কক্সবাজারে

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবুজ উপকূল কর্মসূচি পালিত

unnamedবার্তা পরিবেশক :

সবুজ সুরক্ষার স্কুল পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের এগিয়ে আসার আহবানের মধ্যদিয়ে উপকূলীয় জেলা পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রাণকেন্দ্রে সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হল ‘ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক সবুজ উপকূল ২০১৫’ কর্মসূচি। ২৮ অক্টোবর বুধবার এ উপলক্ষে বিদ্যালয় অঙ্গণে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় এই কর্মসূচির আয়োজন করে উপকূল কমিউনিটি জার্নাল উপকূল বাংলাদেশ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পড়–য়াদের উদ্দশ্যে বলেন, তোমরাই আগামীতে এই পরিবেশে বসবাস করবে। সুতরাং পরিবেশ সুরক্ষায় তোমাদের সচেতন হতে হবে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণে সব ধরণের উদ্যোগ নিতে হবে। লেখালেখির মাধ্যমে তোমরা চারপাশের বিষয়ে সজাগ হতে পার। নিজেকে পড়ে তুলতে পার সমৃদ্ধ মানুষ হিসাবে।

উপকূল অঞ্চলের ঝুঁকির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্ততের কারণে উপকূল এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বেশ কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় এ এলাকা ল-ভ- করে দিয়েছে। বহু মানুষ নি:স্ব হয়েছে। নদীভাঙণ, জলোচ্ছ্বাস আর লবনাক্ততার মত দুর্যোগগুলো প্রতিনিয়ত এ অঞ্চলকে ক্ষতির মুখে ফেলে। সেইসব ঝুঁকি সামনে রেখেই এই এলাকায় তোমরা বেড়ে উঠছ। তাই তোমাদের সজাগ হওয়াটা খুবই জরুরি।

‘সবুজ বাঁচাই, সবুজে বাঁচি’ স্লোগান সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এ কর্মসূচিতে আলোচনার নির্ধারিত বিষয় ছিল ‘সবুজ উপকূল সুরক্ষায় আগামী প্রজন্মের করণীয়’। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। আলোচনায় অংশ নেন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক কক্সবাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ফরিদুল আলম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের চৌধুরী, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা আহসানুল হক, সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমর চন্দ্র দেবনাথ এবং আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান উপকূল বাংলাদেশ-এর পরিচালক ও সবুজ উপকূল ২০১৫ কর্মসূচির কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, গাছের চারা রোপণ, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কর্মসূচি উপলক্ষে বিদ্যালয়ের ‘আলোকযাত্রা’ দল প্রকাশ করে ‘বেলাভূমি’ নামের দেয়াল পত্রিকা। এতে শিক্ষার্থীদের পরিবেশ বিষয়ক লেখা প্রকাশিত হয়। অনুষ্ঠানে রচনা লিখন, পত্র লিখন এবং দেয়াল পত্রিকায় বিজয়ীদের পুরস্কার হিসাবে বই ও সাফল্য সনদ দেয়া হয়। অংশগ্রহনকারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অংশগ্রহন সদন এবং বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি প্রধান অতিথির কাছ থেকে গাছের চারা গ্রহন করেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ রক্ষায় আগামী প্রজন্মের ভূমিকার ওপর জোর দেয়া হয়। বক্তারা বলেন, পরিবেশ রক্ষা ও উপকূলের সবুজ বাঁচিয়ে রাখতে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। গাছ লাগানোর পাশাপাশি গাছ কাটা রোধের ওপর জোর দেন বক্তারা। অনুষ্ঠানে স্কুল পড়ুয়াদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষার্থীদের লেখালেখি চর্চা অব্যাহত রাখার আহবান জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে ‘সবুজ উপকূল সুরক্ষায় আমার ভাবনা’ বিষয়ে রচনা লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে নবম শ্রেণীর এলমুর নাহার, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে একই শ্রেণীর সাবেকুন নাহার, তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে একই শ্রেণীর ছাঈদা খাতুন। একই বিষয়ে পত্র লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে ষষ্ঠ শ্রেণীর সাঈমা আজিজ, দ্বিতীয় হয়েছে সপ্তম শ্রেণীর রবিউল হাসনা, তৃতীয় হয়েছে একই শ্রেণীর ফাতেমা লাবণ্য। দেয়াল পত্রিকা লিখন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে নবম শ্রেণীর রহিমা আক্তার, দ্বিতীয় হয়েছে সপ্তম শ্রেণীর আসমা আক্তার, তৃতীয় হয়েছে নবম শ্রেণীর আকলিমা খানম আসমা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে সবুজ উপকূল ২০১৫ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে।

অনুষ্ঠানে মিডিয়া পার্টনার হিসাবে ছিল এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ ও দৈনিক সমকাল, আইটি পার্টনার ছিল আইটি প্রতিষ্ঠান ডট সিলিকন। আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্টট্রাস্ট ও স্কুল পড়ুয়াদের লেখালেখির সংগঠণ আলোকযাত্রা।

উপকূলের ১০ জেলার ১৩টি উপজেলা এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। ১৫টি স্থানের ৭০টি স্কুলের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিচ্ছে। স্কুল-ভিত্তিক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে ভোলার তজুমদ্দিন, মনপুরা, বরগুনা সদর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, সাতক্ষীরার তালা, খুলনার পাইকগাছা, বাগেরহাটের সদর, মোরেলগঞ্জ, পিরোজপুরের কাউখালী, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের তোরাবগঞ্জ, ফজুমিয়ারহাট, চট্টগ্রামের বাঁশখালী এবং কক্সবাজারের সদর ও মহেশখালীতে। ১৪টি স্কুল-ভিত্তিক কর্মসূচি শেষে নভেম্বরে দ্বীপ জেলা ভোলা সদরে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। ৮ সেপ্টেম্বর ভোলার তজুমদ্দিন থেকে এই কর্মসূচির সূচনা ঘটে।

কর্মসূচিতে স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের সৃজনশীলতার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রচনা লিখন, পত্র লিখন এবং দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। লেখালেখির মাধ্যমে ওরা প্রকাশ করেছে নিজেদের কথা।


শেয়ার করুন