বঙ্গোপসাগরীয় সভ্যতার কাব্যকলায় ‘দ্বিতীয় দশকের কবিতা’ (পর্ব-২)

কবিতার দশক বিচারের যে মানদন্ড বা ঘাপলা আজকের এই সংখ্যায় কবিতা নির্বাচনে আমরা সেদিকে যাই নি। বঙ্গোপসাগরীয় সভ্যতায় বেড়ে ওঠা ত্রিশের দশক থেকে আজ পর্যন্ত দশকওয়ারী কবিতার যে বিচার বিশ্লেষণ সেদিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করারা চেষ্টা করেছি মাত্র। প্রথম দশক শেষ হওয়ার পর এই সময়ে বা দ্বিতীয় দশকে বঙ্গোপসাগরীয় কাব্যকলায় যারা প্রতিনিধিত্ব করছেন; তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করার সফল চেষ্টা অদূর ভবিষ্যতে কতদূর সফলতা লাভ করে জানিনা। দ্বিতীয় দশকে নতুন সময়ে পরিব্যাপ্ত কবিদের সৃষ্টিশীলতাকে আমরা উসকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি মাত্র। গতবারের এবার দ্বিতীয় দশকের কবিতা এর পর্ব-২ প্রকাশিত হলো।

—মনির ইউসুফ, সম্পাদক-কবিতার রাজপথ।



12104738236_9a2280e83b_o-225x300

 

নাজমুল হাসান

অপেক্ষা

 

 

আমি কারও জন্য অপেক্ষায় থাকি না
অপেক্ষারা অপেক্ষায় থাকে
অপেক্ষায় থাকে আম, জাম, জারুল গাছ
তুমুল অপেক্ষায় থাকে আকাশ, নদী, ফসলি মাঠ
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়, ক্ষান্ত হয়
ধূসর আলস্যতা ঘিরে রাখে অপেক্ষার প্রহর।

আমি কখনো অপেক্ষায় থাকি না
অপেক্ষারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকে।

 



 

সীমান্ত হেলাল

বিউটি পার্লার

 

অতি সন্তাপময় দুপুরে ক্লান্ত কুকুর নির্জীব শুয়ে থাকলেও শরীর নড়ে
কর্মহীন যুবক ঘামমাখা শরীরে অসময়ে ঘুমায়

বিবাহ উপযুক্ত যুবতীরা অনর্গল ঘষা-মাজায়
পুকুর ঘাটে ডেকে আনে বিউটি পার্লার

আর দুরের পিচঢালা পথে রিনিঝিনি চোখে
জলছবি নিয়ে আসে মেঘনার জ্বল্জ্বল জোয়ার।

 



 

11667333_482739878548795_1529227897644764997_nজেনিফার ইসলাম
পুনরুদ্ধার

 

 

গভীর আঁধারে মশাল জ্বেলে
চলে এক মৌন মিছিল
শুধু শোনা যায় তার প্রতিধ্বনি

নিরবতা গুমড়ে ওঠে আত্মার ধর্ষণে
সন্ধ্যা নেমে আসে চেনা দ্বীপে
নতুন ছন্দে বেজেচলে রোজ
তিরষ্কারের সান্ধ্য গীত।

স্বপ্নেরা ঘর ছেড়েছে সেইকবে
পুরানো ঠিকানায় কব্জা করেছে নিস্তব্ধতা।

প্রমাণ নেই কোথাও নেই চিহ্ন,
যেখানে পদদলিতহয়েছিল প্রেম
সেখানে আজ শুধুই প্রত্যাশা
আগুন দেখার।

চাই জীবত শরীরে
মৃত আত্মার পুনরুদ্ধার।

 



 

imagesতুষার প্রসূন
বোধিবৃক্ষের পঞ্চতত্ত্ব

 

 

