বার্ডস আই: হায়রে অভাগা মুসলমান!

মাহ্ফুজুল হক

mahfuzআজ পৃথিবীর যেদিকে রক্তপাত তার প্রায় সবক’টিই কোন না কোন মুসলিম জনগোষ্ঠীর রক্ত এবং বেজে চলা যুদ্ধের দামামা তা-ও মুসলিমের বিরুদ্ধে। এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ তিনটি মহাদেশব্যাপী চলছে মুসলিমদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা। চলছে মুসলিম নিধন। ভিন্ন নামে, বিভিন্ন দেশে এই ব্যাপক মুসলিম নিধনযজ্ঞ চললেও সর্বত্রই ওই মুসলমানরাই সন্ত্রাসী, জঙ্গী নামে নিন্দিত হচ্ছেন। অর্থাৎ তারা মারও খেয়ে চলেছেন আবার সমানে বদনামও বয়ে বেড়াচ্ছেন। আসুন, আমরা ঘটনার গভীরে গিয়ে দেখি আসলেই কী ঘটছে, কেন ঘটছে, কে ঘটাচ্ছে।
পৃথিবীর একেবারে পূর্বাংশে দ্বীপরাষ্ট্র ফিলিপাইন। দূরপ্রাচ্যের এই দেশটিতে যে মানুষগুলো সেনাবাহিনীর গুলিতে অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছেন তাঁরা তামাটে বর্ণের মঙ্গোলীয় চেহারার অভাগা ‘মরো’ মুসলমান। ফিলিপাইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ মিন্দানাও চার দিক সমুদ্র বেষ্টিত যাতে রয়েছে মাউন্ট এ্যাপো’র অপরূপ শোভা। এটি হচ্ছে সমগ্র ফিলিপাইনের খাদ্য ভান্ডার (ফুড বাস্কেট)। বিংশ শতাব্দীতে মিন্দানাওতে যেখানে ৯০ শতাংশ মুসলিম ছিলো সেখানে আমেরিকার সহযোগিতায় চলা নৃতাত্ত্বিক বিজাতিকরণ (এথ্নিক ক্লিনজিং) এর ফলে বর্তমানে মুসলিমদের সংখ্যা মাত্র ২৫ শতাংশে এসে ঠেকেছে। নিজ দেশে পরবাসী করার ওই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মুসলমানগন প্রতিবাদ মুখর হয়। আমেরিকার মদদপুষ্ট খ্রীস্টান শাসক চক্র তার জবাব দেয় সহিংস ও সশস্ত্র পন্থায়। নিজ দেশে স্বাধীকার নিয়ে বেঁচে থাকতে চাওয়ার অপরাধে আজ মরোরা হত্যাকান্ডের শিকার আর জঙ্গী অভিধায় অভিযুক্ত। স্বাধীনতা চাওয়া, স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাওয়া কি অপরাধ? আর সে অপরাধে অপরাধী করে কোন জনগোষ্ঠীকে নির্বিচারে হত্যা করা কি অপরাধ নয়?
উত্তর গোলার্ধের বরফ ঢাকা ককেশীয় দেশ দাগেস্তান, চেচনিয়া, ইংগুশ্টিয়া, উত্তর ওশেটিয়া। ওখানকার সাদা চামড়ার মানুষগুলো তাতার মুসলমান। তাঁরা সেখানে ইসলামের অনুশাসন মেনে নিজেদের জীবন ধারণ করতে চান। কিন্তু খ্রীস্টান প্রধান রাশিয়া তা হতে দেবে না। স্বাধীনতাকামীরা অপরাধী, দেশদ্রোহী, জঙ্গী ! সুতরাং তাঁদের উপর নির্যাতন-নিষ্পেষন চালানো এবং হত্যা করা খুবই যুক্তিসঙ্গত এবং তাই হচ্ছে। চেচেন, ইংগুশ ও দাগেস্তানিরা হালে চরম জুলুম ও হত্যাকান্ডের শিকার। রুশ বাহিনীর নির্যাতনে শুধু ১৯৯৪-৯৯ সময়ে দেড় লক্ষাধিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়া। পঁচান্নব্বই শতাংশ আরবিভাষী বার্বার মুসলমানের দেশ। দীর্ঘদিন ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিলো। মানুষগুলো পশ্চিমা ধাঁচের গনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশ পরিচালনায় অভ্যস্ত। ১৯৯১ সনে নির্বাচন হলো এবং নির্বাচনে ইসলামপন্থীরা, ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট, সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলো। কিন্তু তাঁদের ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হলো না। তথাকথিত গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী ফ্রান্স তথা পশ্চিমাদের মদদপুষ্ট সামরিক জান্তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে বিজয়ী দলের নেতা-কর্মীদের উপর নির্যাতনের ষ্টিম রোলার চালালো। শুরু হলো গৃহযুদ্ধ। খুন হলো লাখ খানেক মানুষ। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা ইসলামি নীতিমালার ভিত্তিতে দেশ চালাতে চেয়েছেন এবং ওই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও তাঁদের চাওয়ার সাথে একমত হয়ে তাঁদের নির্বাচিত করেছেন।
