমিটি পাহাড় শ্রেণীর। এর পর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা।

সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎ বিভাগের চিঠিতে আবাসন প্রকল্পের কথা উল্লেখ না করে শুধু বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে। জানতে চাইলে প্রকৌশলী মু. মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই জমিতে আবাসন প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হবে। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করেছে। এখন জেলা প্রশাসন তাদের কাছে জমি হস্তাস্তর করবে। তবে ঝিলংজা মৌজার ১৭০৩০ নং দাগের পাহাড়ি জমিতে বিদ্যুৎ বিভাগের এসব স্থাপনা নির্মাণে আপত্তি জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। পাহাড়ি ভূমি বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসনের জন্য বন্দোবস্ত না দিতে জেলা প্রশাসকের কাছে ২১ এপ্রিল চিঠি দেয় পরিবেশ অধিদফতর। অধিদফতরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, জমিটি একটি বিশাল অক্ষত পাহাড়। যার কোনো মাটি কাটা হয়নি বা কোনো অংশ ধসে পড়েনি। পাহাড়টিতে এখনো জীববৈচিত্র্য সংরক্ষিত আছে। সরকারিভাবে আবাসন প্রকল্পের জন্য পাহাড়টি বন্দোবস্ত দেয়া হলে একদিকে পাহাড়ে বিদ্যমান জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে, অন্যদিকে পাহাড় কাটতে ব্যক্তিপর্যায়ে অন্যরা উৎসাহিত হবে।

ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সাধারণ সম্পাদক সায়ীদ আলমগীর বলেন, পাহাড়ি জমি আবাসনের জন্য বন্দোবস্ত না দিতে ২০ এপ্রিল সংগঠনের পক্ষ থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি। তিনি জানান, ওই চার একর জমি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল। পরে তা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এখন সেখানে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, সংঘবদ্ধ একটি চক্র ক্ষতিপূরণের নামে সরকারের ৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে গোপনে পাহাড়ি জমি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষ করেছে।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা বলেন, আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি শুনেছি। তবে এখনো কাগজ-পত্র হাতে পায়নি।


শেয়ার করুন