বিদ্যুৎ হঠাৎ চমকিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দেয়
জীবনবৃক্ষের শেঁকড় রয়েছে আকাশে আকাশে,
পৃথিবীর কার্ণিশে ঝুলছে অদৃশ্য কান্ড মেরুদন্ডের আদলে,
শাঁখা নির্ভর পাতা, ফুল ও ফল দিগন্ত অবধি ছড়িয়ে আছে জ্যামিতিক কৌশলে
মাটির পরে।
একই মাটির পরে অস্তিত্ব বিনির্মানের মোহনীয় রূপ নিয়ে
যে বৃক্ষের শেঁকড় ছড়িয়ে আছে, তাকেও যদি বৃক্ষ বল সত্য হবে।
এ শেঁকড়ে যেন অনাদিকালের পূর্বপুরুষেরা বৃক্ষ হয়েই জন্ম নিয়ে সবাইকে
গর্বিত করে চলেছেৃ
আমাকে গর্বিত করেছে বোধীবৃক্ষ, যেখানে মূল থেকে ফলের পঞ্চতত্ত্ব
এক সুতোয় গাঁথা!

 



 

আকলিমা আঁখি
একটি বিকেল

 

 

চৈত্র সংক্রান্তির সেই বিকেলটি; তৃঞ্চায় কাতর চাতকীর
মুখে এক ফোঁটা জল। বোশেখের দমকা হাওয়াকে
হার মানিয়ে সুখস্মৃতির বারান্দার ঘণ্টায় বাজে টুংটাং।
বুনোফুলের ঘাসের চাঁদরে ঘাস ফড়িংয়ের লাফা
লাফি ডানা মেলা অলির উড়োউড়ি আর ফুলে ফুলে প্রজাপতি।
নীলাকৃত আকাশে রাঙা গোধুলির ছায়া। ব্রহ্মপুত্রের মৃদুমন্দ হাওয়া,
শান্ত  সিগ্ধ চারপাশ-তার মাঝে আমি আর তুমি
চির বিষ্ময়! জীবনের সে মাহেন্দ্রক্ষণ।

আজ প্রতিনিয়ত হৃদয় গলে গলে সে গোধূলীর
রক্ত ঝরে। সে প্রজাপতিরা রং হারায় না অলিরা
হারায় না ডানা। শুধু ঘাসফড়িংয়ের এলোমেলো
ছোটাছুটি বুকের আঙিনায়। জীবনের পালতোলা
নৌকায় জানি না। আজ কতদূর তুমি কেবল
একটি বিকেলকে বুকের ফ্রেমে বেঁধে রং
লাগিয়ে চলি অহর্নিশ



 

হাসনাত শোয়েব
মাছ ধরার গান

 

 

বাবার সাথে আমরা যখন মাছ ধরার গান শুনতে যেতাম। আমাদের একটা নদীর প্রয়োজন হতো। আমরা আঙুল দিয়ে মাটি কেটে কেটে নদী বানাতাম। বাবা একটা পাতা নদীতে দিয়ে বলত- এটা হল মাছ। সেই থেকে আমরা পাতা দেখলে মাছ মাছ বলে চিৎকার করে উঠতাম।

সেবার শীতকাল আর গেলো না। মানে শুধুই শীত। আমরা নিজেদের বানানো নদীতে গিয়ে মাছ নিয়ে আসতাম। গাছে লাগিয়ে রাখতাম। আর বাবাকে বলতাম-পাতাদের কোন নদী নেই কেনো?
-কারণ তার গাছ আছে।

আমার ভীষণ মন খারাপ হতো।আমি ওই দূরের আকাশ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ভাবতাম, আমার নদী কিংবা গাছ কোনটাই নাই। কনক বলতো- ওই যে তোর সাদা ঘুড়িটা যেখানে আকাশ বেঁধে রেখেছিস। যার কাঁধে হাত দিয়ে সারাক্ষণ কী সব ভাবিস। ওটা কি জানে, রঙের তীব্রতা কখনো দৃশ্য দিয়ে মাপা যায় না।
-সকল ঘুড়িই জানে, কোন প্রত্যাদেশেই তারা ভেঙে পড়বে না। কারণ প্রকৃতিতে তারাই কেবল ইশ্বরের নিকটবর্তী।
– তুইও ইশ্বরের কাছে থাকিস।ঠিক বারোটা এক মিনিটে মরে গেছিস। তুই জানিস না?
– আমাকে কেবল মানুষের চিবুকের দৈর্ঘ্য মাপার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিলো।
– তবে সীল মাছের সাথে শীতের যেটুকু দূরত্ব বাকি ছিলো তার কী হয়েছে?
– স্তনের উষ্ণতার সাথে সীল মাছের যতটুকু পার্থক্য তা এবার আমরা সোয়েটার দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছি।

