বাঁকখালীর সীমানা চিহ্নিত করা সকলের দাবী

বাঁকখালী খনন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ

বিশেষ প্রতিবেদক :bakkhali-kastora-ghat-720x540-720x540
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালী খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এই নদীর কক্সবাজার শহরের কস্তুরঘাট থেকে মহেশখালী জেটিঘাট পর্যন্ত অংশের খনন কাজ শুরু করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। পরে আরো সাড়ে ২৮ কিলোমিটার নদী খননসহ নানাবিধ কাজ করা হবে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছাড়া এলাকায় ‘বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে’ বাঁকখালী খনন কাজের উদ্বোধন করবেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান এমপি। একই দিন কস্তুরাঘাট এলাকায় নির্মিত বিআইডব্লিউটিএ’র বিশ্রামাগারও উদ্বোধন করার কথা রয়েছে তাঁর।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার বলেন, ‘পর্যায়ক্রমে কক্সবাজারের কস্তুরাঘাট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত নৌ-পথের মধ্যে ১৯ লক্ষ ঘনমিটার অংশ খনন করবে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়াও সেখানে বয়াসহ নৌ-পথ সংরক্ষনের আনুষাঙ্গিক নানা কাজ করা হবে। এই খাতে ব্যয় হবে সর্বমোট ৪৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের মধ্যে খননসহ প্রকল্পের সব কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, ‘বাঁকখালী নদীর কক্সবাজার শহরের কস্তুরাঘাট থেকে মহেশখালী জেটিঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার অংশে খনন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। পরে বাঁকখালী নদীর কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেকের মোহনা থেকে রামুর কাউয়ারখোপ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার অংশ খনন, বাঁধ নির্মাণসহ নানাবিধ কাজ করবে পাউবো। এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাঁকখালী নদী খননের যে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে তাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন সম্পৃক্ততা নেই।’
সবিবুর রহমান আরও জানান, গত বছরের ২২ নভেম্বর কক্সবাজার জেলার বাঁকখালী নদী বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ ও ড্রেজিং প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সম্প্রতি প্রকল্পটির প্রশাসনিক অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপরই কার্যাদেশ দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে পাউবো। প্রথম পর্যায়ের এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।
কক্সবাজারের পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বলছে, কক্সবাজার জেলা শহর ও সংলগ্ন এলাকায় অব্যাহত পাহাড় নিধনের ফলে বর্ষায় পাহাড়ি মাটি বাঁকখালীতে গিয়ে পড়ছে। নালা-নদর্মাগুলোকে মানুষ ব্যবহার করছে ডাস্টবিনের বিকল্প হিসেবে। এতে দিন দিন ভরাট হচ্ছে জেলার প্রধান এই নদী। এছাড়া বাঁকখালী নদীর তীরজুড়ে প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরী করায় নদীর স্বাভাবিক গতি প্রবাহে বিঘœ হচ্ছে। মাটি ও ময়লা-আবর্জনা জমে ক্রমাগতভাবে নাব্যতা হারাচ্ছে নদী। এই অবস্থায় বাঁকখালীর ড্রেজিং অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
সচেতন মহলের দাবী , ‘জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে আগে বাঁকখালী নদীর সীমানা পরিচিহ্নিত করা দরকার। তাছাড়া ড্রেজিংয়ের পর বালু, মাটি কোথায় নেওয়া হবে তারও একটি কার্যকর পরিকল্পনা থাকা দরকারর। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় ভরাটের কাজে এইসব মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বিগত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলার প্রধান এই নদী খনন করা হয়নি। উদ্ভুত পরিস্থিেিত পরিকল্পিত উপায়ে বাঁকখালী খনন হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে কক্সবাজার শহরের মানুষ। এই এলাকার নৌ-পর্যটনের বিকাশের ক্ষেত্রেও নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হবে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার শহরের নাজিরটেকের বাঁকখালী নদীর মোহনা থেকে রামুর কাউয়ারখোপ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার নদী খনন ছাড়াও নদীর একপাশে ১৮ কিলোমিটার এবং অন্যপাশে ২০ কিলোমিটার বাঁধ তৈরি করা হবে। বাকখালীর নদীর ১.০৮ কিলোমিটার এলাকার নদী শাসন কিংবা ভাঙ্গন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এরমধ্যে বাংলাবাজার, মুক্তারকুল, উলুবনিয়া, মিঠাছড়ি, মিস্ত্রীপাড়া, হাইটুপি, মনিরঝিল ও সিকদার পাড়ার মারাত্বক ভাঙ্গন ঠেকাতে ‘নদী শাসন’ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এছাড়া পানি নিয়ন্ত্রনেরে জন্য ৮ টি স্লইচ গেইট নতুন করে নির্মাণ করা হবে। এগুলো নির্মিত হবে তারাবনিয়াছড়া, গোদারপাড়া, আলী কদম ব্রিকফিল্ড, কুলিয়ারছড়া, ঘাট কুলিয়ার ছড়া, জয়নাল ছড়া, খতেখারকুল ও রামুর বড়ুয়া পাড়ায়। স্লুইচ গেইট সংলগ্ন এলাকায় ১২ কিলোমিটার খাল খনন করা হবে। এছাড়া রামুর হাইটুপির যেসব স্থানে নদী শাসনের ব্যবস্থা গ্রহন করা সম্ভব নয় সেখানে ৮০০ মিটার ফ্লাট ওয়াল নির্মাণ করা হবে।
সূত্রমতে, ২০১১ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফরে এসে কক্সবাজারের প্রধান নদী বাঁকখালীর ড্রেজিংসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রতিশ্রুতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুসারে পরবর্তীতে কক্সবাজার পাউবো’র পক্ষ থেকে বাঁকখালীর নাব্যতা রক্ষায় নানা কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে প্রথমে সিদ্ধান্ত হয় ওই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবার মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জানানো হয় পাউবো’র অধিনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর প্রেক্ষিতে নতুন করে প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।


শেয়ার করুন