বনজ সম্পদ রক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ নতুন ধারার সৃষ্টি

PICTURE 2 IRWDAYবার্তা পরিবেশক :
নারীরা শুধু নাগরিক নয়, তারা এ পৃথিবীর উৎপাদন, উন্নয়ন, সৃজনশীলতার প্রধান অংশ। একুশ শতকের প্রযুক্তি উন্নয়নময় বিশ্বে প্রায় ৪০% নারী গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে থাকে। গ্রামীণ এবং দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় বসবাস করলেও প্রান্তিক নারীরা কর্মসংস্থান এবং উন্নয়ন, উৎপাদন, চাষাবাদ, সেচ, হস্তশিল্প, শাকসবজি উৎপাদন, বনায়ন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মাটি কাটা, বেড়িবাঁধের কাজ, ইট ভাঙাসহ বিভিন্ন শ্রমমূলক কাজে অধিকাংশ গ্রামীণ নারীরা জড়িত। এ বিপুলা শ্রমশক্তিকে সমন্বিত করে সহব্যবস্থাপনা আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করাতে হবে। ইউএসএইড’র সহায়তায় ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস্ এন্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্প সহায়তায় ফাঁসিয়াখালী এবং মেদাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা কমিটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তারা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।

গ্রামীণ উন্নয়ন, খাদ্য উৎপাদন ও দারিদ্র দূরীকরণে গ্রামীণ নারী এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ১৫ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০টায় ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ অফিসে বিশ্ব গ্রামীণ নারী দিবসের অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বন বিভাগ, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধি, সহব্যবস্থাপনা কমিটি, বনপাহারা দল কর্মী, ভিসিএফসহ স্থানীয় গ্রামীণ নারীদের সমন্বয়ে একটি র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
আকর্ষণীয় র‌্যালির পর ফাঁসিয়াখালী সহব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ডুলাহাজারা কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গ্রামীণ নারীদের নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সহব্যবস্থাপনা কমিটির সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথী জনাব শাহ ই আলম। সাংবাদিক সম্মেলন শুরুতে ক্রেল চকরিয়ার সাইট অফিসার আব্দুল কাইয়ুমের সঞ্চালনায় আন্তর্জাতিক গ্রামীন নারী দিবসের স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ক্রেল প্রকল্পের কমিউনিকেশন অফিসার সাংবাদিক বিশ্বজিত সেন। দিবসের লক্ষ্য উদ্যেশ্য নিয়ে শুভেচ্ছা বক্তব্য করেন ক্রেলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শফিকুর রহমান। মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে ধারণা পত্র পাঠ করেনফাঁসিয়াখালী সহব্যবস্থাপনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ এলমুন্নাহার মুন্নী। নারী অধিকার ও নেতৃত্ত্ব নিয়ে কথা বলেন ক্রেল জেন্ডার বিশেষজ্ঞ রহীমা খাতুন। এছাড়া অনেক মূল্যবান বক্তব্য রাখেন যথাক্রমে মেদাকচ্ছপিয়ার সিএমসির সাবেক সভাপতি মীর আহমদ, ফাঁসিয়াখালী সিএমসির সাবেক সভাপতি মুক্তার আহমদ চৌধুরী, ক্রেল জেন্ডার ফোকাল পারসন সারোয়ার জাহান; সিপিজি মহিলা সদস্য লায়লা বেগম; টুপির উপকারভোগী আছিয়া খাতুন; সেলাইয়ের উপকারভোগী নুরজিনা বেগম; বাঁশ-বেতের হস্তশিল্পের লায়লা বেগম; বসত-বাড়িতে সবজী ফলন আছিয়া খাতুন; রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসিম উদ্দিন; সাবাদিক প্রতিনিধি জহিরুর ইসলাম ও মিজবাউর হক।