 



 

11889578_10207125021140878_8371015262912126277_n-298x300 (1)রফিকুজ্জামান রণি
নারী

 

বেদনামিশ্রিত এক অদ্ভুত আনন্দের নাম- জন্ম।
মৃত্যু,-তার বিপ্রতীপ গান
নারীর স্পর্শে জন্ম নিয়েছে পৃথিবী
পৃথিবীর প্রথম জ্যোৎস্না- ‘নারী’
তার লাবণ্য শিখিয়েছে রক্তপাত আর ভ্রাতৃত্ববিচ্ছেদ

তবু নারী যুধিষ্ঠির মা!

 



 

জসিম আজাদ
সাম্যফুল

 

 

পুঁজিবাদী মন্ত্র ভেঙে সাম্যতন্ত্রের নিশান হাতে
সরব ছিলে প্রতিটি সময় রাজপথে
দু’চোখ জুড়ে ছিলো সাম্যের স্বপ্ন
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল হবে
সাম্যফুলের বাগান

কাস্তে হাতে জীর্ণ সমাজে বেড়ে উঠা
আগাছা কাটতে গিয়ে
ধিকৃত হয়েছে বার বার
তবুও হেঁটেছো আগামীর দিকে
তোমার বিদায়ী লাশের পাশে দাঁড়িয়ে
নতুন করে আবারো নিলাম
সাম্যফুল নির্মাণের দৃঢ় প্রত্যয়

তুমি ‘চে’র মতো চেতনার প্রতীক হয়ে
আজীবন বেচে থাকবে সারথীদের হৃদয়ে

কমরেড তোমায় লাল সালাম

 



 

najib-300x267নিধু ঋষি
‎নোনাজল‬

 

 

গহীন সমুদ্রের চেয়ে
অধিক গভীর তোমার আঁধার মন.
ক্রমশ কাছাকাছি গিয়েও
কেন জানি ফিরে আসি

 



নিখিল নওশাদ
আজ এক শিক্ষিকা খুন হলেন

 

 

কাটা কম্পাস হাতে দাঁড়িয়ে পরেছে সারফেসের সকল শিক্ষার্থী ।
“ধরুণ একটি সমবাহু ত্রিভূজের ‘এ’ কোণে…” ঠিক এই পর্যন্ত
বলে থেমে গেছেন পীথাগোরাস ।
সকল পাদ্য-উপপাদ্য উড়ে গেছে
আহত সুন্দরবনে
এই বে-আব্রু বদ্বীপে , বেহিসেবী বেদনায় !

কোণে বসে আছে ক্ষুধার্ত শিশু ।
সমস্ত ভূগোলের নির্যাস ফিডারে ভ’রে এনেছে
হত্যা পরবর্তী মায়াবী মিথ
সরকারি পোষা পাংকচুয়াল পুরোহিত !
মিথ্যা হয়ে যায় সব ।
প্রতিস্থাপনের সকল সুত্রকে পরাভূত করে
সে চায় কেবলই উষ্ণ মাতৃস্তন ।

বিব্রত পীথাগোরাস ভীষণ শংকায় ভাবছেন ,
এই মানব টুকরোটি যদি

বারাক ওবামা হয়ে যায় !
জাতিসংঘ হয়ে যায় !
নোবেল প্রাইজ হয়ে যায় !

