বন্ধ কস্তুরাঘাট জেটি

Kosturaghat pic-2শাহেদ ইমরান মিজান :
বিগত ৫ মাস ধরে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটের কস্তুরাঘাট জেটি। জন গুরুত্বপূর্ণ এই জেটিটি বন্ধ থাকায় এই রুটের চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একই সাথে দীর্ঘদিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভেঙে পড়েছে জেটির সব ধরণের অবকাঠামো। এতে দীর্ঘ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে জেটিটি।
জানা গেছে, এক সময়ের প্রাণ চঞ্চল ঐতিহ্যবাহী কস্তুরাঘাট জেটি ঘাট নিয়ে দু’পক্ষের কোন্দলে সৃষ্ট রশি টানাটানির রোষানলে পড়ে ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটটি। এ নৌ-ঘাটটি বন্ধ হওয়ায় যাত্রীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ রয়েছে যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দিকে কস্তুরাঘাট জেটি ক্রমান্বয়ে কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। এভাবে দু’বছরের কাছাকাছি সময় গড়িয়ে যায়। এরপর বিগত ৫ মাস আগে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
ঘাটের কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানিয়েছেন, কস্তুরাঘাটের প্রধান সমস্যা ছিল বোট সংকট। বন্ধ হওয়ার আগ মুহূর্তে এসে ছিল মাত্র ৫টি স্পীড। কাঠের বোট ছিল না একটিও। ছিল না বড় সার্ভিস ট্রলার। এতে করে যাত্রী চাহিদা মেটাতে না পেরে একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মুকছুদ মিয়া ও তার চাচা পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনচারুল করিমের দ্বন্দ্বের রোষানলে পড়ে অকেজোর হয়েছে কস্তুরাঘাট জেটি। ২০১৩ সালের শেষের দিকে ‘বিশেষ কৌশলে’ অধিকাংশ স্পীড বোট ও কাঠের বোট কব্জায় নিয়ে নেন মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া। এসব বোট নিয়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ৬নং জেটি ঘাট চালু করেন তিনি। অন্যদিকে সে সময় শুধু মাত্র ৩টি কাঠের বোট ও ২০ টির মতো স্পীড বোট নিয়ে ড. আনচারুল করিম অনুসারীরা কস্তুরাঘাট জেটি সচল রাখে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কস্তুরাঘাটকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি আনচারুল করিম অনুসারীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘকাল ধরে কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবদিয়া নৌ-রুটের কক্সবাজার পয়েন্টের একমাত্র ঘাট ছিল কস্তুরাঘাট। এ ঘাট দিয়েই তিন অঞ্চলসহ বিপুল সংখ্যক লোকজনজন যোগাযোগ করে আসছিল। এছাড়া সাগরে মাছ ধরার নৌকার মাঝি-মাল্লাদের যোগাযোগে মাধ্যম ছিল এ ঘাটটি।
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটের অধিকাংশ যাত্রী মহেশখালীর। আর এসব যাত্রীর অধিকাংশই মামলা সংক্রান্ত কাজসহ বিভিন্ন জরুরী কাজে কক্সবাজার আসে। তাদের প্রয়োজনীয় অফিস ও আদালত ভবনসহ অন্যান্য দপ্তরগুলো কস্তুরাঘাটের নাগালের বললেই চলে।
মহেশখালীর নতুনবাজার এলাকার আবদুর রহিম বলেন, ‘কস্তুরাঘাট জেটি আমাদের মহেশখালীর লোকজনের জন্য সহজবোধ্য এবং হেঁটেই বোটে উঠা যায়। এই ঘাটটি বন্ধ হয়ে পড়ায় ২০/৩০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়েও ৬নং জেটি দিয়ে যেতে হচ্ছে।’ তবে কক্সবাজার আসতে ৬নং ঘাট দিয়ে উঠলে জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি। তার মতো অনেকে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণ নেই ঘাটের কাটের জেটিসহ সব অবকাঠামো জীর্ণ হয়ে ভেঙে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একেবারে ক্ষয়ে গেছে। যা দিয়ে চলাচল করা যাবে না কোনভাবেই। একইভাবে বিলীন হয়ে গেছে যাত্রী ছাউনি। ক্ষয়ে গেছে চলাচল রাস্তাও। মাঝে মাঝে দু’য়েকজন যাত্রী ভুল করে এসে ফেরত আসার চিত্রও দেখা গেছে।
ঘাটের তৎকালীন কর্মকর্তা ফজলুল করিম জানান, বোট সংকট ছাড়াও আরো কয়েকটি সমস্যা রয়েছে ছিল কস্তুরাঘাট জেটির। তার মধ্যে রয়েছে মূল সড়ক থেকে ঘাটের দূরত্ব। তার জন্য নেই গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের জেটি ও নড়বড়ে যাত্রী ছাউনির কারণেও যাত্রীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ছিলেন এ ঘাট থেকে। এসব কারণে যাত্রী না পাওয়ায় ঘাটটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
তবে সেই সময় কস্তুরাঘাট জেটির সংস্কারের এক প্রকল্প গ্রহণের কথা ছিল কক্সবাজার পৌরসভার। কিন্তু তা আদৌ বাস্তবায়ন হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, ‘কস্তুরাঘাট জেটির উন্নয়নের জন্য গৃহিত প্রকল্পের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। শিগগিরই তা সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের আওতায় ভরাট হওয়া মূল খালটি খনন করে বোট যাতে একেবারে কাছে তার ব্যবস্থা করা হবে। একই সাথে সড়ক সংস্কার, যাত্রী ছাউনি তৈরিসহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্যও কাজ করা হবে।’


শেয়ার করুন