ইউরোপের বলকান এলাকার মুসলিম প্রধান জনপদ বসনিয়া-হার্জেগোভিনা। মানুষগুলোর গায়ের রং সাদা আর ভাষা বসনীয়। ১৯৯২ সনে কম্যুনিস্ট শাসিত বৃহত্তর যুগোশ্লাভিয়া ভেঙ্গে যায় এবং অভ্যূদয় হয় সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কসোভো প্রভৃতি স্বাধীন দেশের। তন্মধ্যে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা ও কসোভো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। যখন স্বাধীনতার ঢংকা বেজে চলেছে, অতি সহজেই সার্বিয়া-মন্টিনিগ্রো, ক্রোয়েশিয়া স্বাধীনতা পেয়ে গেলো। কেননা তারা খ্রীস্টান অধ্যুষিত। আর মুসলমানরা স্বাধীনতা চাইতেই হৈহৈ রৈরৈ করে সার্ব ও ক্রোয়েট বাহিনীকে সাথে নিয়ে খ্রস্টানেরা চতুর্দিক থেকে মুসলমানদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। রচিত হলো সেব্রানিসা, জেপা, গোরাদজে’র মতো বিশ্ব যুদ্ধোত্তর ইউরোপের বৃহত্তর গণহত্যাগুলোর ট্র্যাজিক কাব্য। লক্ষাধিক ইউরোপীয় মুসলিম নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার, ২০-৫০ হাজার মহিলা ধর্ষিতা এবং ২.২ মিলিয়ন মানুষ ঘর-বাড়ি হারালো। তখনকার বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী জন মেজর দম্ভভরে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, ইউরোপে কোন মুসলিম দেশ সহ্য করা হবে না।
ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীর। বাদামী বর্ণের মানুষগুলোর ধর্ম ইসলাম, ভাষা উর্দু। ১৯৪৭ সনে দেশ ভাগের সময় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব (বর্তমান বাংলাদেশ) ও পশ্চিম (বর্তমান পাকিস্তান) পাকিস্তান এবং হায়দ্রাবাদ, জুনাগড় প্রভৃতি অঞ্চল নিয়ে মুসলিম দেশ এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের অপরাপর অঞ্চল নিয়ে আর তার সাথে কাশ্মীরকে জুড়ে দিয়ে হিন্দু দেশ হিন্দুস্তান তথা ভারত প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থায়ী বিরোধ জিইয়ে রেখে মোড়লি বজায় রাখায় কৌশলি বৃটিশরা কাশ্মীর, হায়দ্রাবাদ, জুনাগড় প্রভৃতি দেশীয় রাজ্য ও এখানকার মানুষগুলো নিয়ে পুতুল খেলায় মেতে ওঠে। বলা হয়, দেশীয় ৫০০ রাজ্যের রাজারা যে পক্ষে যোগ দিতে চায়, যোগ দিতে পারে। সবক’টি রাজ্য ভারত ইউনিয়নে যোগ দেয়। হায়দ্রাবাদ ও জুনাগড় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও তথাকার রাজা ছিলেন মুসলিম। আবার কাশ্মীর প্রায় শতভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য হলেও এর রাজা ছিলেন হিন্দু। হায়দ্রাবাদের মুসলিম নিজাম স্বাধীন থাকতে চেয়েছিলেন আর জুনাগড়ের মুসলিম রাজা পাকিস্তানে এবং কাশ্মীরের রাজা ভারতে যোগদান করেন। স্বাধীনতা লাভের এক বছরের মাথায় ভারত বেষ্টিত হায়দ্রাবাদ ও জুনাগড়ে সেনাবাহিনী দিয়ে অভিযান চালিয়ে ভারত রাজ্য দু’টি দখল করে নেয়। হায়দ্রাবাদের নিজাম বাধা দেবার চেষ্টা করে পরাজিত হন। যুদ্ধ পরবর্তী কয়েকদিনে ভারত সরকারের নীরব সমর্থনে হিন্দুরা পুরো রাজ্য জুড়ে গণহত্যা চালায়। এতে কম করে হলেও ৪০,০০০ মুসলমানকে ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়। পক্ষান্তরে মুসলিম কাশ্মীরের জনগন এবং পাকিস্তান রাজ্যটির মুক্তির জন্য এক অনিঃশেষ লড়াইয়ে রত। প্রায় সত্তর বছর ধরে কাশ্মীরের মুসলমানেরা স্বাধীকারের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, মরছে। প্রায় শতভাগ মুসলিম প্রধান রাজ্য কাশ্মীরের তৎকালীন হিন্দু মহারাজা হরি সিং এর ভারতে যোগদানের পরই কাশ্মীর সমস্যার সূত্রপাত। