ফেসবুক বন্ধ না করার পক্ষে মত বিটিআরসি’র

: কারিগরি সীমাবদ্ধতা এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় বিদেশে যোগাযোগের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধ না করার পক্ষে মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

শিক্ষার্থীদের ক্ষতি এড়াতে মধ্যরাতে ফেসবুক বন্ধের উদ্যোগের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশ্নের উত্তরে একথা জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে পাঠানো চিঠি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে যাওয়ার পর এ বিষয়ে মতামতের জন্য বিটিআরসিতে পাঠানো হয়েছিলো।

সোমবার (০৩ এপ্রিল) টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, কারিগরি দিক থেকে কেবলমাত্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য ফেসবুক বন্ধ করা সম্ভব নয়, কারণ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বয়স নিশ্চিত করার কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা এখন পর্য‌ন্ত নেই।

ফেসবুক বন্ধ করা হলেও প্রক্সি সার্ভার দিয়ে চালানোর সুযোগ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বিটিআরসি বলছে, ফেসবুক বন্ধ করা হলেও ইন্টারনেটের অন্যসব যোগাযোগ মাধ্যমেও একই কাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। গত ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে রাত ১২টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখার উদ্যোগের কথা জানানো হয়েছিলো।

বিটিআরসি বলছে, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় যোগাযোগের জন্য রাতের সময়টি বেশি ব্যবহার হয়। এ সুযোগ বন্ধ না করার পক্ষে মত দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ফেসবুকের মাধ্যমে অর্থনৈতিক বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিটিআরসি জানায়, ফেসবুক শুধু একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে না, সাধারণ জনগণ বিশেষ করে নারীরা অনলাইনে ব্যবসা করে অর্থ উপাজন করছে।

এদিকে, বিটিআরসি সচিব মো. সরওয়ার আলম রাতে বাংলানিউজকে বলেন, নানা কারণে ফেসবুক বন্ধ করা সম্ভব না। ফেসবুক বন্ধের বিকল্প হিসেবে কয়েক দফা সুপারিশসহ আমাদের মতামত ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে জানিয়ে দিয়েছি।

পাঁচ পরামর্শ:

তরুণ-তরুণীদের ফেসবুক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছে বিটিআরসি। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের মাধ্যমে পেরেন্টাল কন্ট্রোল ও বিভিন্ন নিরাপত্তা এবং প্রাইভেসি ফিচার ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের মাধ্যমে অল্প বয়সীদের জন্য বয়সভিত্তিক আলাদা অ্যাকাউন্ট খোলা, ফেসবুকসহ ইন্টারনেট অপব্যবহার রোধে সুষ্ঠু ও ইতিবাচক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণ, ফেসবুক-মোবাইল ও ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারের ক্ষেত্রে অভিভাবকদের নিবিড় প্রেরণা এবং অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বিটিআরসি।

এর আগে সোমবার দুপুরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছিলো, ফেসবুক বন্ধের বিষয়ে সরকার এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য অনুরোধ জানায় টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

গতবছর জেলা প্রশাসক সম্মেলনে ডিসিরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি হওয়ার বিষয়ে এবং কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে মধ্যরাতে ফেসবুক বন্ধের সুপারিশ করেছিলেন।

কার্টুন চ্যানেল বন্ধের চিন্তা সরকারের

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে ফেসবুক বন্ধের মতামত চাওয়ার পাশাপাশি ওই চিঠিতে ক্যাবল টিভিতে কার্টুন চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হয়।

চিঠিতে বলা হয়, কোমলমতি শিশু-কিশোরদের বিনোদনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ কার্টুন চ্যানেল। কার্টুন চ্যানেলগুলো ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকার ফলে শিশুরা গভীর রাত পর্যন্ত কার্টুন দেখছে। পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ায় পাঠে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিতে পারছে না তারা। এতে শিশু-কিশোরদের শারীরিক মানসিক স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।

সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম জাতি গড়ার লক্ষ্যে রাত ১২ থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ফেসবুক এবং ক্যাবল টেলিভিশনে কার্টুন চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ রাখা যায় কিনা- সে বিষয় মতামত চাওয়া হয় চিঠিতে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের পাশাপাশি তথ্য মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছিলো।


শেয়ার করুন