বন্যা হচ্ছে? আলহামদুলিল্লাহ…

শামশুল আলম শ্রাবণ 

এদেশের প্রতিটি জনপদ গড়ে উঠেছে কোন না কোন নদীর অববাহিকায়। যে নদী যত প্রসস্থ ও দীর্ঘ সে নদীর দুকূলে জনবসতি ও তত দীর্ঘ। এদেশে মঙ্গোলীয়, মিশরীয়, তুর্কি, আফগান, আরব্য, ব্রিটিশীয়দের আগমন এই নদী পথেই। ১৭৫৭ এর স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া, ১৯৪৭ এ দেশভাগ, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বিদেশিরা সব কেড়ে নিলেও এক কানাকড়ি ও নিতে পারেনি আমাদের নদী সম্পদ। ৭৬ এর দুর্ভিক্ষে আমাদের মৎস সম্পদের অভাব ছিলোনা কোনভাবেই।

এদেশের ৮০% মানুষ জীবিকা ছিলো নদী নির্ভর। এই জনপদের মানুষ নদীকে নিয়েই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেছে প্রতিটা মুহুর্তে। ২০০০ সালের পূর্বে ও তেমন একটা জলাবদ্ধতা বা বন্যা ছিলোনা এদেশের শহরাঞ্চলে( ফারাক্কার বাঁধ খুলে না দিলে)।

এরপর শুরু হলো নদীর জমি লিজ দেওয়া। লিজকৃত সেই নদীর জমিতে গড়ে উঠলো বিশাল বিশাল ইমারাত। সরকার নদী শাসনের নামে ব্রিজ, ড্যাম ও রাস্তা তৈরি করলো নদীর গলা টিপে ধরে। একবিন্দু পরিমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা না ভেবে এদেশের জেলা প্রশাসকরা নদীর জায়গাগুলো লিজ দিতে লাগলো দেদারসে।

দেশকে দ্রুত ইউরোপ সিঙ্গাপুর বানাতে হবে সেই স্বপ্ন নিয়ে এদেশের প্রতিটি জনপ্রতিনিধিরা বাজেটের সবটুকু ঢেলে নদী,খাল, শাখা নদী, উপশাখা নদীগুলো ও ছরাগুলো ভরাট করে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরে বাহবা কুড়াতে লাগলো। এসব কিছু করার আগে সারা দেশে শুধুমাত্র একজন নদী বিশেষজ্ঞের ও মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলো না কেউ।

দেশের সব নদী যখন মৃত ও মৃতপ্রায় তখন টনক নড়লো দেশের সর্বোচ্চ মহলের। নদীর জন্য কমিশন গঠন( নামকাওয়াস্তে), নদী আইন( আইওয়াশ), নৌ-মন্ত্রানালয় গঠন হলো। এসব দিয়ে ও কাজের কাজ কিছুই হলোনা। কেননা যারা নদীকে অবৈধ দখল করেছে বা নদীর জায়গা লিজ নিয়েছে তারা এসব কমিশন, আইন ও মন্ত্রণালয়ের ছেয়ে হাজারগুণ শক্তিশালী। দলের কাছে দলীয় লোকজনই বড়, দেশ কিছুই না। তারাই আইন বানায় বলতে গেলে। যার ফলে সরকার পড়লো চরম বিপাকে।

ফলাফল : ব্যাঙ হিসু করলে ও নগরী যায় পানির তলে।

তাই আমি যত শহর বন্দর গুলো পানিতে তলিয়ে যায় বার বার আলহামদুলিল্লাহ বলি।
কারন আমি নদীর জন্য লড়ি, নদীর কথা বলি, নদীকে ভালোবাসি।


শেয়ার করুন