বাঁশখালী ট্র্যাজেডি : শুক্রবার সারাদেশে বিক্ষোভ

2016_04_05_19_40_07_MAFmxuLszRnxgRhPgr1qMcvrjCM5SW_originalসিটিএন ডেস্ক:

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় আগামী শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাঁশখালী হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং মানুষ-প্রকৃতি বিধ্বংসী সকল লুণ্ঠন প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ।

উন্নয়নের নামে এ সরকার দেশের সাধারণ মানুষের জমি দখল প্রকল্প চালাচ্ছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে বাঁশখালীতে গ্রামবাসী আর পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এস আলম গ্রুপ ও চীনা কোম্পানিকে দায়ী করেন আনু মোহাম্মদ। পাশাপাশি সংঘর্ষের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওই গ্রুপ আর কোম্পানি এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে জমি লিখে নেয় এবং তা জোরপূর্বক দখলে নিয়ে সেখানে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চেষ্টা চালায়।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতারণার শিকার হচ্ছে বুঝতে পেরে বাঁশখালির সাধারণ মানুষ এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। আর সরকার সাধারণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই গ্রুপ ও কোম্পানির হয়ে নিরীহ মানুষের ওপর পুলিশি আক্রমণ চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়।’

গ্রুপ, কোম্পানি, পুলিশ বাহিনী ছাড়াও এ সংঘর্ষের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তরকেও দায়ী করেন আনু মোহম্মদ।

এসময় সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি বাঁশখালী বিদ্যুৎ প্রকল্প উন্নয়ন প্রকল্পই হয়, তাহলে স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সমস্যা কি?’

সমাবেশ থেকে দাবি তুলে বলা হয়, বাঁশখালী সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার পাশাপাশি প্রকৃতি বিধ্বংসী ওই কয়লাভিত্তিক প্রকল্প থেকে সরে আসেতে হবে।

আনু মোহাম্মদের সভাপতিত্বেব সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন- সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী ও বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন প্রমুখ।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার (৪ এপ্রিল) চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ নির্মাণের প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ৬ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- গণ্ডামারা ইউনিয়নের চরপাড়ার দুই ভাই মরতুজা আলী (৫৫) ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৪৪), একই ইউনিয়নের রহমানিয়া সিনিয়র মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা জাকের আহমদ (৬০) ও মো. জাকের হোসেন। এছাড়া মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকালে গুলিবিদ্ধ আরও দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তারা হলেন জহিরুল ইসলাম ও মেয়ে (অজ্ঞাত)। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন গুলিবিদ্ধ আরও ১০-১৫ জন। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এদিকে বাঁশখালীতে নিহতের হওয়ার ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলা করেছে নিহত ব্যক্তিদের পরিবার ও একটি মামলা করেছে পুলিশ। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে দেড় থেকে দুই হাজার জনকে। আজ সকালে বাঁশখালী থানায় এসব মামলা করা হয়। এরপর থেকে বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুরুষদের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় লোকজন বলছে, গ্রেপ্তার এড়াতে গ্রামবাসী সতর্ক রয়েছে। নিহত আনোয়ারুল ইসলাম ও মরতুজা আলীর ভাই মওলানা বশির আহমেদ বাদী হয়ে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ১৪ থেকে ১৫শ’ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন।

মামলার এজাহারে ছয়জন আসামির মধ্যে বসতভিটা ও গোরস্থান রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক লিয়াকত আলীও রয়েছেন। নিহত জাকের হোসেনের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম আরেকটি হত্যা মামলা করেছেন। এজাহারে তিনি কারও নাম উল্লেখ করেননি। বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাহার মিয়া বাদী হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেছেন।

বাংলামেইল


শেয়ার করুন