সাংবাদিক সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নোত্তরে সহব্যবস্থাপনা কমিটির প্রতিনিধিরা জানান, সহব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকল্প জীবিকায়ন কার্যক্রমে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সহব্যবস্থাপনা কমিটি, কাউন্সিলে ন্যূনতম ৩৩% নারীদের অন্তর্ভুক্তি, বিকল্প জীবিকায়ন, বনপাহারায় নারী পাহারাদল তৈরি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় নারীদেরকে সচেতন করা, গ্রামীণ পর্যায়ে নারীদের মাধ্যমে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতা তৈরি করা, বিকল্প জীবিকায়ন কার্যক্রমে গ্রামীণ নারীদের অর্ন্তভূক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশের রক্ষিত বনাঞ্চলসমূহ এবং জলাভূমি সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শাহ-ই-আলম, আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শফিকুর রহমান ও ক্রেল ঢাকার নারী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা রহিমা খাতুন বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকদের ধারনা দেন। ফাঁসিয়াখালী এবং মেদাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা কমিটি আয়োজিত আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের অনুষ্ঠানে ক্রেল প্রকল্পের সহায়তাকৃত জীবিকায়ন কর্মসূচির গ্রামীণ মহিলাদের উৎপাদিত আয়বর্ধকমূলক বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ইতোপূর্বে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে প্রকৃতি অন্বেষণ কর্মসূচির দেয়ালিকা প্রদর্শনীর বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন এবং রানার আপ ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দের প্রশ্নের জবাবে আলোচকরা জানান মেদাকচ্ছপিয়া, ফাঁসিয়াখালীসহ বিভিন্ন সহব্যবস্থাপনা এলাকায় এ পর্যন্ত সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ৫ হাজার জনের অধিক নারীকে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক প্রশিক্ষণ, টুপি তৈরি, সবজি চাষ, নার্সারী, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফলসহ নানা বিষয়ক প্রশিক্ষণসহ এলাকায় অধিকাংশ নারীকে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে বনের উপর নির্ভরশীলতা কমানো হচ্ছে।
সম্মেলনে উপস্থিত ক্রেল প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত নারীগণ তাদের পরিবর্তনের কথা তুলে ধরেন, তারা তাদের পূর্বের ও বর্তমান অবস্থার কথা উপস্থিত অতিথি ও সাংবাদিকদের সামনে বর্ণনা করেন। তারা বলেন একটা সময় ছিল যখন তারা ভাবতেই পারতেন না যে নারীরাও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে পারে, সংসারের প্রয়োজনে বাড়তি রোজগার করতে পারে। তারা উল্লেখ করেন, এক সময় তাদের পরিবারগুলো অতিমাত্রায় বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল ছিলো। কিন্তু বর্তমানে তারা খাদ্য উৎপাদন ও অন্যান্য আয়বর্ধনমূলক কাজের সাথে জড়িত থাকার ফলে পারিবারিক আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পেয়েছে। তারা আরো জানান, সহ-ব্যবস্থাপনা সংগঠনের মাধ্যমে ক্রেল প্রকল্পের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মকান্ডের ফলে বনজ সম্পদ ধ্বংসের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কেও সচেতন হয়েছেন তারা। উপস্থিত নারীরা এ ধরণের কার্যক্রমকে অব্যাহত রাখার জন্য সাংবাদিকদের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এছাড়া তারুণ্যের প্রকৃতি অন্বেষণ ২০১৫ প্রতিযোগিতায় চকরিয়া কমার্স কলেজ ও খুটাখালী তমিজিয়া ফাজিল মাদ্রাসা চ্যাম্পিয়ন ও ডুলাহাজারা কলেজ ও চকরিয়া ডিগ্রী কলেজকে আলাদাভাবে রানার আপ ঘোষনা করে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের আওতায় ৯৮জন উপকারভোগীকে ৫২ লক্ষ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়।

এক সময়ে ক্রেল প্রকল্পের সহায়তাকৃত ফাঁসিয়াখালী এবং মেদাকচ্ছপিয়া সহব্যবস্থাপনা কমিটির আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবসের অনুষ্ঠান এবং সাংবাদিক সম্মেলন সমাপ্ত হয়।


শেয়ার করুন