তবে এই অসার হাতে আবার ধরতে হবে কম্পাস ।
ভেঙ্গে যাওয়া এই গ্রহের সারফেস , ক্ষত
আর কতো পাল্টে দেবে জ্যা আর মিতি
শিক্ষা ও সিলেবাস ?

আজ এক শিক্ষিকা খুন হলেন ।
যিনি আসলে মা ছিলেন —
যীশুর , বুদ্ধের
সরাসরি মানবিক ঈশ্বরের — এই কোণে ।



 

ইমরান মাহফুজ
নগরের উত্বপ্তফেনা

 
নগরে নীতিরাজের উত্বপ্ত ফেনা
ঝলসে দিচ্ছে অসহায় বালকের স্বপ্ন
অচিন পাখি চিহৃ হারাচ্ছে
ডানা থেকে হলদে পালক খসে পড়ার মতো।
জীবনজলে ভাসছে ক্ষমতার আসন
সাময়িক কসরতে ফুরাচ্ছে বৃক্ষজীবন
আহা স্বপ্ন! আহাপাখি! আহা পঙ্খিরাজ
কোথায় যাবে- কোন গহবরে?
সর্বত্র রাজ্যের আগুনে জ্বলছে সবুজহৃদয়
শুধু আলেয়ার ছায়ায় যদি একটু ঠাই হয়!

 



 

রওশন আরা মুক্তা
পৃষ্ঠা

 

 

প্রত্যেকটা ছবি ত্রিমাত্রিক হয়ে উঠছে আমার চোখের সামনেই
আর আমি বইয়ের পাতা না উল্টিয়েই বইটায় তৈরি করেছি একটা টানেল
আর ইচ্ছামতো যাতায়াত করছি বইয়ের প্রথম থেকে শেষ
আমাকে প্রেতাত্মা ভেবে লুকিয়ে যাচ্ছে অক্ষর
একটা পৃষ্ঠায় গির্জার মতো একটা ঘর পেলাম
সাদা সাদা পর্দা ঝুলানো তাতে
আমি একের পর এক পর্দাগুলো টেনে ছিড়ে ফেলতে চাইলাম
যত ছিড়লাম পর্দা উদয় হলো তার চেয়ে বেশি
একেকটা পর্দার উত্থানে বেজে উঠছিল ঘণ্টা
যে ঘণ্টার শব্দকে তীক্ষ্ণ করতে আত্মাহুতি দেয়
গ্রামের সবচেয়ে সরল মেয়েরা
ঘণ্টার শব্দ নয়, আমি শুনছিলাম মেয়েগুলোর আর্ত চিৎকার
রগ ফেটে আমার রক্তরা বের হতে চাইছে
পর্দাগুলো আমাকে পেঁচিয়ে ফেলছে
তবুও আমি একটার পর একটা পর্দা টেনে নামিয়ে ফেলছি
আকাশের ঠিক মাঝখানে এসে থেমে যাচ্ছে সূর্য
বইয়ের এই পৃষ্ঠা থেকে আমি বের হতে পারছি না
পারছি না টেনে নামাতে এসব অশ্লীল পর্দাগুলোকে
সূর্য আমার অপেক্ষায়, সন্ধ্যার দিকে এগুতে পারছে না
চারিদিক থেকে ঘণ্টা বাজছে, বাজছে ঢাক
জোরে বাতাস বইছে
মাথার উপর সূর্য নিয়ে পর্দার ভিতরে জড়িয়ে যেতে যেতে
আমি নিশ্চল বসে আছি
চেয়ে আছি চারকোণা এক বইয়ের ভিতর।

 



 

সফি কামাল রিয়াদ
ফুঁ...
আহ্লাদ আজি তার আহরিৎ মই লাগিয়ে শীত খোঁজে বনে
শরীরের লোম বনে শিরশির লাগে। কূপগুলো কাঁপে- কাঁপে
নেশা খায়। গন্ধ-মাছিটা শুঁকে যায় যেন- আমি উড়ে গিয়ে বসে পড়ি তারপর মনে পড়ে- মানুষও উড়তে পেরেছিল একদিন।
খসে পড়ে গেছে ডানা। সেই শব্দ ভেসে আসতেই হেঁটে যাই।
হেঁটে গিয়ে চেটে-চেটে- শুকনোকে জীবিত বানাই…

