ফেসবুকে ‘লাইক’ দিলেও হতে পারে জেল

122011_1সিটিএন ডেস্ক :

সামাজিক যোগাযোগের সাইট ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় কারণে সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ‘৫৭ ধারার’ আওতায়। ব্লগারদের মতে, এটা বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করার একটা প্রচেষ্টা মাত্র।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশ ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রীতিকর মন্তব্য করার দায়ে মাগুরার এক স্কুলের ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। তাকে যে আইনে গ্রেপ্তার করা হয়, সেটি প্রণীত হয় ২০০৬ সালে এবং সংশোধিত হয় ২০১৩ সালে।

সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় প্রথম গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে ২০১৩ সালে। সেই বছরের এপ্রিল মাসে চারজন ব্লগারকে আটক করা হয় একটি ধর্মের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচারের’ দায়ে। ইতিপূর্বে ইসলামপন্থীরা নাস্তিক ব্লগারদের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন করেছিল। তারপর থেকে শতাধিক লোককে ঐ আইনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

১৪ বছরের কারাদণ্ড, কিংবা জরিমানা

২০০৬ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন বা আইসিটি অ্যাক্ট দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। এই আইনের ৫৭ ধারাটি বিশেষভাবে বিতর্কিত। সেই ধারা অনুযায়ী যদি কেউ ইন্টারনেটে বা ডিজিটাল উপায়ে কোনো ‘ভুল বা অশ্লীল’ লেখা প্রকাশ করে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে, কিংবা রাষ্ট্র তথা কোনো ব্যক্তির ভাবমূর্তির ক্ষতি করতে পারে, কিংবা কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে, এমন সব লেখাও এই আইনের আওতায় পড়ে।

ব্লগাররা এই ধারার অপসারণ দাবি করে আসছেন; যেমন ২০১৩ সালে গ্রেপ্তারকৃত চারজন ব্লগারদের মধ্যে যে তিনজন বর্তমান বিদেশে বাস করছেন। তাদের একজন, সুব্রত শুভ, বর্তমান সুইডেনে বাস করেন।

সুব্রত বলেন যে, ৫৭ ধারার কারণে গ্রেপ্তারের ভয়ে বর্তমান অনেকে ফেসবুকে পোস্ট করা বন্ধ করে দিয়েছেন; ফলে সরকারের বিরুদ্ধে আর কেউ কিছু লিখতে সাহস পাচ্ছেন না।

ফেসবুকে একটি মামুলি ‘লাইক’ দেওয়ার অপরাধেই ৭ থেকে ১৪ বছরের কারদণ্ড কিংবা এক কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে, বলেন সুব্রত।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয়রানি করার পন্থা?

রাসেল পারভেজ ২০১৩ সালে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার মতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আইনটির অপব্যবহার করা হচ্ছে। যেমন কিছু মানুষকে আটক করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করার দায়ে।

গতবছর এক তরুণকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা সম্পর্কে একটি ব্যঙ্গাত্মক গান শেয়ার করার অপরাধে।

গতমাসে এক সাবেক মেয়রকে গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করার দায়ে।

পারভেজ বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইন্টারনেটের উপর নজর রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি। ফলে শাসকদলের সদস্যরা তাদের অপছন্দের লোকেদের বিরুদ্ধে মামলা করেন আর পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে।’

ঢাকার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া একাধিক ব্লগারের কৌঁসুলি ছিলেন। আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিল করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

বড়ুয়া জনস্বার্থে এই ধারার সাংবিধানিকতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন এবং ইতিবাচক ফল পাবার আশা রাখেন বলে জানান তিনি।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ৫৭ ধারা বাতিল করার আহ্বান নাকচ করলেও, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, সরকার ৫৭ ধারা পুনর্বিবেচনা করবে।

‘যে সব আন্দোলনকারী এই ধারা বাকস্বাধীনতা খর্ব করছে বলে মনে করেন, আমরা তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব, তাদের উদ্বেগ বোঝার চেষ্টা করব।’

তবে তিনি আশু পরিবর্তনের কোনো প্রতিশ্রুতি দেননি।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে


শেয়ার করুন