বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়কে হিললাইন বাস সার্ভিস বন্ধ

fileমুফিজুর রহমান :

বাইশারী-ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক পরিবহন সার্ভিস চলাচল অনুপযোগী হওয়ায় অবশেষে হিললাইন বাস সার্ভিস অঘোষিত বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে শুক্রবার সকাল ১০ টায় ঈদগড় বাজার এলাকা থেকে সড়ক সংস্কারের দাবীতে হিললাইন, জীপ, সিএনজি, টমটম, শ্রমিক সমিতি ও এলাকাবাসীর উদ্দ্যোগে মানববন্ধন হয়। এর সপ্তাহ না পেরুতেই অবশেষে উক্ত সড়কে গাড়ী যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দেয়ালে পিট ঠেকে যাওয়ায় গাড়ী যোগাযোগ বন্ধ করা হয়েছে বলে হিললাইন কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা যায়।
মানববন্ধনে ১৫ দিনের মধ্যে সড়ক মেরামত করা না হলে প্রয়োজনে যান চলাচল বন্ধ করা হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন হিল লাইন মালিক সমিতি ঈদগাঁও অফিস কর্মকর্তা মফিজুর রহমান। তারই ধারাবাহিকতায় ১১ আগষ্ট সড়কে গাড়ী চলাচল অনুপযোগী এবং গাড়ীর যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হিললাইন বাস গাড়ী। পাশাপাশি রাস্তায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় পূর্বেই বন্ধ ছিল সিএনজি ও টমটম। বাধ্য হয়ে সাধারন যাত্রীরা বাইশারী থেকে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে করে দ্বীগুন ভাড়া দিয়ে ব্যবসায়ীক, ব্যক্তিগত, চিকিৎসা এবং কর্মস্থলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রমিক মালিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা বলেন, লাখো মানুষের দূর্ভোগ নিরসনের জন্য সড়কটি অচিরেই সংস্কার করা জরুরী। পুরো সড়ক জুড়েই রয়েছে বড় বড় গর্ত। যার কারণে সড়কটি বর্তমানে মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ গাড়ী অকেজো হয়ে পড়েছে।
গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে আসা এহসান জানান, তিনি পুরো পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তিন দিন পূর্বে বাইশারীতে বাবা-মাকে দেখতে আসছেন। তখন সড়কটিতে গাড়ী চলাচলের সময় বড় বড় গর্তে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। কষ্ট হলেও গ্রামের বাড়ীতে আসতে পেরে খুব আনন্দ লাগছে। কিন্তু যাওয়ার বেলায় শুনি হিললাইন বাস গাড়ী চলাচল বন্ধ। তাই বাধ্য হয়ে সিএনজিতে উঠার চেষ্টা করি। তবে শর্ত জুড়ে দিল ড্রাইভার। অন্তত ৫০ টি জায়গায় নামতে হবে এবং গাড়ী গর্তে পড়ে গেলে ঠেনে তুলতে হবে। কি আর করা শর্ত মেনেই গাড়ীতে উঠলাম। চিকিৎসা নিতে যাওয়া আমানুল হক জানায়, গাড়ী চলাচল বন্ধ হওয়ায় ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলে চড়েই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে কক্সবাজার সদরে যেতে হচ্ছে। বর্তমানে উক্ত সড়ক দিয়ে জটিল রোগে আক্রান্ত ও গর্ভবতি মায়েদের চলাচলে মৃত্যুও হতে পারে বলে জানালেন একাধিক যাত্রী।
বাইশারীস্থ হিললাইন অফিস কর্মকর্তা মোঃ সেলিম জানিয়েছেন, উক্ত সড়কে মোট ২১টি হিললাইন বাস সার্ভিস চালু ছিল। কিন্তু সড়কে ব্যাপক ভাঙ্গনে গাড়ী গুলো চলতে চলতে ইতিমধ্যে সবগুলো বাস গাড়ীই অকেজো হয়ে পড়েছে। গাড়ীর যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ায় সব গাড়ীই বর্তমানে গ্যারেজে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্বেও তারা সড়কে বাস সার্ভিস চালু রাখতে পারছেন না মালিকরা। তিনি আরো জানান, হিললাইন সার্ভিস এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। তবে হিললাইন সার্ভিস চালু রাখার ব্যাপারে আজ সিদ্ধান্ত হবেও জানান এই কর্মকর্তা।
বর্তমানে সড়কে গাড়ী যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্মৃদ্ধ এলাকা বান্দরবানের বাইশারী। ইউনিয়নের ত্রিশ হাজার জনসাধারণের একমাত্র চলাচল পথ ঈদগড়-ঈদগাঁও সড়ক। বাজার ব্যবসায়ীরাও তাদের দোকানে পণ্য গুলো ঈদগাঁও বাজার থেকে আমদানী করে থাকেন। তাছাড়া বাইশারী এলাকা থেকে প্রতি মাসে রাবার পন্য সামগ্রী চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বিভিন্ন গোড়াউনে রপ্তানী হয়। যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় রাবার বাগান মালিক থেকে বাজার ব্যবসায়ী ও সাধারন লোকজন মহা সংকটে পড়েছে। দুই জেলার টানাপোড়ন লেগে থাকায় সড়ক সংস্কারে বিলম্ব হচ্ছে বলেও জানালেন একাধিক জনপ্রতিনিধি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, সড়কের একাংশ পড়েছে পার্বত্য বান্দরবানে এবং আরেক অংশ পড়েছে কক্সবাজার জেলার আওতায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, সড়কটি আসলেই কার তারা জানেন না। কেউ বলছেন এলজিআইডি’র আবার কেউ বলছেন রোড্স এন্ড হাইওয়ে’র।
উক্ত সড়কের ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগ বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাইল মিয়া সাংবাদিকদের মুঠোফোনে বলেন, সড়কটি কার এ প্রশ্নে কাগজ পত্র দেখে বলা যাবে। তবে তিনি বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান।


শেয়ার করুন