 



11923438_1135202443161250_1081558757_n-e1440241595246তাসনুভা অরিণ
সময়ের শূন্য মৌচাক

 

 

সময়ের শূন্য মৌচাক
ভরে থাকে কথায়, ব্যথায়
আর অব্যবহৃত স্বপ্নের আরক্ত লালসায়।

স্বপ্নহীন একটা ধু-ধু বিকাল
নির্জনে পড়ে থাকা পালক সঙ্গে
ফিরে আসে
ফিরে আসে চাহনি
দিগন্তের শেষ সীমানা ছুঁতে চাওয়া
ওদের দুঃসাহসিকতা।

কেন্দ্রগামী বৃত্তের পরিধি আটকে আছে
চোখের গোল ফ্রেম চশমায়।
গাণিতিক নিয়ম কষা চোখ শুধু
নগ্নপায়ে চলে যায় জলছাপ বর্ষায়।

আর সময়ের শূন্য মৌচাক
ভরে থাকে কথায়, ব্যথায়।

 



 

ডালিয়া চৌধুরী
বিরহ

 
দীর্ঘ অপেক্ষা দীর্ঘ দীঘল দৃষ্টি
অব্যক্ত যন্ত্রনা ব্যক্ত হবার তাড়নায়
অদৃশ্য আকুতি।
না জ্যোৎস্না, না অমানিশা
না বিষ, না বাশী কিছুই এলো না।
আহা বুকের ভেতর উন্মত্ততা আলোড়ন
বেদনার নীল ঢেউয়ে পার ভাঙে পার ভাঙে
অরন্যের মেঘ অরন্যেই নোঙর ফেলে
ফাকা ময়দানে তৃষ্ণারা ঘুরে ফেরে
না জল, না কন্ঠফাটা মরু খরা
না ঝড় , না বৃষ্টি কিছুই এলো না
আহা বিরহ! বড়ই ভালো লাগে।

 



11120919_1135202269827934_2005834875_n-e1440241691787ফাহিমা আল ফারাবি
যে কথা তোমাদের বলা হয়নি

 

 

যা কিছু তোমাদের বলেছি এতদিন, তা মিথ্যে ছিল।
হ্যাঁ এটা ঠিক যে বেড়ার এপাশ আর ওপাশ থুত্থুড়ে গড়েরই মাঠ,
আর নীল আসমানটা পেড়োলে সবকিছু জলকাদা।
তবু, সত্যকে ধারণ করতে পারে না এতটা অনবদ্য উচ্চারণ-
আর আমরাও রাত-দিন সহস্তে গোবর লেপি
সূর্যের পৌরাণিক মুখে
বৃহস্পতির শ্বাশ্বত গতিপথে-
অতএব পোস্টারগুলোই হয়ে দাঁড়ায় শেষমেষ অঘোষিত বাস্তব
পোড়া দেহগুলো দ্যাখায় বিমূর্ত নিখাদ শিল্পেরই বহুরূপ।
কিন্তু আমি বলছি তোমাদের
চোখ খোলো!
অনাদিকাল কোটরে বসে বসে ভীষণ বোরড হয়ে গেছে হয়ত তারা-
মাটির বাসনে রেখে উন্মীলিত করে রেখে তাদের দেখাও-
কত আর শোনাবে উইপোকাদের বেহালাবাণী
পচে বাসী হয়ে গেছে আকাশলীনা-র ভ্যানভ্যানানি-
আর একবার উঠে দাঁড়াও মৃত চামড়ার পোশাকটা খুলে।

