দখলদার খালেক চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সাংবাদিকদের হামলা

বাঁকখালী তীরে অবৈধ স্হাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু

ইসলাম মাহমুদঃ

কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দুই শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে নদীর কস্তুরাঘাট মোহনা থেকে এই অভিযান শুরু হয়। এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।

সারাদিন ধরে চলা এই উচ্ছেদ অভিযানে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারি অবৈধ দখলদার আবদুল খালেক চেয়ারম্যানের জবরদখল করা স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়।

অভিযানের মাঝামাঝি সময়ে অবৈধ দখলদার আবদুল খালেক চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে শুরু করেন। এ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে তার তর্কাতর্কি শুরু হয়। এক পর্যায়ে খালেক চেয়ারম্যান দলবল নিয়ে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। ওই সময় তিনি বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের ওপর হামলে পড়েন। পরে আইন শৃংখলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এখানে বাঁকখালী নদীর তীর দখল করে কয়েক বছর ধরে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি নদী তীরের ৬০০ হেক্টর প্যারাবন নিধন করে একে একে চলছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। নদীর কস্তুরাঘাটের সঙ্গে খুরুশকুলের সংযোগ স্থাপনে বাঁকখালী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এই সেতুর সংযোগ সড়কের দুই পাশে প্যারাবন কেটে এর মধ্যে শতাধিক পাকা ভবন তৈরি করেছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।

নদী দখলের এই মহোৎসবে রাজনীতিক, ব্যবসায়ি, আইনজীবী, সাংবাদিক থেকে শুরু করে খোদ পৌরসভা কর্তৃপক্ষও রয়েছে। কয়েক মাস আগেও যেখানে ছিল ম্যানগ্রোভ বা প্যারাবন, পাখির কিচিরমিচির শব্দ ছিল; সেখানে এখন স্থাপনার পর স্থাপনা।

অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবু সুফিয়ান বলেন, সকাল থেকে শুরু হওয়া এই উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। আগামিকাল বুধবারও উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, পর্যায়ক্রমে বাঁকখালী নদীর সব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এই জমি বিআইডব্লিউটিএকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য হাইকোর্টের রায় রয়েছে।

কোনোভাবেই নদী দখলের প্রশ্নে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বাঁকখালীর অবৈধ দখল উচ্ছেদে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন। ওই রিট পিটিশনের বিপরীতে উচ্চ আদালত বাঁকখালী নদীর সমস্ত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বারবার আদালতের কাছে সময় প্রার্থনা করে দীর্ঘদিন উচ্ছেদ অভিযান থেকে বিরত থাকে। সর্বশেষ উচ্চ আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত স্থাপনা উচ্ছেদ করে বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করে আদালতকে প্রতিবেদন জমা দেয়া নির্দেশনা দেন। এই আদেশের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন অন্য সরকারি সংস্থা গুলোর সহায়তা নিয়ে মঙ্গলবার ২৮ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে।


শেয়ার করুন