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তান ছোট বড় কয়েকটি যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং উভয় প্রতিবেশীর মধ্যে স্থায়ী বিরোধের আজো একটি জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি হয়ে আছে এটি। স্বাধীকারকামী কাশ্মীরী মুসলমানরা আজ জঙ্গী ও সন্ত্রাসী খেতাব প্রাপ্ত।
ভারত মহাসাগরের তীরবর্তী ইংরেজি এল আকৃতির আফ্রিকীয় দেশ সোমালিল্যান্ড বা সোমালিয়া। প্রায় শতভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশটির মানুষের গায়ের রং কালো। স্বৈরশাসক সাঈদ বারীর কুশাসনে অতিষ্ঠ জনগন যখন প্রতিবাদী হয়ে ওঠে সেই ১৯৮০ সনের দিকে তখন দেশে গৃহযুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হয়। তাতে ঘি ঢালে পার্শ্ববর্তী খ্রীস্টান দেশ ইথিওপিয়া। ইথিওপিয় বাহিনীর আগ্রাসনের ফলে সোমালি পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। সোমালি মুসলিমরা খ্রীস্টান বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললে তা সামাল দিতে জাতিসংঘের সহায়তায় আফ্রিকান ইউনিটি শান্তিরক্ষী পাঠায়। সোমালি ইসলামিক কোর্ট ইউনিয়ন তুমুল প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাশের খ্রীস্টান দেশ কেনিয়া আগ্রাসন চালায় ২০১১ সনে। ইহুদিবাদী ইসরাইলের সহায়তায় উক্ত দেশ দু’টির সম্মিলিত বাহিনী আগ্রাসন চলতে থাকে সোমালিয়ায়। তারা হত্যা করে হাজার হাজার মুসলমানকে। ক্ষমতায় বসায় তাদের বশংবদ পুতুল সরকারকে। পরে গড়ে ওঠে আল শাবাব নামের গেরিলা সংগঠন।
পৃথিবীর সব চাইতে পুরনো ও বৃহত্তর নির্যাতিত মুসলমানের আবাসস্থল হচ্ছে ফিলিস্তিন। মহাপ্রভূ আল্লাহ্ সোবহানাহু ওয়া তায়ালা কর্তৃক প্রেরিত প্রায় সকল নবী-রাসূলগনের পদধূলিধন্য পবিত্র স্থান এই ফিলিস্তিন। এখানে রয়েছে মুসলমানদের প্রথম কিবলা ‘মসজিদুল আকসা’। মানুষগুলো আরব আর তাঁদের ভাষা আরবি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পর সম্মিলিত পশ্চিমা বাহিনী তাবৎ দুনিয়ার ইহুদিদেরকে এখানে নিয়ে এসে একটি ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ভাবে। আসলে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইহুদিদের শঠতা ও কূটকৌশল থেকে নিজেদের জনগনকে নিরাপদ রাখতে তাদেরকে সরাতে চাইছিল। এতদুদ্দেশ্যে মিত্রশক্তি ১৯১৭ সনে ‘বেলফোর ঘোষণা’ গ্রহন করে। ১ম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সা¤্রাজ্যের পতনের পর বৃটিশরা ফিলিস্তিন দখল করে এবং তাদের সহায়তায় ১৯১৯-২৬ সময়ে মূলতঃ ৯০,০০০ ইউরোপীয় ইহুদি ফিলিস্তিনে এসে জড়ো হয়। ১৯৪৬-৪৭ প্রায় ৭০,০০০ ইহুদি ফিলিস্তিনে অনুপ্রবেশ করে। এইভাবে ছোট বড় দল মিলে মিলে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ইহুদিরা ফিলিস্তিনে এসে বসতি গড়তে থাকে। খ্রীস্টীয় ১৮০০ শতকে তথায় ইহুদি ছিলো মাত্র ৬,৭০০ জন এবং আরব ছিলো ২৬৮,০০০ জন। ১৯৪৭ সনে ৬৩০,০০০ ইহুদি আর আরবদের সংখ্যা দাঁড়ায় ১,৩১০,০০০ জনে। বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী কর্তৃক ইহুদি নির্যাতনের বিষয়টিকে ছুতা হিসেবে পেয়ে তারা যৌথভাবে টাকা-কড়ি, উপায়-উপকরণ, অস্ত্র-শস্ত্র ইত্যাদি দিয়ে সারা দুনিয়া থেকে ইচ্ছুক ইহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে নিয়ে এসে জবরদস্তি বসায় এবং মুসলমানদেরকে তাঁদের শত সহ¯্র বছরের বসতবাটি থেকে উৎখাত করে। ১৯৪৮-৪৯ সময়ে ফিলিস্তিনের ৭৫০,০০০ আরবকে জবরদস্তি স্বদেশ থেকে বের করে দেয়া হয়। আজকে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হয়ে যাযাবরের জীবন যাপন করছে অন্ততঃ সত্তর বছর ধরে। এঁরা হচ্ছেন পৃথিবীর সবচাইতে দীর্ঘমেয়াদী শরণার্থী। তাঁদের প্রায় পুরো দেশটি দখল করে পশ্চিম দিকে ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ক্ষুদ্র উপকূল গাজা এবং পূর্বে জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরবর্তী অঞ্চলে এখনো ফিলিস্তিনিদের ক্ষুদ্র একটি অংশ রয়ে গেছে। কিছুদিন পর পর এক একটি ইস্যু সৃষ্টি করে উত্তেজনা ছড়ানো হয় আর প্রতিবাদী ফিলিস্তিনিদেরকে গুলি করে মারা হয়। ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী ও জঙ্গী এই জিগির তুলে ফিলিস্তিনিদের জমি দখল করা হয় এবং তাতে ইহুদি বসতি স্থাপন করা হয়। এভাবে নিয়মিত ফিলিস্তিনিদের জায়গা-জমি জোর জবরদস্তি দখল করার প্রক্রিয়া চলমান আছে আর তাঁরা নিত্য বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ হয়ে চলেছেন।
থাইল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার (বার্মা)। বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত ঘেঁষা মিয়ানমারের আরাকান স্টেটের অধিবাসী রোহিঙ্গা মুসলমানেরা হাজার বছর ধরে রোসাং তথা আরাকানের ভূমিপুত্র (সান অব দা সয়েল)। তারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাভাষী, নৃতাত্ত্বিকভাবে বাঙালি বংশো™ূ¢ত। খৃস্টীয় সপ্তম-অষ্টম শতকে আরাকানে আরব বণিকদের আগমনের মাধ্যমে সেখানে মুসলিমদের বসতি স্থাপন শুরু হয়। ১৩৪৬ সনে বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা আরাকানে অনেক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার দেখেছেন মর্মে উল্লেখ আছে। নরমিখলা ওরফে সোলায়মান শাহের শাসনামলে মুসলিম প্রভাব এতোবেশি ছিলো যে, আরাকান নৃপতিগণ তাঁদের দেশীয় নামের সঙ্গে মুসলিম পদবি যোগ করতেন। আরাকানের প্রায় ১৫ লক্ষ মুসলমান যা ওই অঞ্চলের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী কয়েক শতাব্দী ধরে বর্মী শাসক গোষ্ঠী ও বৌদ্ধ মগদের জুলুম-নিষ্পেষণের শিকার। আরাকানকে মুসলমানশূর্ণ্য করার ১৭৮৫ সন থেকে শুরু হওয়া পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৮০২, ১৯৪২, ১৯৪৮, ১৯৭৪, ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৯১-৯২ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সনে পরিকল্পিতভাবে বৌদ্ধ উগ্রবাদীদের লেলিয়ে দিয়ে বাঁধানো দাঙ্গায় প্রায় দুই লক্ষাধিক মুসলমানকে হত্যা করা হয় এবং প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। এখনো তারা বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব প্রভৃতি দেশে কিছু শরণার্থী, কিছু স্টেটলেস পার্সন, কিছু পালিয়ে থাকা যাযাবর ইত্যাদি আকারে রয়েছেন। খোদ মিয়ানমারের ভিতরেও ইন্টারনালি ডিসপ্লেসড পার্সন হিসেবে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান শিবিরে মানবেতর অবস্থায় রয়েছেন।
১ম কিস্তি


শেয়ার করুন