তবে ভয় নেই,
সব ছুঁড়ে ফেলে দিতে বলছি না।
মায়কোভস্কির দূরবীন চোখজোড়া আমার নেই,
নেই প্রগতিতে অজর বিশ্বাস।
ঝাপসা নজরে জোরসে চেতনার পাথর ঘষতে বলছি
সহাস্য তালাগুলো খুলে রদ্দির গুদামে ফিকতে বলছি।
ডেপথ অফ ফিল্ডে হারিয়ে না গিয়ে হরিণটাকে দেখ।
মানুষের দুনিয়ায় স্বর্গ না খুঁজে, স্বর্গে মানুষ খোঁজো।

মনোরঞ্জক সত্যের চেয়ে বুকে লাথি দেয়া মিথ্যা উত্তম।
গভীর ধ্যানে পেয়েছ যে মুক্তো তাকে চূর্ণ কর,
নিক্ষিপ্ত হোক সে কৃষগহ্বরে-
কোন কাজ নেই-
বিলবোর্ডের আরক্ত মুখ যদি করে সে ধারণ।

বরং বুকে তোল কাঁটাতারে বেঁধা লিকলিকে বাহু
গ্যাসোলিনে ভেজা উদগ্র চিবুক
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভূশায়িত দগ্ধ গোরস্থান-
অন্তিম কুয়াশা-কাব্য অপেক্ষা মৃতের মাংস ভক্ষণ শতগুণে ভাল।

 



 

শাফিনুর শাফিন

অসুখ

 

আমি টের পেতে থাকি কীভাবে কীভাবে যেন আমার শরীরে গজিয়ে উঠছে
একটা শহর, পকেটে মার্বেল গুঁজে পৌরাণিক পথঘাট,
থমকে-দাঁড়ানো ঝাউপাতা , কার যেন চিৎকার!
একটা মরচে-ধরা গেইট ঠেলে, দূরে-ছুঁড়ে-ফেলা শৈশব থেকে
ভেসে আসে বাচ্চাদের সুর-করে-খেলতে-থাকা,
“মেলা গো মেলা, আমরা সবাই খেলা, একটি মেয়ে বসে আছে,
তার কোনো বন্ধু নাই, ওঠো গো ওঠো, চোখের পানি মোছো!”…
ঘুমের মতো স্নান মানুষের সবচেয়ে একান্ত।
আচমকা বাথরুমের দরজা খুলে অর্ধোউন্মাদিনীর একবিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা!
সুর মিলিয়ে যায়! শৈশব মিলিয়ে যায়!
একদিন এক পাগল জ্যান্ত মুরগি হাতে নিয়ে দৌড়ে
রাস্তার মোড়ের হোটেলের সামনে জ্বলন্ত কড়াইতে ছেড়ে দিল।
আমি টের পাই উন্মাদ হবার পরও মানুষের সাবকনশাস জানে,
মাংস রান্না করেই খেতে হয়! টের পেতে থাকি একজোড়া খুনে-লাল চোখ
ছুটে আসছে- চোখ বন্ধ করে ফেলি! ঘুমের ভেতর শুনি অবাধ্যতা-
সবকিছু ভেঙে পড়ার শব্দ… ঘুমিয়ে পড়লে আমি হারিয়ে যাই।
ঘুমিয়ে পড়লে বেজে উঠে অ্যাসাইলামের পাগলা সাইরেন।
জুহু বীচের ব্যালকনিতে ক্রমাগত ঝুঁকে পড়ছে সমস্ত অসুখ
মিলিয়ে যাচ্ছে খিলখিল হাসি, উন্মাদনা ক্রমাগত

 



 

শাহেদ ইমরান মিজান
পুর্ণিমা রাত

 

 

আসমান ফাইডা জোছনা নেমেছে ধরিত্রীর চরে
টিনের চালে চিকচিক জোনাকির অপরূপ খেলা;
তরে তরে সাজানো আলোর নাটাই
ঝিঁঝিঁর মিছিল নেমেছে জমিনজুড়ে
হুতোম পেঁচা ডেকে উঠে ক্ষণে ক্ষণে…।
সব আছে-
শু-ধু তুমি নেই।
তবুও জোনাক জ্বলা এমন রাতে
আমি এখনো হেঁটে চলি একাকী মেঠোপথে।

 


শেয়ার করুন