ঐতিহ্যবাহী

বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসা উৎসবে সকল সম্প্রদায়ের মিলন মেলা

qawwখালেদ হোসেন টাপু,রামু :

কক্সবাজারের রামুর বাঁকখালী নদীতে প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে জাহাজ ভাসা উৎসবে নেমেছিল মানুষের ঢল। বসেছিল সব ধর্মের মানুষের মিলনমেলা। জাহাজ ভাসা উৎসব বৌদ্ধদের মাঝে সীমাবদ্ধ না থেকে পরিণত হয়েছিল বাঙালির প্রাণের উৎসবে। বৃহষ্পতিবার ২৯ অক্টোবর বাঁকখালী নদীতে রামু কেন্দ্রীয় জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদ এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রামু কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল বলেছেন, রামুকে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে যে কোন মুল্যে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হবে। রামু কেন্দ্রীয় জাহাজ ভাসা উৎসব উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুমথ বড়ুুয়া সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অর্পন বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম, বিশিষ্ট সাংবাদিক জুলফিকার আলী মাণিক, রাজশাহীর- ৩ আসনের সাংসদ আইয়ান উদ্দিন, রামু উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মুসরাত জাহাস মুন্নি, রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুণ বড়ুয়া, রামু থানার ওসি আবদুল মজিদ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মা, ফতেখাঁরকুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফরিদুল আলম, শিল্পী প্রবীর বড়ুয়া, রামু প্রেস ক্লাবের উপদেষ্টা দর্পণ বড়ুয়া, আওয়ামীলীগ নেতা মাষ্টার ফরিদ আহমদ, জেলা যুবলীগ নেতা পলক বড়ুয়া আপ্পু, রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ নীতিশ বড়ুয়া, দৈনিক কক্সবাজার বার্তার নির্বাহী সম্পাদক দুলাল বড়ুয়া, কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কোম্পানী, রাজারকুলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান স্বপন বড়ুয়া মেম্বার, রামু কেন্দ্রীয় যুব পরিষদের আহবায়ক রজত বড়ুয়া রিকু প্রমুখ।

এদিকে বাংলাদেশের প্রবীণ বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং রামু সীমা বিহারের অধ্যক্ষ পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের জানান, কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীতে যুগ যুগ ধরেই এ উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। আজ থেকে ২০০ বছর আগে মিয়ানমারে মুরহন ঘা নামক স্থানে একটি নদীতে মংরাজ ¤্রাজংব্রান প্রথম এ উৎসবের আয়োজন করে। মূলত মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের রামুতে এ উৎসবের প্রচলন হয়। তিনি জানান, কক্সবাজারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বসবাসের আধিক্য ছাড়াও এখানকার বৌদ্ধদের রয়েছে মিয়ানমারের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনেকটাই ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং কৃষ্টির সঙ্গেমিল।

নদীতে কয়েকটি নৌকা একসঙ্গে করে তার উপরই বসানো হয় বাঁশ, কাঠ ,বেত, ও রঙ্গিন কাগজের কারুকার্যে তৈরী জাহাজগুলো। দৃষ্টি নন্দন এবং অপূর্ব কারুকার্যের এসব জাহাজ তৈরিতে পঙ্খীরাজ, হাঁস, ময়ূরসহ বিভিন্ন প্রাণী ও মূর্তির প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়। এ কারণেই দৃষ্টি কাড়ে মানুষের। নদীতে ভাসানো প্রতিটি জাহাজের মাইকে ক্যাসেট প্লেয়ার বাজানো হয়। সেই সঙ্গেঢোল, কাঁসর, মন্দিরা সহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু কিশোর ও যুবকরা নেচে গেয়ে মেতে উঠে নদী তীরের সে এক অন্যরকমের আনন্দ উৎসবে। এ সময় নেচে গেয়ে এবং জাহাজের মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন, নাচ, গান সহ নানা আনন্দায়োজন। প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদী তীরের এ আনন্দে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও মেতে উঠে । জাহাজ ভাসানো উৎসবের এ রকম চিত্র উপভোগ করতে নদীর দুই তীরজুড়ে হাজার হাজার লোক সমবেত হয়।


শেয়ার করুন