প্রধানমন্ত্রীর ৭০তম জন্মদিন আজ

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৭০তম জন্মদিন আজ বুধবার। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরের প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

পিতার রাজনৈতিক উত্তরসূরি হয়ে তিনি পূরণ করে চলেছেন জাতির পিতার স্বপ্ন। বলিষ্ঠ নেতৃত্বগুণে শেখ হাসিনা এখন বিশ্ব নেতাদের অন্যতম একজন।

শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ছেলে সজীব ওয়াজেদের অনুরোধে এবারের জন্মদিন সেখানেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পালন করবেন তিনি।

পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাইবোন।

অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ভাইবোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ তিন ভাই ঘাতকদের হাতে নিহত হন। পিতাকে খুব একটা কাছে না পেলেও শৈশব-কৈশোর আনন্দেই কেটেছে শেখ হাসিনার।

গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সঙ্গে তাই তার নাড়ির টান। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরান ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন।

বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টো রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত।

শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭শে জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দি অবস্থায় প্রথম সন্তানের মা হন।

১৯৭২ সালের ৯ই ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ই ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়।

আর ওই বছরেরই ১৭ই মে দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩শে জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচশ নেতাকর্মী আহত হন।

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। চলতি বছর তিনি দুটি পুরস্কার পান।

গত বছর জাতিসংঘের ৭০তম অধিবেশনেও তিনি দুটি পুরস্কারে ভূষিত হন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় ও দৃশ্যমান ভূমিকা এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য ‘আইসিটি টেকসই’ উন্নয়ন পুরস্কার লাভ করেন শেখ হাসিনা।

এর আগে রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা, সৃজনশীলতা এবং সাফল্যের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তিনি ‘সাউথ সাউথ’ ও ‘সেরেস’ পদকসহ অন্যান্য পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলাদেশে নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য ইউনেস্কো থেকে শান্তির বৃক্ষ (ট্রি অব পিস) অভিধায়ও সিক্ত হন।

শত ব্যস্ততার মাঝেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্হ।

উল্লেখ্য, সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনের বুধবারের সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।

– See more at: http://www.m.rtnn.net//newsdetail/detail/1/3/154455#sthash.hFHvzgIH.dpuf


শেয়ার করুন