উখিয়ায় খালে

বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ : অনাবাদি পড়ে আছে দুই’শত একর জমি

unnamed (1)এম. শাহজাহান চৌধুরী শাহীন॥

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের লম্বরী খালে ৩টি বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছে একটি প্রভাবশালী চক্র। আর ওই খালে দীর্ঘদিন ধরে চলছে মৎস্য চাষ। এতে করে ২ শত একর জমি অনাবাদি পড়ে রয়েছে গত কয়েক বছর ধরে। চাষাবাদ করতে না পেরে চরম বেকায়দায় পড়েছে সহস্রাধিক স্থানীয় কৃষক।

স্থানীয় লোকজন জানান, এক সময় জোয়ার-ভাটা ছিল এ লম্বরী খালে। জাল ফেলে মাছ ধরত স্থানিয়রা। খালের দু’পাড়ে বাইন গাছ, কেয়া বন, ভিউ কাটা বন সহ নানা প্রজাতির গাছ ছিল। খালের দু’পাড়ের জমিতে চাষাবাদ হত। কিন্তু স্থানীয় মৃত এজাহার বলীর ছেলে ইমাম হোসেন এ খালের মুখে বাঁধ দিয়ে দখল করে নেয়। লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে শুরু করে মৎস্য চাষ। লবণাক্ত পানিতে ডুবে থাকায় নদীর পাড়ের দুই শত একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। জালিয়াপালং, লম্বরী, পশ্চিম পাইন্যাশিয়া, চাকঢালা, ফরেষ্ট অফিস পাড়া, জার্মান পাড়া, সমিতি ঘোনা সহ পাহাড়ী এলাকার বর্ষায় বৃষ্টির পানি চলাচলের একমাত্র মাধ্যম এ খাল। খালের মুখে বাঁধ দিয়ে দখল করায় বর্ষায় বৃষ্টি ও ঢলের পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে বর্ষায় নদীর দু’পাশের লম্বরী ও জালিয়াপালং গ্রামের রাস্তাঘাট, চাষাবাদের জমি থাকে পানির নিচে। বসতবাড়ীতে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জালিাপালং ইউনিয়নের লম্বরী ও জ্বালিয়াপালং গ্রামের মধ্যবর্তী বয়ে যাওয়া লম্বরী খাল। রেজু নদীর মোহনায় লম্বরী খালের মুখে একের পর এক রয়েছে ৩টি বাঁধ। এ খালের পুর্ব পাশে ২ শত একর জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। হচ্ছে না কোন চাষাবাদ। তবে কয়েকদিন পূর্বে মাছ ধরার জন্য পানি ছেড়ে দিয়েছে।

কৃষকরা জানান, ইমাম হোসেনের রয়েছে ৭ ছেলে। স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এ পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার কেউ সাহস করেন না। এমনকি নদীর পাশেও কাউকে যেতে দেননা। এতে নদীর দু’পাশের জমি গুলোও একে একে দখল করে নেয় এ প্রভাবশালী।

স্থানীয় মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মির আহাম্মদ জানান, লম্বরী খালের পুর্ব পাশে তার ৭ একর ৬০ শতক জমিতে চাষাবাদ করা যাচ্ছেনা দীর্ঘ সময় ধরে। বাঁধ দিয়ে খাল দখল করে রাখায় বর্ষায় বৃষ্টি ও পাহাড়ের ঢলের পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মৌসুমেও জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে রাখায় জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হয়না।
মৃত নজির আহাম্মদের ছেলে জাফর আহাম্মদ জানান, খালের পুর্ব পাশে তার ২ একর ৮০ শতক জমি রয়েছে। খালে বাঁধ দিয়ে লবণাক্ত পানি ঢুকিয়ে মৎস্য চাষ করায় তার জমিতেও চাষাবাদ করা যাচ্ছেনা।
মৃত মিয়া হোছনের ছেলে নছরত আলী জানান, ২একর ৪০ শতক জমির মালিক তিনি। তৎমধ্যে নদীর পাশের ৪০ শতক জমি জবর দখল করে রেখেছে ইমাম হোসেন। খালে বাঁধ দিয়ে পানি ভরপুর রাখায় অপর ২একর জমিতেও চাষ করা যাচ্ছেনা ১২ বছরের অধিক সময় ধরে।

রামু উপজেলার পেঁচারদ্বীপ এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ওয়ারিশরা জানান, লম্বরী খালের পাশে তাদের ১একর ৬০ শতক জমি রয়েছে। এক যুগ ধরে চাষাবাদ করতে না পারলেও কয়েক বছর ধরে এ জমি দখল করে রেখেছে ইমাম হোসেন।

স্থানিয় আব্দুচ ছালাম, ফরিদ আলম, শহর মুল্লুক, আলী হোসেন, আব্দুল আলিম, ইসহাক আহমদ জানান, দু’পাশের গাছ পালা কেটে নদীর দু’পাড় সমতল জমিতে পরিণত করে প্রভাবশালী ইমাম হোসেন। খালে বাঁেধর কারণে জলাবদ্ধতায় প্রতি বর্ষায় বসতবাড়ী, ফসলী জমি, রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

এবিষয়ে অভিযুক্ত ইমাম হোসেন খালে বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষ করার সত্যতা স্বীকার করে জানান, তিনি কারো জমি দখল করেননি। এর বাইরে কিছু বলতে রাজী হননি তিনি।


শেয়ার করুন