বাঁকখালী খননে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ

Bakkhali picশাহেদ ইমরান মিজান :

কক্সবাজারের অন্যতম বৃহৎ নদী বাঁকখালী খনন প্রকল্প অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া পর এই নদীর খননে প্রাথমিক ভাবে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রাণালয়। বরাদ্দ বাস্তবায়নে এরই মধ্যে প্রক্রিয়াও প্রায়ই শেষের পর্যায়ে এসেছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বাঁকখালী নদী খননে ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রস্তাবকৃত প্রকল্পকে দু’টি পর্যায়ে ভাগ করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রকল্প-১ এর আওতায় প্রাথমিক ভাবে ২৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বিগত ঈদুল আযহার কয়েক দিন আগে মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে প্রাক প্রকল্প বাস্তবায়ন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় কার্য পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়। শিগ্গিরই চূড়ান্ত সভা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানানো হয়।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বাঁকখালী নদী খননে ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড। কর্মপরিকল্পনা ও স্তর ভিত্তিক ব্যয় নির্ধারণসহ পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়। প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে নদীর ২৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খনন, ৫৫ কিলোমিটার এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, ৫ কিলোমিটার এলাকায় ব্লক স্থাপন ও দু’পারের ৪০ কিলোমিটার খাল খনন। কিন্তু দীর্ঘ দু’বছর যাবত প্রকল্পটির কোন অগ্রগতি হয়নি।

সূত্র মতে, ২০১১ সালের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার সফরে এসে বাঁকখালীর নদী খননের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর পরই কক্সবাজার পাউবো’র পক্ষ থেকে বাঁকখালীর নাব্যতা উদ্ধার ও রক্ষায় নানা কর্মপরিকল্পনা সম্বলিত একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তও দেন। সিদ্ধান্ত মতে, প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা ছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় দু’বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চিঠি আসে। তাতে জানানো হয় পাউবো’র অধিনেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। তখন থেকে কর্মপরিকল্পনা ও ব্যয় নির্ধারণসহ প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানোসহ প্রকল্পটির ব্যাপারে দেখভাল করে আসছে কক্সবাজার পাউবো কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে চলতি বছরের জুনে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী কক্সবাজারে এসে দ্রুত বাঁকখালী নদী খননের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তাঁর ঘোষণার পর প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মনে করছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, বিগত ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কক্সবাজারের প্রাণ বাঁকখালী নদীর খননের জন্য কোন ধরণের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিপরীত দিকে কক্সবাজার শহরসহ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিযোগিতামূলক পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকায় নদীর নাব্যতা ভয়াবহ আকারে হ্রাস পেয়েছে। গত ২০ বছরে বাঁকখালীতে কি পরিমাণ নাব্যতা কমেছে তা নির্ধারণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহনের (বিআইডাব্লিউটিআই) কাছেও কোন ধরণের পরিসংখ্যান নেই।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে নদীর প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কক্সবাজার কস্তুরাঘাটসহ আরো বেশ কিছু পয়েন্টে নাব্যতা হ্রাসের মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। একই সাথে কস্তুরাঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য সৃষ্টি হয়েছে ডুবোচর। এ কারণে বিগত ৪ বছর ধরে বন্যার শিকার হচ্ছে রামু ও কক্সবাজারের বিস্তীর্ণ জনপদ। অন্যদিকে ডুবোচরে আটকা পড়ে এখন নৌকা চলাচলে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহীমুল্লাহ বলেন, ‘শুধুমাত্র বাঁকখালীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় প্রতিবছর রামু ও কক্সবাজারের জনপদগুলো ভয়াবহ বন্যার শিকার হচ্ছে।’ একই কথা বলেন রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল আলম।

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটের স্পীডবোট চালক ফিরোজ উদ্দীন জানান, কস্তুরাঘাট থেকে বঙ্গোপসাগরের মোহনা পর্যন্ত বাঁকখালী নদীতে ১৫ টির বেশি ডুবোচর সৃষ্টি হয়েছে। ভাটার সময় এসব ডুবোচরে আটকা পড়ে স্পীডবোট চলাচল পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হয়। জোয়ারের সময়ও বড় বড় মাছধরার বোটগুলো অনেক সময় আটকা পড়ে।
এদিকে প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলেও অবশেষে বাঁকখালী নদী খনন প্রকল্প আলোর মুখ দেয়ায় স্বস্তি এসেছে কক্সবাজারের মানুষের মাঝে। অনেকে এই খবরে আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

বাঁকখালী বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি মো: সরওয়ার আলম বলেন, ‘বাঁকখালী নদী খনন অবশ্যই খুশির খবর। এই জন্য আমরা সরকারকে সাধুবাদ জানাই। তবে প্রকল্পটি যাতে সঠিকভাবে বাস্তায়ন হয়ে সে ব্যাপারে নজর রাখতে হবে। কোনভাবে যাতে অবহেলা করা যাবে না। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমরা সেই দাবী করছি।’

নদী বাঁচাও আন্দোলনের কক্সবাজার জেলা সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, ‘বাঁকখালী নদী কক্সবাজারের ইতিহাস-ঐহিত্যের সাথে জড়িয়ে আছে। নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় কক্সবাজারের অস্থিত্বতে টান পড়েছে। একটু পরে হলেও খনন প্রকল্প আলোর মুখ দেখায় আমরা আনন্দিত।’

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, ‘চূড়ান্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন সভার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সব মিলে চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের টাকা ছাড় হবে বলে আশা করছি।’


শেয়ার করুন