প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ইসলাম

Durjok-1426600026-400x235জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, প্লাবন, মহামারী, ভূমিকম্পের নাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাকৃতি দুর্যোগ নিয়ে ইসলামে সতর্ক করা হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ব্যাখ্যাও দিয়েছে ইসলাম। এসব ভয়াবহ বিপদের কারণ কী? মূলত মানবজাতির কর্মই সব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি বলুন, তিনিই তোমাদের ওপর ঊর্ধ্ব দিক থেকে অথবা তোমাদের পায়ের নিচ থেকে কোনো শাস্তি প্রেরণ করতে সক্ষম। অথবা তোমাদের দলে উপদলে বিভক্ত করে সবাইকে মুখোমুখি করে দেবেন এবং এককে অন্যের ওপর আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন। দেখ, আমি কেমন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিদর্শনাবলি বর্ণনা করি যাতে তারা বুঝে নেয়। (সূরা আনয়াম : ৬৫)।
এ আয়াতটি বর্তমান পৃথিবীতে সুনামি, সিডর, আইলা, ক্যাটরিনা, নার্গিস ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছে। মুসলমানরা আল্লাহর দ্বীন যথাযথ পালন না করার কারণে তাদের বিভিন্ন দেশ ও দলে বিভক্ত হওয়াও এ ভবিষ্যদ্বাণীর জ্বলন্ত প্রমাণ। উপরিউক্ত ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবতা পরিলক্ষিত হওয়ার পরও আমাদের করণীয় সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল (সা.) সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যেমনÑ আল্লাহ তায়ালা কিতাবধারীদের সম্পর্কে বলেন, ‘যদি তারা তাওরাত ও ইঞ্জিল প্রতিষ্ঠা করত, আর যা তাদের ওপর তাদের মালিকের কাছ থেকে এখন নাজিল করা হচ্ছে (কুরআন) তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকত, তাহলে তারা অবশ্যই রিজিক পেত তাদের মাথার উপরের (আসমান) থেকে এবং তাদের পায়ের নিচের (জমিন) থেকেও’ (সূরা মায়িদা : ৬৬)।
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে একটি বর্ণনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন তোমাদের পায়ের নিচ (জমিন) থেকে আজাব পাঠাতে সক্ষম’ আয়াতটি নাজিল হলো, তখন হযরত রাসুল (সা.) বললেন, আমি তোমার সম্মুখ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ (বুখারি)।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি ও ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন এবং পাপ-পুণ্যের পথ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। কেউ যদি স্বেচ্ছায় পাপের পথে পা বাড়ায়, তাহলে আল্লাহর রীতি, তিনি তাকে সেই উপায়-উপকরণ ব্যবহার করার সুযোগ করে দেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন আমার উম্মতের মধ্যে ১৫ ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হবে তখন তাদের ওপর প্রাকৃতিক বিপর্যয় নাজিল হবে। রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল। এ বৈশিষ্ট্যগুলো কী? তিনি বলেন, ‘যখন গণিমতের সম্পদ রাষ্ট্রীয়করণ করা হবে। রাষ্ট্রীয় আমানতকে গণিমত মনে করা হবে। জাকাতকে জরিমানা মনে করা হবে। পুরুষেরা তাদের স্ত্রীদের আনুগত্য করতে শুরু করবে। ব্যক্তি তার মায়ের অবাধ্য হবে। বন্ধুর সঙ্গে সদাচরণ করবে অথচ পিতামাতার সঙ্গে অসদাচরণ করবে। মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা হবে। সম্প্রদায়ের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকেরা নেতা হবে। কোনো ব্যক্তিকে তার অপকর্মের ভয়ে সম্মান করা হবে। মদপান করা হবে। রেশমি পোশাক পরিধান করা হবে। গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র বৃদ্ধি পাবে। শেষের লোকেরা প্রথম যুগের লোকদের অভিসম্পাত করবে; তখন তারা যেন গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়া বা ভূমিধস সংঘটিত হওয়া বা চেহারা বিকৃতি হওয়ার অপেক্ষা করে’ (তিরমিজি-৪/৯৪)।
প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ মোকাবিলায় মানুষের উচিত পাপ-পঙ্কিলতা কমিয়ে আনা। প্রাকৃতির দুর্যোগের ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে আমাদের উচিত আল্লাহর নিকট তাওবা করা, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার সঙ্কল্প করা, তাঁর নিকট নিরাপত্তার জন্য সাহায্য চাওয়া, মহান আল্লাহকে অধিক হারে স্মরণ করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। সর্বাবস্থায় আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রদত্ত ও রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রদর্শিত পথ ও মতে চলার আপ্রাণ চেষ্টা করা।


শেয়ার করুন