ফেব্রুয়ারিতে ধরে নেওয়া হয় মুকুলকে, দাবি বাবার

Satkhira-Mukul-Fatherবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম :

ঢাকায় পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত আনসারুল্লাহ সদস্য শরীফুল নামের আড়ালে থাকা মুকুল রানাকে চার মাস আগে তুলে নেওয়া হয়েছিল বলে তার বাবা দাবি করেছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের অভিযোগ, গত ফেব্রুয়ারিতে যশোরে শ্বশুরবাড়ির এলাকা থেকে তার ছেলেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়েছিল।

জঙ্গি কায়দায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে পুলিশের ‘সাঁড়াশি অভিযানের’ পরপরই গত রোববার ভোররাতে ঢাকার মেরাদিয়ায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শরীফুলের নিহত হওয়ার খবর আসে।

পরে গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এই সদস্য গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময়ে ধারণ করা একটি ভিডিওতে তার উপস্থিতি দেখা গেছে।

নিষিদ্ধ সংগঠনটির ‘অপারেশন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য’ শরীফুল নানা নাম (সাকিব, সালেহ, আরিফ, হাদী) ব্যবহার করতেন বলে পুলিশ জানায়।

অভিজিতের সন্দেহভাজন যে ছয় খুনির ছবি গত মে মাসে পুলিশ প্রকাশ করে তাদের বিষয়ে তথ্যের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তাতে শরীফুলের (মুকুল) নামও ছিল।

তখনই নিজের ছেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি জানতে পারেন মুকুলের বাবা কালাম। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর সংবাদপত্রে প্রকাশিত পুলিশের সরবরাহ করা ছবি দেখে নিজের ছেলে বলে নিশ্চিত হন তিনি।

Mukul-Photo

আজাদ সোমবার তার বাড়িতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি যশোর থেকে স্ত্রীকে নিয়ে সাতক্ষীরা আসার সময় মুকুল যে শার্টটি পরে ছিলেন, ছবিতে তার গায়ে ওই শার্টটিই রয়েছে।

শরীফুল নামে পুলিশের ছবি (বাঁয়ে) ও মুকুলের জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি শরীফুল নামে পুলিশের ছবি (বাঁয়ে) ও মুকুলের জাতীয় পরিচয়পত্রের ছবি
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি যশোরের কোতোয়ালি থানার জগন্নাথপুর গ্রামের মোবারক বিশ্বাসের মেয়েকে মুকুল বিয়ে করেন বলে জানান আজাদ।

তার চার দিন পর সাতক্ষীরা ফিরতে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের হলে যশোরের বসুনদিয়া মোড় থেকে ডিবি পরিচয়ে মুকুলকে তুলে নেওয়া হয় বলে দাবি করেন আজাদ। তিনি বলেন, এরপর মুকুলের শ্যালক যশোরে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন।

ছেলেকে ‘তখনই ধরা হয়েছিল’ বলে নিশ্চিত আজাদ বলেন, “ধরিছে ওরা ঠিকই। ওই যে ছবি দিছে, তার যে পোশাক পরা ছিল শ্বশরবাড়ি থেকে থেকে আসতে, সেইটে। তাছাড়া আর অন্য কোনো ছবি দেয় নাই।”

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি আমির হোসেন নামে একজন তার ভগ্নিপতিকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে জিডি করেন।

জিডিতে ‘ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কয়েকজন’ তুলে নেয় বলে আমির লিখেছেন, জানান ওসি।

Mukul-ID

অন্যদিকে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, শরীফুলকে তারা খুঁজছিল। প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুল হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার আনসারুল্লাহ সদস্য সুমন পাটোয়ারিকে জিজ্ঞাসাবাদে শরীফের অবস্থানের বিষয়ে তথ্য পান তারা।

ডিএমপির উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান বলেন, এরপর গোয়েন্দারা শনিবার রাতে বাড্ডা, রামপুরা, খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালান।

“রাত ২টার সময় মেরাদিয়াতে অভিযান চালানোর সময় একটি মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবক পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি চালালে একজন আহত হয়, বাকি দুজন তাকে ফেলে পালিয়ে যায়।”

মুকুলের জাতীয় পরিচয়পত্র মুকুলের জাতীয় পরিচয়পত্র
গুলিবিদ্ধ ওই যুবকই শরীফুল বলে পরে জানা যায়, যাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।

শরীফুল তথা মুকুলের বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য, আনসারুল্লাহ অভিজিৎসহ যে কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করেছে, তার প্রতিটিতে তিনি জড়িত ছিলেন। কুপিয়ে হত্যার এই ঘটনাগুলোর কয়েকটিতে সমন্বয়কের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

তবে আবুল কালামের দাবি, ছেলের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে কিছুই জানতেন না তারা। মুকুল কোনো দলের সঙ্গে জড়িত বলেও তাদের জানা ছিল না।

তিনি বলেন, তার ছেলে ২০০৮ সালে এসএসসি এবং ২০১০ সালে এইচএসসিতে পাস করে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ইংরেজি বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হয়েছিল। এরমধ্যেই ঢাকা গিয়ে রাজউকে হিসাব রক্ষক হিসাবে চাকরি নেন বলে তারা জানতে পারেন।

পুলিশ শরীফের যে পরিচয় দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, এই যুবক একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র ছিলেন। একটি বেসরকারি এনজিওতে চাকরি করতেন।

মুকুলের বাবা আবুল কালাম আজাদ মুকুলের বাবা আবুল কালাম আজাদ
মুকুল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দাবি করে কালাম বলেন, “আমার ছেলে যদি সত্যিকারে অপরাধী হয়ে থাকে, তবে তার ফাঁসি হওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে যে কেইসের জন্য তার এ (মৃত্যু) হয়েছে, সেইটের যারা বাদী, তারা মনে হয় শান্তি পাইত।

“আমি বাবা হয়েও সেটা মানি নিতাম। কিন্তু এই যে ক্রসফায়ার, এগুলোতো …।”

আজাদ জানান, ছেলের লাশ বুঝে নিতে তার মা সখিনা খাতুন, মামা নজরুল ইসলাম ও ভাতিজা রহমত আলী ঢাকায় গেছেন।


শেয়ার করুন